সৌদি আরবের সিনেমাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পৌঁছে দিয়েছেন নারী নির্মাতা শাহাদ আমিন। ২০১৯ সালে তার প্রথম আলোচিত ছবি ‘স্কেলস’-এর মাধ্যমে তিনি ব্যাপক পরিচিতি পান। এবার তার নতুন সিনেমা ‘হিজরা’ আলোচনায় এনেছে সৌদি চলচ্চিত্রকে নতুন উচ্চতায়।
‘হিজরা’ এ বছর ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে প্রিমিয়ার হয় এবং সেরা এশিয়ান সিনেমা হিসেবে নেটপ্যাক পুরস্কার অর্জন করে। উৎসব-পরবর্তী সময়েও সিনেমাটি ঘিরে দর্শক ও সমালোচকদের আগ্রহ বাড়তে থাকে। সেই ধারাবাহিকতায় ৯৮তম অস্কারের জন্য ‘হিজরা’কে সৌদি আরবের পক্ষ থেকে মনোনীত করেছে সৌদি ফিল্ম কমিশন।
এর আগে সৌদি আরবের আরও আটটি সিনেমা অস্কারে পাঠানো হয়েছে, যার মধ্যে চারটিই নারী নির্মাতার। দেশটির অস্কারযাত্রা শুরু হয় ২০১৩ সালে, হাইফা আল-মানসুরের ‘ওয়াজদা’ দিয়ে। ২০১৯ সালে একই নির্মাতার ‘দ্য পারফেক্ট ক্যান্ডিডেট’-ও অস্কারে যায়।
তবে সৌদি কর্তৃপক্ষের আশা, এবারের পরিস্থিতি আগেরবারের চেয়ে ভিন্ন হবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘হিজরা’ যেভাবে প্রশংসা কুড়িয়েছে, অনেকেই বলছেন, এ সিনেমা হতে পারে সৌদি চলচ্চিত্রের টার্নিং পয়েন্ট।
‘হিজরা’ নির্মিত হয়েছে তিন নারী চরিত্রকে ঘিরে। ১২ বছর বয়সি জান্নাত তার দাদির সঙ্গে হজে রওনা হয় মক্কার উদ্দেশে। যাত্রায় সঙ্গী হয় বড় বোন সারাহ। পথে হঠাৎ সারাহ নিখোঁজ হয়ে গেলে তাকে খুঁজতে বের হয় জান্নাত ও দাদি। সেই অনুসন্ধানের মধ্য দিয়েই উন্মোচিত হয় দাদির অতীত, যেখানে জড়িয়ে আছে প্রজন্মান্তরের নারীজীবনের গল্প ও সংগ্রাম।
চলচ্চিত্র নির্মাতা শাহাদ আমিন বলেন, “আমার সিনেমার মূল উদ্দেশ্য সমাজের কণ্ঠস্বরকে তুলে ধরা। ‘হিজরা’য় আমি আমার সংস্কৃতি ও সমাজের গল্প আন্তর্জাতিক দর্শকের কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছি। সৌদি আরবকে আমি ভিন্নভাবে দেখাতে চেয়েছি—যেখানে প্রতিটি প্রজন্মের নারীর কাছে স্বাধীনতার অর্থ আলাদা।”
তিনি আরও বলেন, ‘বহির্বিশ্বে সৌদি নারীদের নিয়ে অনেক ভুল ধারণা আছে। কিন্তু আমার মা কিংবা দাদির প্রজন্মের নারীরা অত্যন্ত প্রাণবন্ত ও শক্তিশালী ছিলেন। হিজরা সেই নারীদেরই গল্প বলে, যারা প্রতিনিয়ত নিজেদের স্বাধীনতা খুঁজে নিয়েছেন।’
জেদ্দায় জন্ম নেওয়া শাহাদ আমিন চলচ্চিত্রে পড়াশোনা করেছেন ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্ট লন্ডনে, আর চিত্রনাট্য রচনা শিখেছেন নিউইয়র্ক ফিল্ম একাডেমি থেকে। এর আগে তিনি ‘আওয়ার ওন মিউজিক্যাল’, ‘লায়লাস উইন্ডো’, ‘আই অ্যান্ড মারমেইড’সহ একাধিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন।
বর্তমানে তিনি সৌদি আরবের অন্যতম আন্তর্জাতিক মুখ হিসেবে বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে সৌদি সিনেমার প্রতিনিধিত্ব করছেন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন