প্যালেস্টাইন প্রথমবারের মতো মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে চলেছে। আগামী ২১ নভেম্বর থাইল্যান্ডের পাক ক্রেটে বসতে যাচ্ছে ৭৪তম মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতা। আর এই আসরে নিজের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার সেই মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্ব পেয়ে ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম উজ্জ্বল করে রাখলেন ২৭ বছর বয়সী নাদিন আয়ুব। চলুন জেনে নিই যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশটির সংগ্রামী এই নারীর রোমাঞ্চকর উত্থানের গল্প

নাদিন নিজেকে শুধু সৌন্দর্যের প্রতিনিধি হিসেবে দেখেন না, বরং প্যালেস্টাইনের কণ্ঠ হিসেবে উপস্থিত থাকার গুরুত্ব তিনি বোঝেন।

একটি ইনস্টাগ্রাম ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘আজ আমি গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করছি, প্রথমবার প্যালেস্টাইন মিস ইউনিভার্সের মঞ্চে উপস্থিত হবে। এই শিরোনাম শুধু প্রতিযোগিতার নয়, এটি একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে আমি আমাদের নারী ও শিশুদের কাহিনি তুলে ধরব। আমরা শুধু আমাদের কষ্ট নই, আমরা সাহস, আশা এবং মাতৃভূমির প্রাণস্পন্দন।’

নাদিন ২০২২ সালে ‘মিস প্যালেস্টাইন’ খেতাব জিতেছিলেন। সেই বছরই তিনি ফিলিপাইনে অনুষ্ঠিত মিস আর্থ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে শীর্ষ পাঁচে জায়গা করে ইতিহাস গড়েন এবং ‘মিস ওয়াটার ২০২২’ খেতাব অর্জন করেন।

কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে বেড়ে ওঠা নাদিন বর্তমানে দুবাই ও পশ্চিম তীরের রামাল্লাহতে বাস করেন। তিনি সাহিত্য ও মনোবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রিধারী, সার্টিফায়েড ফিটনেস ও নিউট্রিশন কোচ এবং পরিবেশ ও মানবাধিকার বিষয়েও সক্রিয়।

তার উদ্যোগ ‘অলিভ গ্রিন একাডেমি’ নারীদের পরিবেশ সচেতনতা, প্রযুক্তি ও উদ্যোক্তা দক্ষতায় প্রশিক্ষণ দেয়। পাশাপাশি ‘সায়িদাত ফালাস্তিন’ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে প্যালেস্টাইনি নারীদের কণ্ঠ ও ব্যবসাকে সমর্থন করছেন।

তার কাজ শুধু মঞ্চের সীমানায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং নারীদের ক্ষমতায়ন ও সমাজে পরিবর্তনের লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব বিস্তার করছে।

নাদিন অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন ঐতিহ্যবাহী প্যালেস্টাইনি পোশাকে, যা ডিজাইন করেছেন হিবা আবদেল করিম। পোশাকে দেখা যায় জাতীয় রঙ এবং সূক্ষ্ম কারুকাজ।

তার এই অংশগ্রহণ এমন সময় আসে যখন গাজার মানুষ গভীর মানবিক সংকটে পড়েছেন। চলমান সংঘাতের ২২তম মাসে ক্ষুধা, অপুষ্টি এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে।

নাদিন আয়ুবের জন্য মঞ্চের চেয়ে বড় দায়িত্ব হলো প্যালেস্টাইনের মানুষকে, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের কণ্ঠকে বিশ্বকে পৌঁছে দেওয়া।

তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের স্বপ্ন, প্রতিভা এবং শক্তিশালী কণ্ঠকে বিশ্বকে দেখাব। এই যাত্রা প্রতিটি মেয়ের জন্য যারা সীমাবদ্ধতার বাইরে স্বপ্ন দেখার সাহস রাখে।’

সমর্থকরা মনে করেন, নাদিনের উপস্থিতি একটি শক্তিশালী বার্তা - প্যালেস্টাইন আছে, তাদের কণ্ঠ আছে, তাদের পরিচয়কে কেউ মুছে দিতে পারবে না।

নাদিন আয়ুব শুধু একটি প্রতিযোগিতার অংশ নন; তিনি প্যালেস্টাইনের আশা, সাহস এবং প্রেরণার প্রতীক। তার মঞ্চে পদার্পণ কেবল সৌন্দর্যের নয়, বরং আন্তর্জাতিকভাবে ফিলিস্তাইনি নারীদের শক্তি ও পরিচয়কে তুলে ধরার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন