বিয়ে একটি সামাজিক বন্ধন বা বৈধ চুক্তি, যা দুজন মানুষের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপন করে। কিন্তু কবে এই বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া উচিত? বয়স কত হলে বিয়ের সিদ্ধান্তটি উপযুক্ত হয়? এ নিয়ে রয়েছে নানা মতপার্থক্য।
কেউ বলেন, বয়স ২৫ পার হয়ে গেলে আর দেরি করা উচিত নয়। আবার কেউ মনে করেন, বিয়ের কোনো নির্দিষ্ট বয়স হয় না—সঠিক মানুষ পেলেই যথাসময়ে বিয়ে করা উচিত। কেউ ২০ বছরেই বিয়ে করেন, কেউ বা ৩০ পার হয়ে অপেক্ষা করেন জীবনের স্থিতি ও মনমতো সঙ্গীর জন্য।
বাংলাদেশে বাস্তবতা ভিন্ন। এখানে বিয়ে একটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত হলেও তা সমাজে ব্যক্তিগত থেকে যায় না। বিশেষ করে নারীদের দিকে সমাজের দৃষ্টি ও প্রশ্ন ছুঁড়ে আসে—‘তোমার তো বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে!’
বর্তমানে শহুরে শিক্ষিত শ্রেণির মধ্যে ছেলেমেয়েরা সাধারণত ২৭–৩২ বছর বয়সের মধ্যে বিয়ে করছেন। পড়াশোনা শেষে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তবেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন অনেকে। মেয়েরাও একই পথে হাঁটছেন।
ভারতীয় গবেষকদের মতে, বিয়ের ন্যূনতম বয়স হওয়া উচিত ২৫ বছর, কারণ এ সময়ের মধ্যে ব্যক্তিত্ব ও জীবনদৃষ্টি গঠিত হয়। অনেকেরই পেশাগত ভিত্তি তৈরি হয়ে যায়। মানসিক পরিপক্বতা আসে। অন্যদিকে, ৩২ বছর পেরিয়ে গেলে মানিয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ বেড়ে যেতে পারে—বিশেষ করে স্বাধীনচেতা ও আত্মনির্ভর মানুষদের জন্য।
নারীদের জন্য সময়ের আগেই বিয়ে করাটা হতে পারে বাধা ও চাপের উৎস। প্রচলিত ধারা অনুযায়ী, সংসার ও সন্তান পালনের চাপ মেয়েদের ওপরই বেশি পড়ে। কর্মজীবী নারীদের জন্য এটি আরও কঠিন।
বেশি বয়সে বিয়ের ক্ষেত্রেও ঝুঁকি রয়েছে। নারীদের মা হওয়ার সম্ভাবনা ৩০ বছর থেকে কমে যায় এবং ৩৫ পার হলে জটিলতা বাড়ে। পুরুষদের ক্ষেত্রেও ৪০ বছর পর থেকে প্রজনন সক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে।
তবে দেরিতে বিয়ের কিছু সুবিধাও আছে। যেমন- মানসিক পরিপক্বতা বৃদ্ধি, আর্থিক স্থিতি, জীবনকে বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা।
বয়স নয়, শর্ত হওয়া উচিত প্রস্তুতি। বিয়ের আগে বিবেচনায় রাখতে হবে—আর্থিক স্বাধীনতা, মানসিক স্থিতি, সম্পর্ক পরিচালনার পরিপক্বতা, পারস্পরিক সম্মান ও ভালোবাসা।
একজন মানুষ যতই পরিণত হোক, যদি সে নতুন জীবনের জন্য প্রস্তুত না থাকে—বিয়ে সফল হবে না। সমাজের চাপ নয়, নিজের সচেতন সিদ্ধান্তেই হোক জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই অধ্যায়ের সূচনা।