সাবেক সংসদ সদস্য ও জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমকে ঘিরে সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়েছে এক চাঞ্চল্যকর ভিডিও। দাবি উঠেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘটিত একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া মমতাজের বাড়িতে সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করেছে ৯০০ কোটি টাকা!
ভিডিওটি ভাইরাল হওয়া মাত্রই শুরু হয় আলোড়ন, শেয়ারে শেয়ারে ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে। কিন্তু আসলে এমন কিছুই ঘটেনি। এই ভিডিও আর এর দাবি- দুটিই সম্পূর্ণ ভুয়া।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে একে একে ফাঁস হয়ে গেছে ভাইরাল হওয়া এই ভিডিওর সব কটি খণ্ডচিত্রের প্রকৃত উৎস।
প্রথমেই দেখা যায়, ভিডিওতে সেনাবাহিনীর কোনো বক্তব্য বা নির্ভরযোগ্য সূত্রের উল্লেখ নেই। এরপর রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বেরিয়ে আসে, ভিডিওর ফুটেজগুলো আসলে ভিন্ন সময়ের, ভিন্ন ঘটনার।
একটি খণ্ডচিত্র মেলে গত বছরের ৯ আগস্ট একটি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত এক প্রতিবেদনের সঙ্গে। সেটি ছিল ডিবি অফিসে বিশেষ অভিযানের দৃশ্য- মমতাজের বাসার সঙ্গে যার বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই।
অন্য একটি দৃশ্যে দেখা যায় ‘মমতাজ ভিলা’ লেখা নামফলক। কিন্তু সেটিও ফাঁকি। ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি অপর একটি টিভিতে প্রচারিত একটি ভিডিওতে একই দৃশ্য দেখা যায়।
সেটি ছিল ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেপ্তার হওয়া গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা এনামুল হক এনু ও রুপন ভূঁইয়ার বাসায় র্যাবের অভিযানের চিত্র, যেখানে উদ্ধার হয় সাড়ে ২৬ কোটি টাকা, সোয়া ৫ কোটি টাকার এফডিআর, বিদেশি মুদ্রা ও স্বর্ণ।
আরেকটি ভিডিওর অংশে দেখা যায় ড্রয়ার ও সিন্দুক থেকে টাকা বের করা হচ্ছে। এটিও টিভি চ্যানেলের একটি পুরোনো প্রতিবেদনের ফুটেজ- উৎস একই, এনু-রুপনের বাসায় অভিযান।
প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চে মমতাজ বেগমের বাসায় সেনা অভিযান চালানোর কোনো বিশ্বাসযোগ্য তথ্য বা গণমাধ্যম প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ পুরো ভিডিওটি ডিজিটাল কায়দায় সম্পাদনা করে বানানো- মানুষকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে ছড়ানো গুজব।
অন্যদিকে, সত্যি হলো, গত ১২ মে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘটিত এক হত্যা মামলায় মমতাজ বেগমকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৭ মে আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়। এরপর ২২ মে দুটি মামলায় তাকে ৬ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
ভাইরাল ভিডিওর দাবি ছিল সিনেমার মতো, বাস্তবতা কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা। ‘৯০০ কোটি উদ্ধার’ নামের এই নাটক যে নিছকই ডিজিটাল বিভ্রান্তি।