ভারতীয় কণ্ঠশিল্পী সুনিধি নায়েকের সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত গান ‘পালাবে কোথায়’র মিউজিক ভিডিও ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে প্রবল সমালোচনা। গানচিত্রে মাদকতা, যৌনতা ও আবেগাসক্তির মতো বিষয়বস্তু ব্যবহারের কারণে অনেকেই বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। দর্শকদের মধ্যে অনেকের মতে, এমন দৃশ্য বাংলাদেশি সামাজিক প্রেক্ষাপটে অপ্রাসঙ্গিক এবং নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
গানটির শিল্পী সুনিধি নায়েক, যিনি ভারতে তেমন জনপ্রিয় না হলেও বাংলাদেশের শ্রোতাদের মধ্যে তার বিশেষ জনপ্রিয়তা প্রখ্যাত শিল্পী শায়ান চৌধুরী অর্ণবের অর্ধাঙ্গিনী হিসবে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, সুনিধির এই জনপ্রিয়তার নেপথ্যে তার ও অর্ণবের সম্পর্কের প্রতি মানুষের বাড়তি কৌতুহলের ভূমিকাই কি মুখ্য ?
একইসঙ্গে সমালোচকরা মনে করেন, বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গনে বহু প্রতিভাবান শিল্পী থাকলেও তাদের যথাযথ মূল্যায়ন হচ্ছে না, বরং বাইরের শিল্পীদের অতি সহজে জায়গা করে দেওয়া হচ্ছে।
‘পালাবে কোথায়’ গানের দৃশ্যে দেখা যায় মাদক ছড়িয়ে থাকা টেবিল, অন্ধকার ঘর, এক নারীর মানসিক টানাপোড়েন আর পুরুষ চরিত্রের রহস্যময় উপস্থিতি। ভিডিওতে যে ধরনের মাদকাসক্তি ও মানসিক বিপর্যয়ের উপস্থাপনা করা হয়েছে, তা নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বিশেষ করে যৌনতা ও আসক্তির এমন সংমিশ্রণকে অনেকেই বলছেন ‘অপ্রয়োজনীয় নাটকীয়তা’, যা সমাজের তরুণদের উপর নেতিবাচক বার্তা ছড়িয়ে দিতে পারে।
‘পালাবে কোথায়’র মধ্য দিয়ে মিউজিক ভিডিওর জগতে পা রাখা কান-জয়ী নির্মাতা আদনান আল রাজীবের প্রথম কাজ নিয়ে দর্শকদের একটা বড় অংশ সন্তুষ্ট নন। অনেকের মতে, ভিডিওটির নির্মাণ শৈলী দুর্বল, কাহিনি উপস্থাপনায় গভীরতা কম। গানচিত্রে শরিফুল রাজের উপস্থিতি ও অভিনয় কিছুটা প্রশংসা পেলেও পুরো কাজের সমালোচনা ছাপিয়ে যায় সেই ইতিবাচকতা।
সমালোচকদের ভাষায়, ‘পালাবে কোথায়’ গানটি হয়তো প্রোডাকশন ভ্যালুতে আকর্ষণীয়, তবে বিষয়বস্তু নির্বাচনে দায়িত্বহীন। মাদক, যৌনতা ও আসক্তির এমন প্রচার নিছক শিল্প নয়, বরং তা সমাজ ব্যবস্থার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলার আশঙ্কা তৈরি করে।
গানটি প্রকাশের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকে বলছেন, ‘বিষয়বস্তুর নামে এমন কিছু পরিবেশন করা কতটা গ্রহণযোগ্য?’ আবার কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘বাংলাদেশের শ্রোতা কি শুধুই সম্পর্কের মাধ্যমে প্রভাবিত হচ্ছে?’
খ্যাতিমান হলিউড নির্মাতা কোয়েন্টিন টারান্টিনোকে ঘিরে বহুদিন ধরেই একটি প্রচলিত ধারণা রয়েছে। ‘ফ্রম ডাক টিল ডন’ ছবিতে সালমা হায়েকের পায়ের উপর দিয়ে ওয়াইন পান করার দৃশ্যটি নিয়ে অনেকেই মনে করেন, টারান্টিনোর ব্যক্তিগত ফেটিশ ও ক্ষমতার অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে তিনি এমন দৃশ্য নির্মাণ করেছিলেন।
প্রশ্ন উঠেছিল, এটা কি কেবল চরিত্রের প্রয়োজন ছিল, নাকি নিজের ইচ্ছা পূরণের এক সুযোগ? ঠিক তেমনই ‘পালাবে কোথায়’ গানচিত্রেও কিছু প্রশ্ন উঠছে- শিল্প কি এখানে স্বাধীন, নাকি ব্যক্তিগত সম্পর্কের সুবিধা নিয়ে তৈরি বিশেষ এক আয়োজন?
সব মিলিয়ে ‘পালাবে কোথায়’ গানচিত্র নিয়ে যতটা না প্রশংসা, তার চেয়ে ঢের বেশি হচ্ছে সমালোচনা। বিষয়বস্তু নির্বাচন, উপস্থাপনা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এই কাজটি বাংলাদেশি সংগীতাঙ্গনে এখন এক বিতর্কের নাম।