শুক্রবার, ০২ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ইশরাত জাহান বুশরা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৮, ২০২৫, ০৩:৫৮ পিএম

ভ্রমণ অভিজ্ঞতা

প্রকৃতির মায়ায় মারমেইড বিচ রিসোর্ট

ইশরাত জাহান বুশরা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৮, ২০২৫, ০৩:৫৮ পিএম

প্রকৃতির মায়ায় মারমেইড বিচ রিসোর্ট

ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত; যেখানে সোনালি বালু আর নীল আকাশ মেলে ধরেছে এক অপূর্ব দৃশ্য। এখানে এমন এক রিসোর্ট রয়েছে, যা আমাদের দিয়েছে এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। শরতের সোনালি রোদের আলিঙ্গনে যখন আমি প্রথম রিসোর্টে প্রবেশ করি, মনে হচ্ছিল যেন একটি পুরোনো বইয়ের পাতায় পা রেখেছি। মৃদু-মন্দ সাগরের হাওয়া, সোনালি আভায় ভেসে থাকা বালুকাবেলা, আর চারপাশে অগণিত গাছপালা; এই দৃশ্য যেন কিছুটা কবিতার মতো, যেখানে সময় থেমে গেছে।

মারমেইড বিচ রিসোর্ট; যা মেরিন ড্রাইভ রোডের পাশে পেঁচার দ্বীপের কোণে অবস্থিত। কেবল প্রকৃতির সৌন্দর্যই নয়, এখানে আসলে এক অনন্য প্রশান্তির ছোঁয়া পাওয়া যায়। শরতের সোনালি রোদ আর মৃদু বাতাসের মাঝে সেখানে দুই রাত কাটিয়ে আমার মনে হয়েছিল, সময় যেন থমকে গেছে। প্রকৃতি আমাদের শুনিয়েছে তার আদর-মাখানো গান।

রিসোর্টের কটেজগুলো যেন একেকটি ছোট্ট পৃথিবী। বাঁশ আর পুনঃব্যবহৃত কাঠ দিয়ে তৈরি কটেজগুলো আধুনিক সুবিধার পাশাপাশি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক নিখুঁত মেলবন্ধন। গাছের ছায়ায় ঘেরা আমার কটেজটি যেন ছিল এক পুরোনো গল্পের অংশ; যার প্রতিটি কোণে লুকিয়ে ছিল অজানা রহস্য। খোদাই করা কাঠের দরজা, স্থানীয়ভাবে তৈরি সজ্জা, আর সোনালি আলোয় স্নিগ্ধ লণ্ঠন- সবকিছু যেন আহ্বান জানাচ্ছিল- ‘আর একটু থাকুন, এখানে আরও কিছু মধুর স্মৃতি তৈরি করুন।’

প্রকৃতির সিম্ফনি, পাখির গান আর সমুদ্রের দূরবর্তী আওয়াজ; এখানে সকালের শুরুটা একদম আলাদা। প্রথম সকালে ঢেউয়ের ছন্দের মাঝে চোখ মেলে দেখলাম সমুদ্রের অপরূপ দৃশ্য। কফির কাপ হাতে বারান্দায় বসে আমি শুধু তাকিয়ে ছিলাম। শান্ত-মৃদু বাতাস আর সমুদ্রের লবণাক্ত গন্ধে মন আরও বেশি প্রকৃতির সান্নিধ্যে চলে যাচ্ছিল।

কিন্তু মারমেইড বিচ রিসোর্ট শুধু নিঃসঙ্গতার স্থান নয়। এখানে সক্রিয়তার খোঁজে থাকা মানুষের জন্যও অনেক কিছু আছে। কায়াকিং, সাইকেল রাইডিং, অথবা সৈকতের ধারে পায়ের তলায় বালির অনুভূতি- এসবকিছুই আমাদের দারুণ আনন্দ দিয়েছে। এক বিকেলে, আমি সাইকেল নিয়ে রিসোর্টের চারপাশে ঘুরতে বের হই, আর হঠাৎ অনুভব করি, দিগন্তের সীমাহীনতা আমাকে এক নতুন জীবন দেখাচ্ছে। বাতাসের টানে মাথার চুল উড়ছে। সমুদ্রের ধারে এই অসীম দৃশ্য দেখে মনে হয়েছিল কোনো শিল্পীর ক্যানভাসে আঁকা ছবি।

