বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


আরিফুজ্জামান কোরবান, রাবি

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১, ২০২৪, ০৪:০৫ পিএম

রাবি মেডিকেল সেন্টার

চিকিৎসক-জনবল সংকটে ৬ দশকেও হয়নি পূর্ণাঙ্গ সেন্টার

আরিফুজ্জামান কোরবান, রাবি

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১, ২০২৪, ০৪:০৫ পিএম

চিকিৎসক-জনবল সংকটে ৬ দশকেও হয়নি পূর্ণাঙ্গ সেন্টার

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

প্রায় ৩৮ হাজার শিক্ষার্থী নিয়ে দেশের উচ্চশিক্ষায় দ্বিতীয় প্রাচীন বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তাদের পরিবার মিলিয়ে সংখ্যাটি ৫০ হাজারের অধিক। স্বায়ত্তশাসিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে প্রতিষ্ঠার ৫ বছর পরেই ১৯৫৮ সালে মেডিকেল সেন্টার চালু করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

তবে ৬ দশক পেরোলেও যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা দিতে সক্ষম হয়নি মেডিকেল সেন্টারটি। এরই মাঝে গত ২৪ নভেম্বর পর্যাপ্ত জনবলের ঘাটতি দেখিয়ে বিকেলের শিফটের চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ করে মেডিকেল সেন্টারের পক্ষ থেকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে রাবি মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৩৬টি। কিন্তু এই পদের বিপরীতে চিকিৎসক আছেন মাত্র ১৪ জন। বেশিরভাগই (২২টি) পদই ফাঁকা পড়ে রয়েছে। মেডিকেল সেন্টারে দু’জন পুরুষসহ মোট ছয় জন নার্স থাকার কথা থাকলেও যাত্রা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত তা দু’জনেই সীমাবদ্ধ।

এদিকে, উন্নত সব যন্ত্রপাতি থাকার পরও সেগুলো চালানোর জন্য নেই পর্যাপ্ত জনবল। ফলে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মকারীকে সেবা দিতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ছেন কর্মরত চিকিৎসকরা। এতে ব্যাহত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা সেবা। ফলে প্রাথমিক চিকিৎসাতেই সীমাবদ্ধ থাকতে হচ্ছে বলছেন মেডিকেল সেন্টার সংশ্লিষ্টরা। 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, শূন্য ১৮টি পদের বিপরীতে ২০২০ সালের ২৪ অক্টোবর চিকিৎসক পদে ১৩ জনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। তবে তাদের মৌখিক পরীক্ষা না হওয়ায় নিয়োগ কার্যক্রম আটকে আছে। এদিকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে কর্তব্যরত আরও ৪ জন চিকিৎসক পদত্যাগ করেন। এতে বর্তমানে শূন্য পদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ জনে। ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার ৬ জনের বিপরীতে রয়েছেন ৩ জন। নাক-কান-গলা, চর্ম, মনোরোগ ও গাইনোকোলোজিস্ট বিভাগে কোনো চিকিৎসক নেই।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেডিকেল সেন্টারে মাইক্রো বায়োলোজিস্ট, রোগী রাখার বেড ও পর্যাপ্ত অক্সিজেন চ্যানেল নেই। একটি ইসিজি মেশিন থাকলেও সেটা পরিচালনা করার জন্য নেই কোনো স্পেসালিস্ট। সম্প্রতি ইমারজেন্সি সেকশন থেকে একজন স্টাফকে এনে ইসিজি মেশিনটি সচল রাখা হলেও বন্ধ রয়েছে সেবা কার্যক্রম। ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন থাকলেও সেটা পরিচালনার জন্য নেই পূর্ণকালীন টেকনোলোজিস্ট। এছাড়াও গাইনি বিশেষজ্ঞ, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, চর্ম রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংকটের কারণে কাঙ্খিত চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীসহ অন্যান্য সেবাগ্রহীতারা।

এদিকে, ওষুধ পাওয়ার ক্ষেত্রেও অভিযোগ রয়েছে সেবা নিতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের। তাদের দাবি, সাধারণত নিম্ন পর্যায়ের কিছু ওষুধ সবাইকেই দেওয়া হয়। অধিকাংশ সময়ই যথাযথ ওষুধ পান না তারা।

প্রতিবছর একেকজন শিক্ষার্থীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ফি বাবদ বিশ্ববিদ্যালয়কে দিতে হয় ১০০ টাকা। ৩৮ হাজার শিক্ষার্থীর দেওয়া অর্থের পরিমাণও নেহাৎ কম নয়।

রাবির আইন বিভাগের আতিকুর রহমান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, কোনো রোগের লক্ষণ নিয়ে মেডিকেল সেন্টারে গেলে চিকিৎসক সংকটের কারণে আমরা ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা পাই না। আবার সেবা পেতে গেলে ঘন্টার পর ঘন্টা পার হয়ে যায়। ফলে চিকিৎসা নিতে গেলে ওই দিনের মুল্যবান ক্লাসে উপস্থিত হওয়া যায়না।

ইতিহাস বিভাগের নুরুন্নাহার তন্নি বলেন, আমাদের মেডিকেল সেন্টারে শুধু প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। সর্দি-কাশির ওপরে একটু বড় কিছু হলেও চিকিৎসক ও সরঞ্জাম নেই বলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আবার ওষুধের ক্ষেত্রে নিম্নমানের কয়েক প্রকার ওষুধ দিয়ে তারা বিদায় করেন।

তবে মেডিকেল সেন্টার কর্তৃপক্ষ বলছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তাদের বাজেটের তিনটি খসড়া আটকে রয়েছে। পর্যাপ্ত বাজেট ঘাটতির কারণে শিক্ষার্থীদের যথাযথ ওষুধসহ অন্যান্য সুবিধা অনেক সময়ই দিতে পারছেন না কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।

সার্বিক বিষয়ে কথা হয় রাবি মেডিকেল সেন্টারের চিফ মেডিকেল অফিসার মাফরুহা সিদ্দিকা লিপির সাথে। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আমাদের মেডিকেল সেন্টারে জনবল সংকট অনেক বড় একটি বাঁধা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে গেলে বারবার তারা শুধুমাত্র আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন। বর্তমানে আমাদের যে পরিমাণ চিকিৎসক রয়েছেন তাতে কোনোভাবে সকালের শিফট কাভার করা হচ্ছে। তবে বিকেলের শিফট (বিকেল ৪-৮ টা) চালানো সম্ভব হচ্ছে না। বিকেলের শিফট বন্ধ রাখার পরও একেকজন ডাক্তারকে প্রতিদিন শতাধিক রোগীকে সেবা দিতে হচ্ছে। যদি দ্রুতসময়ে মেডিকেল সেন্টারে জনবল নিয়োগ না দেয়া হয় তাহলে কোনোভাবেই আমরা যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারবো না।

মেডিক্যাল সেন্টারের বিষয়ে রাবি উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব বলেন, আমি প্রশাসনের দায়িত্বে আসার পর অনেকবার মেডিকেল সেন্টার নিয়ে বসেছি। চিকিৎসক নিয়োগের যে জটিলতা সেটা দীর্ঘদিন ধরে চলছে। আমরা এই সমস্যা সমাধানে কাজ করছি।

তিনি বলেন, আমাদের মেডিকেল সেন্টারে এখন মূলত জনবল সংকট, চিকিৎসা সরঞ্জামের যথাযথ ব্যবহার না হওয়া এবং শিক্ষার্থীদের ওষুধ দেওয়া নিয়ে একধরনের অভিযোগ রয়েছে। আমরা দ্রুত সময়ে এগুলো সমাধানের লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে একজন চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগের ব্যবস্থা করেছি। বাকি বিষয়গুলোও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নিয়োগের ক্ষেত্রে যেহেতু স্বচ্ছতা এবং যাচাই-বাছাইয়ের কিছু বিষয় আছে তাই নিয়োগে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।

মেডিকেল সেন্টারের ওষুধের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট আটকে থাকা প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, আর্থিক সমন্বয়ের বিষটি সংশ্লিষ্ট বিভাগ দেখাশোনা করেন। এটি তো সমাধান হয়ে যাওয়ার কথা। এ সময় আগামী জানুয়ারির শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারের সমস্যাগুলোর সমাধান হয়ে যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

আরবি/ এইচএম

Link copied!