ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

নৌযানে আবারও হামলা যুক্তরাষ্ট্রের, নিহত ৪

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০২৫, ১১:৪৭ এএম
ক্যারিবীয় সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা। ছবি- সংগৃহীত

ক্যারিবীয় সাগরে আবারও প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সন্দেহভাজন মাদকবাহী ওই নৌযানে চালানো হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন ।

সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

বৃহস্পতিবারের (৪ নভেম্বর) এই হামলাটি এমন সময় ঘটল যখন গত ২ সেপ্টেম্বরের এক অভিযানে একই নৌকায় টানা দুই দফা হামলা চালানোর তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর ট্রাম্প প্রশাসনের ওপর নতুন করে নজরদারি শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের হামলা যুদ্ধাপরাধের পর্যায়ে পড়তে পারে। 

সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘এক্স’-এ দেওয়া পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সাউদার্ন কমান্ড জানায়, সাম্প্রতিক হামলার নির্দেশ দেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। তাদের দাবি, আন্তর্জাতিক জলসীমায় একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের নিয়ন্ত্রিত নৌযানে ‘প্রাণঘাতী হামলা’ চালানো হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, নৌকাটিতে মাদক ছিল এবং এটি পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের পরিচিত মাদকপাচার রুট ধরেই চলছিল। এতে থাকা চারজন পুরুষ ‘নার্কো-টেরোরিস্ট’ নিহত হয়েছে।

গত কয়েক মাস ধরে চালানো এই ধরনের অভিযানে ট্রাম্প প্রশাসন এখন পর্যন্ত ৮০ জনের বেশি সন্দেহভাজন মাদক কারবারিকে হত্যা করেছে। তবে ২ সেপ্টেম্বরের হামলার দ্বিতীয় পর্যায়ের বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর কংগ্রেসের রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় দলের সদস্যদের মধ্যে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং তদন্ত শুরু হয়েছে।

হোয়াইট হাউস বলছে, দ্বিতীয় হামলার নির্দেশ হেগসেথ দেননি। তাদের দাবি, প্রথম হামলায় বেঁচে যাওয়া দুজনকে লক্ষ্য করে যে দ্বিতীয় হামলা চালানো হয়, তা নাকি নৌবাহিনীর অ্যাডমিরাল ফ্র্যাঙ্ক ‘মিচ’ ব্র্যাডলির নির্দেশে করা হয়েছিল। হোয়াইট হাউস আরও বলেছে, ওই হামলা যুদ্ধ আইন অনুযায়ীই করা হয়েছিল। তবে আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, নিরস্ত্র ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো যুদ্ধাপরাধ। সেনাবাহিনীর নিজস্ব নিয়মাবলিতেও ডুবে যাওয়া নৌযানে হামলা চালানো নিষিদ্ধ।

এদিকে বৃহস্পতিবার ব্র্যাডলি মার্কিন কংগ্রেসে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে অংশ নেন। তিনি দাবি করেন, নৌকার সবাইকে হত্যা করার নির্দেশ তিনি কখনো পাননি। বৈঠক শেষে আইনপ্রণেতারা ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দেন। সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটির প্রধান রিপাবলিকান সিনেটর টম কটন অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন, ‘ব্র্যাডলি খুব পরিষ্কারভাবে বলেছেন, তাকে কখনো ‘কাউকে ছেড়ে না দেওয়ার’ বা ‘সবাইকে মেরে ফেলার’ নির্দেশ দেওয়া হয়নি।’

কিন্তু হাউস আর্মড সার্ভিসেস কমিটির ডেমোক্র্যাটিক নেতা প্রতিনিধি অ্যাডাম স্মিথ বলেন, ‘আসলে নির্দেশ ছিল— মাদক ধ্বংস করা এবং নৌকার ১১ জনকে হত্যা করা’। তার দাবি, ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে প্রথম হামলায় বেঁচে যাওয়া দুজন উলঙ্গ অবস্থায় উল্টে যাওয়া নৌকার সামনের অংশ আঁকড়ে ধরে ছিলেন এবং ঠিক সেই অবস্থায়ই দ্বিতীয় দফায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে তাদের হত্যা করা হয়।’

২ সেপ্টেম্বরের ঘটনায় নতুন তথ্য প্রকাশের আগেও মানবাধিকার সংস্থাগুলো এসব হামলাকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবে দেখছিল। তবে ট্রাম্প প্রশাসন এসব অভিযানকে ‘নার্কো-টেরোরিস্টদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অংশ’ হিসেবে তুলে ধরছে। যদিও এ বিষয়ে যুদ্ধ ঘোষণা বা সামরিক শক্তি ব্যবহারের অনুমোদন কংগ্রেস থেকে নেওয়া হয়নি।

এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলা উপকূলে সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে। ট্রাম্প বারবার হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘খুব শিগগিরই’ স্থল হামলাও হতে পারে। অন্যদিকে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো বলছেন, এই চাপ তার সরকারকে উৎখাত করার প্রচেষ্টা।