ঢাকা মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫

‘আজ না হলেও কাল ভালোবাসার চিহ্ন এঁকে দেবই’, ছাত্রীকে অধ্যাপক

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২৫, ১০:৪৯ পিএম
অধ্যাপক ড. রুবেল আনসার। ছবি- সংগৃহীত

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগীয় অধ্যাপক ড. রুবেল আনসারের বিরুদ্ধে এক ছাত্রী অশালীন প্রস্তাব ও যৌন সম্পর্কের ইঙ্গিত দেওয়ার অভিযোগ করেছেন।

গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্রের সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন ওই ছাত্রী।

অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন খুবির যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক মোছা তাসলিমা খাতুন। তিনি বলেন, আমাদের কাছে এই অভিযোগ জমা পড়েছে। ইতিমধ্যে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যার প্রধান আমি।

অভিযোগপত্রে ছাত্রী উল্লেখ করেন, অ্যাসাইনমেন্ট সময়মতো জমা দিতে না পারায় স্যারের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলাম। তিনি ৪০-৪৫ মিনিট ধরে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বললেন। এক পর্যায়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেন, ‘তোমার হাত যদি পরীক্ষার আগে ঠিক না হয়, আমি ফুঁ দিয়ে ঠিক করে দেব।’

তিনি আরও বলেন, যেহেতু তুমি খুলনায় নতুন, ঘুরতে যেতে ইচ্ছা করলে অথবা অসুস্থ হলে আমাকে জানাতে দ্বিধা করো না। যদিও এসব কথা আমার কাছে অস্বস্তিকর মনে হয়েছিল, তারপরও আমি সালাম দিয়ে চলে আসি।

ছাত্রী আরও বলেন, স্যারের চেম্বার থেকে বের হয়ে তার থেকে ঘন ঘন মেসেজ পাওয়া শুরু হয়। তিনি আমার ফ্রি থাকা বা তার সঙ্গে ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপারে বারবার মেসেজ দিতেন। আমি ব্যস্ত থাকার কারণ দেখিয়ে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছি।

অভিযোগে উল্লেখ আছে, আমাদের বাড়ি স্যারের বাড়ির পথে হওয়ায় আব্বু তার পরিবারসহ আমাদের বাসায় নিমন্ত্রণ দেন। ঈদে বাড়ি গিয়ে এ বিষয়ে জানতে পারি। স্যার বলেন, ‘আমি পরিবারসহ আসব, বিনিময়ে তুমি যা চাইবে তা আমাকে দিতে হবে।’ আমি তার কথার পুরো অর্থ বুঝতে না পেরে সাধ্যের মধ্যে যা পারি দেব বলে জানাই। স্যার ঈদের ছুটি কাটিয়ে খুলি ফিরে এসে আমাদের বাসায় স্ত্রী ও কন্যাসহ আসেন।’

ঘটনার পর পাঁচ-ছয় দিন স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ এড়িয়ে চললেও ছাত্রী জানায়, ‘হঠাৎ তিনি আমাকে ফোন দিয়ে দেখা করার অনুরোধ করেন। আমি নিরালা মোড়ে গিয়ে তার সঙ্গে গাড়িতে ওঠি। কিছুক্ষণ পর তিনি বললেন, ‘আমি তোমাদের বাসায় গিয়ে আমার কথা রেখেছি, এবার তোমাকে আমার কথা রাখতে হবে।’ তখনও আমি তার মানে বুঝতে পারিনি।

ছাত্রী আরও বলেন, আমি জানতে চাই আমি তার থেকে কী চাইতে হবে। তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলেন, ‘আমি তোমাকে চাই।’ আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করি, ‘কি বললেন? আমাকে চান মানে কী?’ তিনি বিরক্ত হয়ে বলেন, ‘তুমি বুঝতে পারো না?’

তিনি আরও বলেন, ‘একজন পুরুষ একজন নারীকে যেভাবে চায়, আমিও ঠিক তোমাকে সেভাবে চাই। ভয় পাও না, আমি তোমাকে একা পরিচিত বাসায় নিয়ে যাব যেখানে কেউ থাকবে না। বাসাটা আমার এক বন্ধুর, যেটাতে আমি যেতে বললে সে তার স্ত্রীকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেবে এবং চাবি রেখে চলে যাবে।’ এসব কথা শুনে আমি ভয়ে গা ঠান্ডা হয়ে যাই।’

ছাত্রী জানান, আমি আপত্তি করে গাড়ি থেকে নেমে যেতে চাইলে তিনি আমার হাত চেপে ধরে বলেন, ‘জেদ করো না, আমি যা চাই তা করো। আজ না হলেও কাল আমার ভালোবাসার চিহ্ন এঁকে দেবই।’

তারপর বললেন, ‘আমি কখনো এতদিন কারো পেছনে ঘুরিনি, তোমার জন্য অপেক্ষা করেছি। আমি তোমার রেজাল্টও বাড়িয়ে দেব, তোমার জিপিএ হবে ৩.৫০।’ এসব কথা শোনার পর আমি দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে সেখান থেকে পালাতে সক্ষম হই।

ভুক্তভোগী ছাত্রী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ঘটনার পর আমি গভীর ট্রমায় ভুগেছি, একা একা কাঁদতাম, ভয়ে ঘুমাতাম না। নতুন পরিবেশে কাউকে বলতে পারিনি। শোনা যায়, তিনি আগেও এই ধরনের যৌন হয়রানিতে জড়িত ছিলেন এবং এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন। ৫ আগস্ট ভিসির কমিশন গঠনের ঘোষণা পেয়ে সাহস পেয়ে অভিযোগ করেছি।’

অন্যদিকে, অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যাপক ড. রুবেল আনসার বলেন, ‘এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। এসব কথা বাস্তবতার সঙ্গে মিল নেই। ওই ছাত্রী অসুস্থ থাকায় তার বাবা একবার ফোন করেছিলেন। আমার কাছে সব শিক্ষার্থী সমান।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক ড. নাজমুস সাদাত বলেন, ‘ছাত্র বিষয়ক দপ্তরের মাধ্যমে অভিযোগ এসেছে। তদন্ত চলছে এবং আমি তদন্ত কমিটির সদস্য। এজন্য বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না।’