ঢাকার চলচ্চিত্রে ভিলেন হিসেবে অভিষেক হলেও, নায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সময় নেননি। আজ তার জন্মদিন, এবছর তার ৮০তম জন্মবার্ষিকী। বেঁচে থাকলে হয়তো এই দিনে পরিবারের মানুষ, সহকর্মী আর ভক্তদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে কাটাতেন তিনি। আজও তিনি ভালবাসায় সিক্ত, তবে উদযাপনে নয়, কেবল স্মৃতিতে - সেই স্মৃতি আজও তাজা, উজ্জ্বল আর গর্বের। বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ‘অ্যাকশন কিং’ হিসেবে আজও দর্শকের হৃদয়ে অমলিন কিংবদন্তী চিত্রনায়ক জসিম।
১৯৭২ সালে দেওয়ান নজরুলের ‘দোস্ত দুশমন’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন জসিম যা ১৯৭৩ সালে মুক্তি পায়। তবে মুক্তির তারিখ অনুযায়ী ১৯৭২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দেবর’ ছবিকে তার অভিষেক হসেবে পরিগণিত হয়।
এরপর একে একে ‘রঙিন দুনিয়া’, ‘মাস্তান’, ‘দোলনা’ থেকে শুরু করে অসংখ্য ছবিতে তার উপস্থিতি হয়ে উঠেছিল দর্শকের প্রিয় মুহূর্ত। বিশেষ করে অ্যাকশনধর্মী চরিত্রে তার অনবদ্য অভিনয় তাকে দিয়েছে ‘বাংলার অ্যাকশন কিং’ খেতাব।
জসিম শুধু অভিনেতাই নন, ছিলেন একজন প্রযোজক ও নৃত্যশিল্পীও। সিনেমার শুটিং স্পটে তার প্রাণবন্ত উপস্থিতি, সবার সঙ্গে সহজ মেলামেশা আর পেশাদারিত্বের জন্য পরিচিত ছিলেন তিনি। সহকর্মীদের কাছে ছিলেন একজন নির্ভরযোগ্য বন্ধু, আর দর্শকের কাছে এক অবিস্মরণীয় তারকা।
পর্দার বাইরে জসিমের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিচয় তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন এবং মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেই পরে চলচ্চিত্রে আসেন। যুদ্ধের সময় তিনি সশস্ত্র প্রতিরোধে অংশ নেন, আর স্বাধীনতার পরপরই ঢাকায় ফিরে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন।
১৯৯৮ সালের ৮ অক্টোবর জসিমের জীবনাবসান ঘটে। কিন্তু তার অভিনীত ‘বেঈমান’, ‘সততার জয়’, ‘দাঙ্গা’, ‘মায়ের অধিকার’-এর মতো সিনেমাগুলো আজও নতুন প্রজন্মের কাছে সমান জনপ্রিয়। সময় বদলেছে, সিনেমার ধরণ বদলেছে, কিন্তু জসিমের নাম উচ্চারিত হয় এখনো শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা নিয়ে।
আজ তার ৮০তম জন্মবার্ষিকীতে ভক্তরা সামাজিক মাধ্যমে স্মরণ করছেন তাকে, শেয়ার করছেন প্রিয় দৃশ্য আর সংলাপ। তার কনিষ্ঠপুত্র এ.কে রাহুল সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, ‘দেশের শ্রেষ্ঠতম ‘একশন হিরো’কে জন্মদিনের শুভেচ্ছা’।
যেন প্রমাণ করছে - সময় যতই যাক, সত্যিকারের শিল্পী কখনো হারিয়ে যান না, তারা বেঁচে থাকেন মানুষের মনে, চলচ্চিত্রের পর্দায়, আর প্রতিটি ভালোবাসার স্মৃতিতে।