বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ৩১, ২০২৫, ০৯:১৯ পিএম

পৃথিবীর সব থেকে উঁচুতে ‘স্বর্ণ শহর’

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ৩১, ২০২৫, ০৯:১৯ পিএম

পৃথিবীর সব থেকে উঁচুতে ‘স্বর্ণ শহর’

ছবি: সংগৃহীত

ইউরোপের আল্পস পর্বতমালার সর্বোচ্চ উচ্চতা যত, পেরুর লা রিনকোনাডা (La Rinconada) শহর তার চেয়েও ১০০০ ফুট বেশি উচ্চতায় অবস্থিত। আন্দিস পর্বতমালার কোলে অবস্থিত এই শহরটিই পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত শহর। শহরটিতে বসবাস করে প্রায় ৫০,০০০ মানুষ। আর সবার এখানে জড়ো হওয়ার পেছনে যে জিনিসটা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত সেটি হল- স্বর্ণ, ইনকারা যাকে বলত ‘সূর্যের ঘাম’!

 

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে লা রিনকোনাডা শহরের উচ্চতা ১৬,৭৩২ ফুট বা ৫,১০০ মিটার।

এত উঁচুতে অবস্থিত হওয়ায় লা রিনকোনাডার বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ খুব কম। সেই সাথে প্রচন্ড ঠান্ডা আবহাওয়া। যা হিমাংকের কয়েক ডিগ্রি নিচে। চারদিকে ধূসর পাথর, আর সাদা বরফ। সবুজের লেশ মাত্র নেই। কিন্তু, এই প্রতিকূল পরিবেশেই গড়ে উঠেছে জনবহুল একটি শহর।

মানুষের অভিযোজন ক্ষমতা আর প্রতিকূল পরিবেশে মানুষের টিকে থাকার এ এক চমৎকার নিদর্শন। আর এটা হয়েছে স্বর্ণের প্রতি মানুষের সেই চিরন্তন আকর্ষণের কারণে। এখানে প্রথমে স্বর্ণের খোঁজ পায় ইনকারা। ইনকাদের পথ অনুসরণ করে পরে আসে স্বর্ণলোভী স্প্যানিশরা। যারা পৃথিবী জয় করতেই বেড়িয়েছিল স্বর্ণ আর হীরা-মুক্তার খোঁজে। এত শত বছর পরেও স্বর্ণ সন্ধানীদের কাছে লা রিনকোনাডার গুরুত্ব এতটুকু কমে নি।

লা রিনকোনাডা এমন একটি জায়গা, যেখানে স্বর্ণ সন্ধানীরা নিশ্চিতভাবে জানে স্বর্ণ আছে। লা রিনকোনাডা এমন একটি জায়গা যেখানে সব কিছুই আবর্তীত হয় স্বর্ণকে ঘিরে। ভূ-তত্ববিদদের মতে, ‘এখানে এখনও কয়েকশ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের স্বর্ণ রয়েছে।’ কিন্তু সেই স্বর্ণকে হাতের মুঠোয় পাওয়াটা সহজ কোন ব্যাপার নয়।

লা রিনকোনাডায় অসংখ্য ছোট বড় স্বর্ণ খনি রয়েছে। এখানে পাহাড়ের গা থেকে বা খোলা জায়গায় মাটি সরিয়ে যেমন আকরিক সংগ্রহ করা হয়, আবার সুরঙ্গ কেটে পাহারের ভেতরে ঢুকে সেখান থেকেও আকরিক সংগ্রহ করা হয়। একে বলা হয় হার্ড রক মাইনিং। লা রিনকোনাডায় হার্ড রক মাইনিং-এ বেশী স্বর্ণ পাওয়া যায়।

এখানে স্বর্ণের সন্ধানে যুগের পর যুগ ধরে পাহাড়ের ভেতরে মাইলের পর মাইল সুরঙ্গ কাটা হয়েছে। সুরঙ্গের ভেতরের বাতাসে অক্সিজেনের স্বল্পতা, ডিনামাইট বিস্ফোরোনের কারণে সৃষ্ট ধুলা আর বিষাক্ত গ্যাস, আলোর স্বল্পতা এসবের মাঝেই শ্রমিকেরা কাজ করে যান।

এখানে পাথর ধ্বসে সুরঙ্গ বন্ধ হয়ে শ্রমিকদের আটকা পড়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। প্রায়ই ঘটে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনা। ক্ষুধায় মৃত্যু, টানেল বন্ধ হয়ে মৃত্যু, অক্সিজেনের অভাবে শ্বাস কষ্ট হয়ে মৃত্যু, বিষাক্ত বর্জ্য আর গ্যাসের প্রভাবে মৃত্যু। সব মৃত্যুই একই রকম সেখানে।

শুধু কিছু সংখ্যা, কিছু পরিসংখ্যান! এখানে স্বর্ণ খনিতে কাজ করা হয় সেই মান্ধাতার আমলের পদ্ধতিতে। আজ থেকে একশ দেড়শ বছর আগে যেভাবে স্বর্ণ উত্তোলন করা হত এখনও সেই পদ্ধতিই চালু আছে। এ যেন এক কেজিএফ সিনেমার বাস্তব উদাহরন।

শ্রমিকদের কাজ করতে হয় অস্বাস্থ্যকর আর ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে। প্রতিকূল পরিবেশে করতে হয় কঠোর আর অমানবিক পরিশ্রম। বিস্ময়কর মনে হতে পারে, ছোট একটি আংটিতে যে পরিমাণ স্বর্ণ রয়েছে তা সংগ্রহ করতে পাহাড় কেটে সড়াতে হয় ২৫০ টন পাথর। গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মত এখানে শ্রমিকদের পারিশ্রমিক দেয়া হয় স্প্যানিশ আমলে চালু হওয়া Cachorreo নামক নিষ্ঠুর পদ্ধতিতে।  

এ পদ্ধতিতে শ্রমিকরা খনিতে ৩০ দিন বিনা বেতনে কাজ করেন। ৩১ তম দিনে তাদেরকে চার ঘন্টা বা তার কিছু বেশি সময়ের একটা সুযোগ দেয়া হয়। এসময়ের ভেতরে শ্রমিকরা বস্তায় করে যত খুশি তত আকরিক খনি থেকে নিয়ে যেতে পারবেন।

‘যত খুশি তত’ বলা হলেও সুযোগটা তারা পাবেন মাত্র ‘একবার’ এবং বস্তা বহনের জন্য কোন যানবাহন ব্যবহার করতে পারবেন না। অর্থাৎ, শারীরিক শ্রমে যতটুকু নেয়া যায়। সত্যিকার অর্থে তাই ত্রিশ দিনের অমানবিক শ্রমের বিনিময়ে শ্রমিকরা বস্তায় করে অল্পকিছু আকরিকই সাথে করে নিয়ে যেতে পারেন। এই লটারি পদ্ধতিতে যে কোন কিছুই হতে পারে।

শ্রমিকরা স্বাধারণত তাদের আকরিক থেকে অল্প কিছু মূল্যের স্বর্ণ পান, আবার কারও কারও আকরিক হয় মূল্যহীন। সেখানে কোন স্বর্ণই থাকে না। কিন্তু শ্রমিকরা স্বপ্ন দেখে যান, তাদের আকরিক থেকে একদিন এমন পরিমাণ স্বর্ণ পাবেন যাতে বাকি জীবনের জন্য তাদের ভাগ্য পরিবর্তন হয়ে যাবে

গত দশ বছরে এ শহরে জনসংখ্যা বেড়েছে ২৩০%। একদিকে বেকারত্ব, অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী স্বর্ণের দামের ক্রমাগত বেড়ে চলা এই দুই কারণে মানুষজন এখানে বাসস্থান গড়ে চলছে। কিন্তু, এই প্রতিকূল পরিবেশে কেউ স্থায়ীভাবে থাকার জন্য আসে না। সবাই আসে অস্থায়ীভাবে থেকে ভাগ্য গড়ার জন্য। সবার মনে ভাবনা- ‘সারাজীবন এখানে থাকব না। কোনমতে কিছুদিন থেকে ভাগ্য পরিবর্তন করার মত কিছু পুঁজি করেই ভাল কোথাও পাড়ি জমাব।’

এ শহরে নেই কোন বিশুদ্ধ পানি সরবারাহ ব্যবস্থা, নেই পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, নেই বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা। এটা এমন একটি শহর যে শহরে হোটেল নেই, রেস্তোরা নেই, শপিংমল নেই, হাসপাতাল নেই, স্কুল নেই, বাসস্টপ নেই, রেল স্টেশন নেই। শুধু তুষার ভূমিতে পরিকল্পনাহীনভাবে ছোট ছোট ঘরের পর ঘর। চারপাশে খোড়াখোড়ির চিহ্ন, কোথাও বিশাল বিশাল সব গর্ত। কাদায় মাখামাখি পুরো শহরটাই যেন বিরাট একটি বস্তি!

অস্থায়ীভাবে থাকতে এসে স্থাথী হয়ে যাওয়া মানুষগুলোর সন্তান হয়, সন্তানগুলো ছোট থেকে বড় হয়, তাদের মৃত্যু হয়, কিন্তু ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয় না। জীবন এখানে নির্মম। টিকে থাকায় লড়াইয়ে জিততে নারী-পুরুষ-শিশু সবাইকে এখানে কাজ খুঁজে নিতে হয়। যেখানে স্বপ্ন আর দুঃস্বপ্ন, ভাগ্য আর হতাশা, দারিদ্র্য আর প্রাচুর্য, নিয়ম আর আইনহীনতা, নির্মল প্রকৃতি আর বিষাক্ত বর্জ্য সব একসাথে মাখামাখি হয়ে থাকে। আর এর সব কিছুই আবর্তিত হয় শুধু সোনালি ‘স্বর্ণ’-কে ঘিরে।

আরবি/শিতি

Link copied!