ঠোঁট ফুলে ঢোল, গাল-থুতনির পেশি টানটান, যন্ত্রণায় কুঁকড়ে থাকা মুখ- সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার উরফি জাভেদকে দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ভক্তরা। বিতর্কিত ফ্যাশন সেনসেশন এবার শিরোনামে তার পোশাক নয়, বরং মুখমণ্ডলের অস্বাভাবিক পরিবর্তনের জন্য। ভাইরাল হওয়া ভিডিও ও ছবিতে স্পষ্ট, ঠোঁটে সুচ ফোটানোর পর থেকে ফোলা মুখে বেদনায় কাঁপছেন তিনি। এমন কী হলো?
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, উরফি নিজেই জানাচ্ছেন, তিনি মুখের পুরোনো ফিলার্স অপসারণ করাচ্ছেন। এই প্রক্রিয়াতেই নাকি ঘটেছে বিপত্তি। তিনি বলেন, ‘পুরোনো ফিলার্স নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তাই তা সরাতে হয়েছে। কিন্তু এত যন্ত্রণা যে, বলার মতো না!’
এর আগে ঠোঁটে ফিলার্স ও বোটক্স নেওয়ার কথা খোলাখুলিই বলেছিলেন তিনি। এবারও একই রকম স্বীকারোক্তি, তবে সঙ্গে সতর্কবার্তাও। বলেন, ‘এমন আর কখনও করব না। যদি কিছু করি, খুব সূক্ষ্ম কোনও পদ্ধতি বেছে নেব।’
উরফির বর্তমান চেহারা দেখে শুধু সাধারণ ভক্তরাই নয়, চিকিৎসকদের একাংশও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। প্লাস্টিক সার্জারি ও কসমেটিক ট্রিটমেন্ট বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, উরফির মুখে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা ‘লিপ ফিলার্স’-এর ভুল প্রয়োগের প্রতিক্রিয়া।
এই প্রক্রিয়ায় ঠোঁটে হায়ালুরনিক অ্যাসিড নামক এক ধরনের জেল ইনজেকশন দেওয়া হয়। এতে ঠোঁট ফুলে ওঠে, মসৃণ দেখায়। তবে সামান্য ভুলেই হতে পারে ভয়াবহ ক্ষতি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন ইনজেকশনের ফলে ঠোঁটের কোষে প্রদাহ, রক্তক্ষরণ, কালশিটে, এমনকি কোষের স্থায়ী ক্ষতিও হতে পারে।
চিকিৎসক পুষ্পিতা মণ্ডল বলেন, ‘আগে মেয়েরা পাতলা ঠোঁটকে সুন্দর ভাবতেন। এখন তার বিপরীতে ঝোঁক বেড়েছে। কিন্তু এই ফ্যাশন ট্রেন্ড অনুকরণ করতে গিয়েই কেউ কেউ মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মুখে পড়ছেন।’
তিনি আরও জানান, ‘লিপ ফিলার্স করালে হতে পারে ঠোঁট ফুলে যাওয়া, ব্যথা, রক্ত জমাট বাঁধা, র্যাশ, এমনকি স্নায়ুর অসাড়তাও। হার্পিস বা অটোইমিউন রোগের ঝুঁকিও থেকে যায়।’
এদিকে কিছুদিন আগেই আরও একবার চোখ-মুখ ফুলে যাওয়ার ছবি পোস্ট করে চিকিৎসকের পরামর্শ চেয়েছিলেন উরফি। সেই সময় অনেকে অ্যালার্জির সম্ভাবনার কথাও তুলেছিলেন।
তবে উরফির এই স্বীকারোক্তিমূলক ভঙ্গি নেটদুনিয়ায় নানা প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। কেউ বলছেন ‘সাহসী উরফি এবার আরও মানবিক’, আবার কেউ কটাক্ষ করছেন- ‘এই যন্ত্রণাও কি ফ্যাশন স্টান্ট?’
একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে, বলিউড-হলিউডে বেঢপ ঠোঁট বা মুখ নিয়ে তারকাদের এই ফিলার্স প্রবণতা আদৌ কতটা নিরাপদ? চিকিৎসকেরা বলছেন, এ ধরনের প্রক্রিয়া অভিজ্ঞদের হাতে করানোই জরুরি। তা না হলে সৌন্দর্য নয়, বরং চেহারার স্থায়ী বিকৃতি হয়ে দাঁড়াতে পারে ভবিষ্যতের অভিশাপ।
শোবিজ জগতের তারকাদের, বিশেষ করে অভিনেত্রীদের বয়স ও সৌন্দর্য্য ধরে রাখতে কৃত্রিমতার আশ্রয় নেয়ার প্রবণতা যে কতটা বিপজ্জনক, সম্প্রতি প্রয়াত অভিনেত্রী শেফালী জারিওয়ালার পর তার আরেকটি উদাহরণ হয়ে রইলেন একসময়ের লাস্যময়ী ইনফ্লুয়েন্সার উরফি জাভেদ।
তথ্যসূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়া, হিন্দুস্তান টাইমস, হেলথলাইন, এনডিটিভি, ইনস্টাগ্রাম ভিডিও (উরফি জাভেদ)