ঢাকা মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৫

পেঁপে খাওয়ার যে ১০ উপকারিতা

ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২৫, ০৯:৩৮ এএম
পাঁকা পেঁপে। ছবি- সংগৃহীত

মধ্য যুগের আদিবাসীরা পেঁপেকে ব্যবহার করত ঔষধি কাজে। আজ সেই একই ফল পরিচিত বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় সুপারফুড হিসেবে। নরম, রসাল স্বাদ এবং অনন্য পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ফল আধুনিক পুষ্টিবিজ্ঞানেও সমানভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে।

পেঁপে সম্পর্কে কিছু তথ্য

প্রাচীন ইউরোপীয় অভিযাত্রীরা পেঁপেকে ‘গাছের তরমুজ’ নামে ডাকলেও প্রকৃতপক্ষে এটি একটি বেরি। পেঁপে থেকে পাপাইন নামক এনজাইম পাওয়া যায়, যা মাংস নরম করার কাজে বিখ্যাত এবং চুইংগাম উৎপাদনেও ব্যবহৃত হয়। ক্রিস্টোফার কলম্বাস পেঁপেকে ডাকতেন ‘ফেরেশতাদের ফল’-ফলের অসাধারণ গুণেই এই উপাধি। এর বীজ কালো মরিচের মতো ঝাঁজালো, তাই অনেক দেশে মরিচের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ছোট একটি পেঁপেতেই দৈনিক প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি-এর তিনগুণ পর্যন্ত পাওয়া যায়। সেপ্টেম্বর মাসকে যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয় পেঁপে মাস হিসেবে পালন করা হয়। প্রসাধনী শিল্পে পেঁপের এনজাইম ব্যবহার করে শ্যাম্পু, কন্ডিশনার এবং স্কিনকেয়ার তৈরি করা হয়। পেঁপের দুটি প্রধান জাত- মেক্সিকান এবং হাওয়াইয়ান। আর এর গাছ বাঁচে প্রায় ২০ বছরের বেশি।

ভিটামিন–অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভাণ্ডার

এক কাপ পেঁপে কিউব করা অংশে পাওয়া যায় প্রচুর ভিটামিন সি, ভিটামিন এ (বিটা ক্যারোটিন), ফোলেট, পটাসিয়াম এবং খাদ্যতন্তু। এছাড়া এতে ভিটামিন ই, কে, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের মতো প্রয়োজনীয় খনিজও থাকে। এই উপাদানগুলো পেঁপেকে একটি পূর্ণাঙ্গ পুষ্টির উৎসে পরিণত করেছে।

হজম শক্তি বাড়ায়

পেঁপের পাপাইন এনজাইম হজমে দারুণ ভূমিকা রাখে। এটি প্রোটিন ভেঙে দিতে সাহায্য করে, ফলে পেট ফোলা, কোষ্ঠকাঠিন্য বা বদহজম কমে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা

ভিটামিন সি-এর প্রাচুর্যের কারণে পেঁপে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পেঁপে যুক্ত করলে শরীর সংক্রমণের বিরুদ্ধে বেশি সক্ষম হয়।

প্রদাহ কমাতে সহায়ক

পেঁপেতে থাকা লাইকোপিন ও বিটা–ক্যারোটিন শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এগুলো শরীরে অপ্রয়োজনীয় প্রদাহ কমাতে কার্যকর এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত রোগের ঝুঁকি কমায়।

হৃদ্‌স্বাস্থ্য রক্ষা করে

পেঁপের খাদ্যতন্তু, পটাসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট একসঙ্গে কাজ করে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।

ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে পেঁপেতে থাকা ফাইটোকেমিক্যাল, ক্যারোটিনয়েড ও ফ্ল্যাভোনয়েড শরীরকে নির্দিষ্ট কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা দিতে সহায়তা করতে পারে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা

পেঁপের গ্লাইসেমিক সূচক তুলনামূলক কম। এতে থাকা খাদ্যতন্তু রক্তে শর্করা ধীরে বাড়তে সাহায্য করে, ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি একটি নিরাপদ ফল।

ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে

পেঁপেতে থাকা ভিটামিন সি ও এ ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়, ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা উন্নত করে এবং বলিরেখা কমায়। পাশাপাশি এটি ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকেও রক্ষা করে।

ক্ষত নিরাময় দ্রুততর

পাপাইন এনজাইমের কারণে ছোটখাটো ক্ষত দ্রুত সারতে সাহায্য পায়। এই এনজাইম কোষ পুনর্গঠনে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

চোখের স্বাস্থ্যে উপকারী

লুটেইন ও জেক্সানথিন চোখকে আলোর ক্ষতি, ছানি এবং বয়স–সম্পর্কিত ম্যাকুলার অবক্ষয় থেকে রক্ষা করে।

হাড় মজবুত করে

পেঁপেতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন কে হাড়ের স্বাস্থ্য ও ঘনত্ব বজায় রাখতে অবদান রাখে।

শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা কমায়

এর অ্যান্টি–ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান হাঁপানি বা সিওপিডির মতো শ্বাসযন্ত্রের সমস্যায় আরাম এনে দিতে পারে।

প্রজনন সক্ষমতা বাড়ায়

ফোলেট ভ্রূণের সুস্থ বিকাশে অপরিহার্য। তবে গর্ভবতী নারীদের অপরিপক্ক (কাঁচা) পেঁপে পরিহার করা উচিত, কারণ এর ল্যাটেক্স জরায়ু সংকোচন বাড়াতে পারে।

রন্ধন থেকে প্রসাধনী- বহুমুখী ব্যবহার

পেঁপে সালাদ, স্মুদি, ডেজার্টসহ নানা খাবারে ব্যবহার করা যায়। স্কিনকেয়ার ও হেয়ারকেয়ার পণ্যেও এর এনজাইম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ব্যবহৃত হয়। এছাড়া কাঁচা পেঁপের পাপাইন মাংস নরম করার কাজে অত্যন্ত জনপ্রিয়। পাতা ও বীজও বিভিন্ন প্রথাগত চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

পেঁপে সাধারণত নিরাপদ হলেও যাদের ল্যাটেক্স অ্যালার্জি আছে তাদের সতর্ক থাকা উচিত। পাশাপাশি যারা ব্লাড থিনার বা ডায়াবেটিসের ওষুধ খান তাদের পেঁপে খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। গর্ভাবস্থায় কাঁচা পেঁপে এড়িয়ে চলাই ভালো।