৪৭তম বিসিএস পরীক্ষার সময় পরিবর্তনের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথ অবরোধ করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে ময়মনসিংহ থেকে জামালপুর, নেত্রকোনা, জারিয়া ও কিশোরগঞ্জের সাথে ট্রেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এদিকে, যাত্রীদের সাথে বাগবিতণ্ডার পর একটি ট্রেন ছেড়ে দেয় শিক্ষার্থীরা।
রোববার (২৩ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ হয়ে জামালপুরগামী আন্তনগর তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেন লাল কাপড় দেখিয়ে আটকে জব্বারের মোড়ে কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা রেললাইনে অবস্থান করছেন।
এর আগে, শনিবার (২২ নভেম্বর) বিকেল ৫টায় একই দাবিতে একই এলাকায় রেলপথ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসময় ময়মনসিংহের বিভিন্ন স্থানে ঢাকাগামী তিস্তা, মহুয়া এক্সপ্রেস ও মোহনগঞ্জগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস আটকে যায়। পরে রাত ৮টার দিকে বিসিএস পরীক্ষার প্রবেশপত্র পুড়িয়ে প্রতীকী প্রতিবাদ জানিয়ে অবরোধ তুলে নেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
এরপর রাত ১১টার দিকে আবারও জব্বারের মোড়ে রেললাইনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এসময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা জামালপুরের তারাকান্দিগামী যাত্রীবাহী যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনটি আটকে দেওয়া হয়। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটের রেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এমতাবস্থায় জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের বোঝানোর একপর্যায়ে এক ঘণ্টা পর রাত ১২টার দিকে বাকৃবির জব্বার মোড়ে অবস্থিত রেললাইন থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সরে যায়। এসময় এই রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এদিকে, দেওয়ানগঞ্জগামী যাত্রীবাহী তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনটি বেলা সাড়ে ১১টা থেকেই আন্দোলনস্থলে আটকে রাখে শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখায় এই ট্রেনের যাত্রীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। একপর্যায়ে কিছু যাত্রী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ায়। পরে জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে বিকেল আড়াইটার দিকে শুধুমাত্র তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছেড়ে দিলে ট্রেনটি গন্তব্যে চলে যায়। তবে শিক্ষার্থীরা অবরোধ কর্মসূচি চলমান রাখে।
ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানার ওসি মো. আক্তার হোসেন বলেন, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) ৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় অবাস্তব ও বৈষম্যমূলক সময় নির্ধারণের প্রতিবাদে ফের রেললাইন অবরোধ করেছে পরীক্ষার্থীরা। সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জব্বারের মোড় তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে বিক্ষোভ করছেন।
তিনি বলেন, ফাতেমানগরে মোহনগঞ্জগামী মহুয়া কমিউটার, আউলিয়ানগরে তারাকান্দিগামী অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস, গফরগাঁও স্টেশনে মোহনগঞ্জগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস, ময়মনসিংহ জংশনে ঢাকাগামী বলাকা কমিউটার এবং দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার আটকা আছে।
শিক্ষার্থী মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, দাবি না মানা পর্যন্ত রেলের চাকা ঘুরবে না। শুধু আমরা নই রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় আজকে বৃহৎ আন্দোলন হচ্ছে। আমাদের দাবি রুটিন প্রকাশের অন্তত দুই মাস পর পরীক্ষা হতে হবে। পিএসসি থেকে সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।
মেহরাজ রাকিব নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, নতুন বাংলাদেশে কোনো বৈষম্য মেনে নেওয়া হবে না। আমাদের যৌক্তিক দাবি মানতে হবে। অন্যথায় রেলের চাকা ঘুরবে না।
তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনে থাকা যাত্রী সোজেল রানা বলেন, শিক্ষার্থীরা যেন সময় নিয়ে ভালোভাবে পড়ালেখা করে বিসিএস ক্যাডার হতে পারে সেজন্য সময় পেছানোর দাবিতে যৌক্তিক আন্দোলন করছে। তবে তারা ট্রেন আটকে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে এভাবে আন্দোলন করতে পারে না। ট্রেনে অনেকে জরুরি প্রয়োজনে নির্দিষ্ট জায়গায় যাচ্ছে। ট্রেনে রোগীসহ বয়স্ক মানুষও রয়েছে। শিক্ষার্থীরা এসব বিষয় চিন্তা করেনি।
একই ট্রেনের আরেক যাত্রী আব্দুল কাইয়ুম বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি কতটুকু যৌক্তিক, সে বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। তবে, কিছু হতে না হতেই ট্রেন অবরোধ, মহাসড়ক অবরোধ করা একেবারেই যৌক্তিক না। এভাবে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলে দাবি আদায় অন্যায়। সরকারের অবশ্যই এদিকে নজর দেওয়া উচিত।
ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশন সুপার আব্দুল্লাহ আল হারুন বলেন, শিক্ষার্থীদের অনেক বুঝিয়েছি, কিন্তু তারা নাছোড়বান্দা। ট্রেন চালালে তারা লাইনে শুয়ে পড়বে বলে হুমকি দিয়েছে। যে পর্যন্ত পরীক্ষা পেছানোর প্রজ্ঞাপন না হবে সে পর্যন্ত তাদের এই কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. আব্দুল হাদি বলেন, শুনেছি পিএসসিতে একটি মিটিং হয়েছে। তবে, মিটিংয়ের সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমাদের জানা নেই। তবে, পরীক্ষা পিছিয়ে প্রজ্ঞাপন জানি না হলে শিক্ষার্থীরা রেল অবরোধ ছাড়বে বলে না জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
ময়মনসিংহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মো. আব্দুল আল মামুন বলেন, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা রেল লাইনে অবস্থান করছেন। এছাড়া আমরা বলপ্রয়োগ করতে পারছি না। তবে, আমরা শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি।

