বাংলা রান্নাঘরে কাঁকড়ার অবস্থান যেন শ্বশুরবাড়িতে জামাইয়ের মতো- সবাই তাকে চেনে, দেখে, চায়, কিন্তু কিছুটা ভয়ে-ভয়ে। মাছ-মাংস তো হামেশাই চলে, কিন্তু কাঁকড়া?
ওহ হো! তার গায়ে লালচে ঝকঝকে খোলস, পিঞ্জরার মতো পা, আর খেতে গেলে একটা যুদ্ধ লাগে- কোনটা ভাঙব, কোথা কামড়াব! কিন্তু এই ‘খোলসে মোড়া সোনা’ কাঁকড়ার ভেতর লুকিয়ে আছে চমৎকার পুষ্টিগুণ। তবে, সাবধান! এই খাবারে যেমন আছে উপকার, তেমনি আছে কিছু অপকার।
চলুন, আজ কাঁকড়া নিয়ে একটু বিশদে জেনে নিই- কাদের খাওয়া উচিত, কাদের নয়, আর খেয়ে বসলেই কী হবে? অ্যালার্জি না কি থাকবেন সুস্থ?
কাঁকড়া- এই ছোট্ট জলজ প্রাণীটি দেখলেই অনেকের চোখে জল আসে, কেউ খুশিতে, কেউ আতঙ্কে!
কেউ আবার ভাবে, এটা খেতে না কি যুদ্ধে নামতে হয়? তবে এই ‘খোলসধারী সুস্বাদু সৈনিক’ কাঁকড়া খাওয়া নিয়ে বহু প্রশ্ন ঘোরে মানুষের মনে। এটা খেলে উপকার হবে, না শরীর খারাপ? কারো পাতে পড়লে পুষ্টির খনি, তো কারো জন্য বিপদের ঘণ্টা! চলুন প্রথমেই জেনে নিই কাঁকড়ার পুষ্টিগুণ নিয়ে।
কাঁকড়ার পুষ্টি
যারা ভাবেন কাঁকড়া খেলে শুধু পেটই ভরে, তারা ভুল ভাবেন। কাঁকড়া হলো একেবারে পুষ্টির খনি! এতে থাকে-
- উচ্চমাত্রার প্রোটিন : মাংসের চেয়েও হালকা, সহজে হজমযোগ্য।
- ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড : যা হৃৎপিণ্ডকে রাখে সুস্থ।
- ভিটামিন বি১২ : স্নায়ুতন্ত্র ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
- জিঙ্ক, আয়রন ও কপার : রক্ত তৈরি, রোগ প্রতিরোধ ও হাড় মজবুত করতে দারুণ কার্যকর।
- লো-ক্যালোরি ও লো-ফ্যাট : যারা ডায়েট করছেন, তাদের জন্যও এক নম্বর খাবার।
কিন্তু শুধু গুণের কথা বললেই তো হবে না- চোখ রাখতে হবে কোন পাতে কাঁকড়া পড়লে বিপদ!
কাঁকড়া কাদের খাওয়া উচিত নয়?
সব মানুষের কাঁকড়া খাওয়া মানায় না। বিশেষ করে যাদের নিচের কোনো সমস্যা আছে, তারা কাঁকড়া থেকে দূরে থাকুন:
-অ্যালার্জি প্রবণতা থাকলে (যেমন সি-ফুড এলার্জি)।
-গাউট বা ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে।
-হৃদরোগ বা কিডনির সমস্যা থাকলে : কারণ কাঁকড়ায় সোডিয়ামের পরিমাণ একটু বেশি।
-প্রেগন্যান্সির সময় : যদিও ছোট পরিমাণে সমস্যা না হলেও অনেক চিকিৎসক পরামর্শ দেন কাঁকড়া এড়াতে।
কাঁকড়া খেলে কি অ্যালার্জি হয়?
হ্যাঁ, কারো কারো ক্ষেত্রে কাঁকড়া খাওয়ার পর হতে পারে তীব্র অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন। সাধারণ উপসর্গগুলো হলো:
- চুলকানি, ফুসকুড়ি বা ত্বকে ফোলা
- শ্বাসকষ্ট
- পেটব্যথা, বমি বা ডায়রিয়া
- কখনো কখনো এনাফাইল্যাক্সিস, যা মারাত্মক হতে পারে
তাই প্রথমবার কাঁকড়া খেলে সতর্ক থাকা ভালো। যদি আপনার সি-ফুডে অ্যালার্জি থাকে, তাহলে কাঁকড়া এড়িয়ে চলাই উত্তম।
কাঁকড়া খাওয়ার উপকারিতা
হৃদযন্ত্রের বন্ধু : ওমেগা-৩ থাকায় হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
চোখ ও মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়ক : বিশেষত বাচ্চাদের জন্য ভালো।
ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে : জিঙ্ক ও সেলেনিয়ামের উপস্থিতিতে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে : কম ক্যালোরি ও কম চর্বির জন্য।
রক্তস্বল্পতা রোধ করে : আয়রন থাকার কারণে।
কাঁকড়া খাওয়ার অপকারিতা
- অ্যালার্জির ঝুঁকি
- ইউরিক অ্যাসিড বাড়াতে পারে
- দূষিত বা সংরক্ষিত কাঁকড়া থেকে ফুড পয়জনিংয়ের আশঙ্কা
- উচ্চ সোডিয়াম, যা হাই ব্লাড প্রেশারে সমস্যা করতে পারে
কাঁকড়া খাওয়া মানে শুধু চমৎকার স্বাদের আনন্দই নয়, বরং পুষ্টিগুণেও ভরপুর এক অভিজ্ঞতা। তবে খাবারটি উপকারী হলেও সবার জন্য নয়। তাই কাঁকড়া খাওয়ার আগে একটু নিজের শরীর আর পরিস্থিতি বুঝে নিন।
যদি সব ঠিক থাকে, তবে কাঁকড়ার ঝোল বা ভুনা দিয়ে গরম ভাত? আহা, বাঙালির জন্য তো সোনায় সোহাগা!
আপনার মতামত লিখুন :