প্রয়াত চিত্রনায়ক বাবা জসিমের কোলে ছোট্ট রাতুল। আবেগভরা এই ছবিটিই আজ দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছেন জসিমের কনিষ্ঠপুত্র এ কে রাহুল। ছবির সঙ্গে দুটি মাত্র শব্দ- ‘একসাথে থাকো’। কিন্তু সেই সংক্ষিপ্ত লেখাতেই যেন ছড়িয়ে আছে হাজারো না বলতে না পারা কথা।
গতকাল বিকেলে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে চলে যান ‘ওউন্ড’ ব্যান্ডের ভোকালিস্ট, বেজিস্ট ও সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার এ কে রাতুল। আজ সকালে বনানী কবরস্থানে বাবা জসিমের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয় তাকে। বাবার মৃত্যুর ২৭ বছর পর, একই কবরেই ঘুমিয়ে পড়লেন তার সন্তান। যেন রাহুলের ওই দুটি শব্দ ‘একসাথে থাকো’ ছিল অন্তিম প্রার্থনার মতো।

ফেসবুকে ছবিটি পোস্ট করার সঙ্গে সঙ্গেই ছড়িয়ে পড়ে। অসংখ্য মানুষ মন্তব্য করেছেন। একজন লেখেন, ‘আল্লাহ এই শোক সইবার শক্তি তোমার পরিবারের সবাইকে দিন।’
এর আগেও ভাইয়ের সঙ্গে এক আবেগঘন ছবি শেয়ার করে রাহুল লিখেছিলেন, ‘আমার ভাইটার বুকে আমার হাত।’
এদিকে রাতুলের বড় ভাই এ কে সামী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমি মাত্রই ছোট ভাইটাকে সমাহিত করে এলাম।’ ছোট এই বাক্যের ভেতরেই যেন জমে আছে অগণিত অনুভব, অশ্রু আর বুকফাটা হাহাকার। বড় ভাইয়ের হাতে করে ছোট ভাইয়ের শেষ যাত্রার তদারকি-এ এক এমন অভিজ্ঞতা, যা কোনো ভাইয়ের কাম্য নয়।

সামীর লেখা সেই এক লাইনের স্ট্যাটাসে বোঝা যায়, এই শোক বর্ণনাতীত। যেন নিজের শরীরের একটা অংশ মাটির নিচে রেখে এসেছেন তিনি। পুরো জীবন একসাথে কাটানো, একই ব্যান্ডে বাজানো, একই স্টেজে দাঁড়ানো সেই ভাই আজ আর নেই-এই বাস্তবতা যেন এখনও মেনে নিতে পারছেন না এ কে সামী।

এই লেখাটি শুধু তথ্য নয়, এ যেন এক নিঃশব্দ আর্তনাদ-একটা ভাইয়ের আরেক ভাইয়ের জন্য শেষবার কবর ছুঁয়ে আসার মুহূর্ত।
চিত্রনায়ক জসিমের তিন সন্তানের মধ্যে মেজো সন্তান ছিলেন রাতুল। বড় ভাই এ কে সামী ‘ওউন্ড’-এর ড্রামার, ছোট ভাই রাহুল ছিলেন ‘ট্রেনরেক’ ও ‘পরাহো’ ব্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত।

রাহুলের চোখে জল, হৃদয়ে ক্ষত। একসঙ্গে বড় হওয়া, একসঙ্গে সংগীতের পথচলা, আজ শেষ হলো এক কবরে এসে—যেখানে শুয়ে আছেন বাবা জসিম ও পুত্র রাতুল।
‘একসাথে থাকো’ শুধু ছবি নয়, যেন কোনো এক অদৃশ্য দুনিয়ায় লেখা হয়ে রইল রাহুলের শেষ চিঠি।
আপনার মতামত লিখুন :