লাইফ সাপোর্টে নিলে তো আর কেউ ফিরে আসে না’ এমন একটি ধারণা অনেকের মনে গেঁথে আছে। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, এই ধারণা ভুল। ডা. আশরাফ জানান, ‘আমাদের আইসিইউতে বর্তমানে একজন ক্যান্সারের রোগী আছেন। তার কিডনি ফেলিয়ার, সঙ্গে বড় নিউমোনিয়া। যখন রোগীর আত্মীয়দের বলা হলো লাইফ সাপোর্টের প্রয়োজন, তারা বললেন, লাইফ সাপোর্টে দিলে তো আর কেউ ফেরে না। কিন্তু বাস্তবে এটি সত্য নয়।’
ডা. আশরাফের ভাষ্য অনুযায়ী, চিকিৎসাবিজ্ঞানে লাইফ সাপোর্ট বা ভেন্টিলেশন মূলত রোগীকে বাঁচানোর জন্য ব্যবহৃত চিকিৎসা প্রক্রিয়া। এটি কোনো মৃত্যুর নিশ্চিত নির্দেশ নয়, বরং এক ধরনের ‘ট্রিটমেন্ট অপশন’।
ধারণার পেছনের বাস্তবতা
ডা. আশরাফ উল্লেখ করেন, ‘লাইফ সাপোর্ট মানেই নিশ্চিত মৃত্যু’ ধারণার দুটি মূল কারণ রয়েছে:
১. আর্থিক সক্ষমতা: অনেক সময় রোগীর আত্মীয়রা অর্থনৈতিক কারণে সাপোর্ট নেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন, কিন্তু তখন অনেক ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা এমন হয় যে ফেরানো কঠিন হয়ে পড়ে।
২. আইসিইউ বেডের স্বল্পতা: অনেক হাসপাতালে আইসিইউ সীমিত, তাই রোগীকে দেরিতে নেওয়া হয়। বাস্তবে হয়তো আরও দুই দিন আগে লাইফ সাপোর্ট প্রয়োজন ছিল।
তিনি আরও জানান, দেশের সব হাসপাতালের আইসিইউ আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী নয়। তবে ঢাকার একটি হাসপাতালের আইসিইউর গত বছরের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, রোগীর ৬০-৭০ শতাংশই তাদের আইসিইউ থেকে বেঁচে ফিরেছেন।
তিনি বলেন, ‘একজন রোগীকে আমরা তিনবার ভেন্টিলেশনে নিয়েছি, তারপর তিনি বেঁচে ফিরেছেন। তবে অনেক ক্ষেত্রে বয়স্ক বা জটিল রোগীদের শারীরিক ক্ষমতা কিছুটা দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
লাইফ সাপোর্টের বাস্তব চিত্র
লাইফ সাপোর্টের বাস্তব চিত্র বোঝাতে গিয়ে ডা. সিনহা আবুল মনসুর বলেন, ‘লাইফ সাপোর্ট হলো মূলত সেই রোগীদের জন্য, যারা নিজে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে পারছে না। এটি হতে পারে মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ, টিউমার, ফুসফুসের সমস্যা বা মারাত্মক সংক্রমণের কারণে।’
রোগী নিজে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে না পারলে প্রথম কাজ হলো ভেন্টিলেশন, যা লাইফ সাপোর্টের মূল। এরপর চিকিৎসকরা রোগীর অবস্থা অনুযায়ী অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং চিকিৎসা নির্ধারণ করেন।
‘আমরা ব্রেইন ডেথ আছে কি না সেটিও যাচাই করি। যদি দেখা যায় মস্তিষ্ক কার্যক্ষম নয়, তখন রোগীর আত্মীয়দের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, লাইফ সাপোর্ট চালু থাকবে কি বন্ধ হবে। আত্মীয়দের মতামত এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
লাইফ সাপোর্ট নিয়ে সিদ্ধান্ত
লাইফ সাপোর্ট মানেই মৃত্যুর নিশ্চয়তা নয়। এটি রোগীকে বাঁচানোর একটি চিকিৎসা প্রক্রিয়া। রোগীর বয়স, জেনেটিক্স, পূর্বের রোগের ইতিহাস এবং চিকিৎসার শুরু ও সময়– সবকিছু মিলিয়ে রোগীর ফলাফল ভিন্ন হতে পারে।
ডা. আশরাফের কথায়, ‘একই রোগে আক্রান্ত দুই রোগীর আউটকাম কখনো একই হয় না। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা অনেক জীবন বাঁচাতে পারে।’