রিসোর্টের রেস্তোরাঁর খাবার ছিল চমৎকার রন্ধনশিল্পের উদাহরণ। স্থানীয় উপাদান দিয়ে তৈরি প্রতিটি পদ ছিল নান্দনিক। এক সন্ধ্যায় আমি গ্রিলড পমফ্রেট খেয়েছিলাম; এটির ধোঁয়া-মাখা গন্ধ, আর ট্যাঞ্জি আম সালসার সঙ্গে এর সমন্বয় ছিল এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। পরের রাতে নারিকেল থেকে তৈরি একটি ডেজার্ট খেয়েছিলাম; যা মনে করিয়ে দিয়েছিল- যত সহজই হোক না কেন, আন্তরিকতা দিয়ে প্রস্তুত করা যে কোনো খাবার অসাধারণ হয়ে উঠতে পারে।

মারমেইড বিচের সন্ধ্যাগুলো ছিল বিশেষ মায়ায় রঙানো। প্রথম রাতে সৈকতে লাইভ মিউজিক ছিল। আগুনের নরম আলোক ছড়ানো ছিল সুরে সুরে। গিটারিস্টের বাজানো সুর, তরঙ্গের ধ্বনির সঙ্গে মিলে এক অভূতপূর্ব সংগীত রচনা করছিল। দ্বিতীয় রাতে, পূর্ণিমার আলোতে সৈকতের ধারে হাঁটতে হাঁটতে মনে হয়েছিল, এ যেন এক অপার্থিব অভিজ্ঞতা। আমার পায়ের তলায় শীতল বালি সমুদ্রের অপরূপ আলোয় চমকাচ্ছিল।

মারমেইড বিচ রিসোর্টের একটি অতিরিক্ত সৌন্দর্য রয়েছে, যা সাধারণত এমন রিসোর্টগুলোর মাঝে দেখা যায় না। এটি পরিবেশবান্ধব একটি রিসোর্ট, যা প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে আছে। রিসোর্টের স্থাপত্য নকশা থেকে শুরু করে তার কার্যক্রম পর্যন্ত; সব কিছুতে পরিবেশের সঙ্গে খাপখাইয়ে চলার ছাপ। সৌরশক্তি ব্যবহার করে আলোকসজ্জা, বৃক্ষরোপণ প্রকল্প, আর ইকো-ফ্রেন্ডলি কাঠামো; সব কিছুই রিসোর্টটির পরিবেশের প্রতি ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা প্রকাশ করে। বিশেষ করে পেঁচার দ্বীপের সবুজে ঘেরা প্রকৃতি, যা রিসোর্টের একেবারে কাছেই অবস্থিত; তা যেন প্রাণি ও গাছপালার একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল।

আরেকটি দিক যা আমাকে বিশেষভাবে আকর্ষিত করেছে, তা হলো রিসোর্টের স্থানীয় সম্প্রদায়ের প্রতি দায়বদ্ধতা। অনেক কর্মী এখানকার আশপাশের গ্রাম থেকে আসে এবং রিসোর্টটি স্থানীয় কৃষক ও কারিগরদের সহযোগিতা করে; যা এ ধরনের পর্যটন ব্যবসায় খুবই বিরল। রিসোর্টের সাবান, যা স্থানীয় সমবায় থেকে তৈরি। অথবা আমার সালাদের সবজি, যা মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি খামার থেকে সংগ্রহ করা। এসব প্রমাণ করে যে পর্যটন শুধুমাত্র আনন্দের জন্য নয়, বরং দায়বদ্ধ থেকে কাজ করলে এর মাধ্যমে ব্যবসার পাশাপাশি স্থানীয় ভূমি ও সংস্কৃতিকেও সহযোগিতা করা সম্ভব।

রিসোর্টের শেষ সকালে যখন আমি সৈকতে বসে সূর্যোদয় দেখছিলাম, তখন মনে হচ্ছিল যেন এই স্থানে কাটানো প্রতিটি মুহূর্তই এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। এটি শুধুমাত্র একটি থাকার স্থান নয়, বরং এ এক নতুন জীবন যাপনের পদ্ধতি। প্রকৃতির সঙ্গে, নিজের সঙ্গে, আর জীবনের সরল আনন্দের সঙ্গে মেলবন্ধনের জায়গা।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!