আমরা সবাই কমবেশি লেবু খেতে পছন্দ করি। লেবু পছন্দ করেন না এমন ব্যক্তির সংখ্যা খুবই কম। কিন্তু লেবু খেলেও লেবুর খোসার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে কি আমরা সবাই জানি? লেবু খাওয়ার পর খোসাকে অপ্রয়োজনীয় ভেবে ফেলে দেন সবাই। এই লেবুর খোসা যে কতটা উপকারী এটা অনেকের অজানা।
তবে লেবু খেলে যতটা উপকার পাওয়া যায়, তার থেকে অনেক বেশি পাওয়া যায় লেবুর খোসাটা খেলে। বেশকিছু গবেষণার পর এ কথা দেখা গেছে, লেবুতে যে পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে, তার থেকে প্রায় ৫-১০ গুণ বেশি ভিটামিন রয়েছে লেবুর খোসায়। সেই সঙ্গে আরও রয়েছে বিটা ক্যারোটিন, ফলেট, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়াম, যা আমাদের শরীরের জন্য বহু উপকারী।
এ ছাড়া ত্বকের উজ্জ্বলতায়ও লেবুর খোসার ভূমিকা অনন্য। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকে জমে থাকা টক্সিন উপাদান বের করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে৷ তাই নিয়মিত লেবু খাওয়ার পাশাপাশি এর খোসা খাওয়া প্রয়োজন। কারণ এটি আমাদের শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে এবং নানা সমস্যা থেকে সহজেই দেয় মুক্তি।
লেবুর খোসার উপকারিতা-
রোগ প্রতিরোধের উন্নতি ঘটে
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, লেবুতে উপস্থিত ডায়াটারি ফাইবার এবং ভিটামিন সি শরীরে প্রবেশ করলে দেহের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ফলে ছোট-বড় কোনো রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। সেই সঙ্গে সংক্রমণের মতো রোগও দূরে থাকতে বাধ্য হয়।
কিডনি স্টোনের মতো রোগ দূরে থাকে
নিয়মিত লেবুর খোসা খাওয়া শুরু করলে শরীরে সাইট্রিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। যার প্রভাবে কিডনিতে স্টোন হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে থাকে না বললেই চলে। তাই এ ধরনের রোগের খপ্পরে পরতে না চাইলে নিয়মিত লেবুর খোসা খেতে ভুলবেন না যেন।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
লেবুর খোসায় উপস্থিত ডায়াটারি ফাইবার শরীরে প্রবেশ করা মাত্র এমন কিছু পরির্বতন আসে যে, কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো রোগের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না। সেইসঙ্গে আলসার এবং অ্যাসিড রিফ্লাক্সের মতো সমস্যাও কমে যায়।
ক্যানসারের মতো মারণ রোগ দূরে পালায়
লেবুর খোসায় উপস্থিত সয়ালভেসস্ট্রল কিউ ৪০ এবং লিমোনেন্স নামে দুটি উপাদান ক্যানসার সেলের ধ্বংসে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে নিয়মিত লেবুর খোসা খেলে শরীরের অন্দরে ক্যান্সার সেলের জন্ম নেওয়ার কোনো সম্ভাবনাই থাকে না। এখানেই শেষ নয়, লেবুর খোসা খাওয়া মাত্র ব্যাকটেরিয়াল এবং ফাঙ্গাল ইনফেকশেনে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।
মুখ গহ্বরের উন্নতি ঘটে
ভিটামিন সি-এর ঘাটতি হলে মুখ গহ্বরসংক্রান্ত একাধিক রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। তাই তো নিয়মিত লেবুর খোসা খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ এতে উপস্থিত ভিটামিন সি এবং সাইট্রিক অ্যাসিড মাড়ি থেকে রক্ত পড়া, জিঞ্জিভাইটিসসহ একাধিক রোগের প্রকোপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
শরীরে রক্তের প্রবাহের উন্নতি ঘটে
লেবুর খোসা খাওয়া মাত্র শরীরের অন্দরে এমন কিছু রদবদল হতে শুরু করে যে সারা শরীরে রক্তের সরবরাহ বাড়তে শুরু করে। ফলে দেহের প্রতিটি কোণায় অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছে যাওয়ার কারণে সার্বিকভাবে শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়তে সময় লাগে না। ফলে ছোট-বড় সব ধরনের রোগই দূরে পালায়।
দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে
পেকটিন নামে একটি উপাদান প্রচুর মাত্রায় থাকায় লেবুর খোসা নিয়মিত খেলে ওজন কমার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। কারণ এই উপাদানটি শরীরে উপস্থিত অতিরিক্ত চর্বিকে ঝড়িয়ে ফেলতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে থাকে।
হার্টের ক্ষমতা বাড়ে
লেবুর খোসায় উপস্থিত পলিফেনল নামে একটি উপাদান শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। অন্যদিকে লেবুর পটাশিয়াম ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণ রাখে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হার্টের রাগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে। তাই তো যাদের পরিবারে কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ এবং হার্টের রোগের ইতিহাস রয়েছে তারা প্রতিদিনের ডায়েটে লেবুর খোসাকে অন্তর্ভুক্ত করুন। দেখবেন উপকার পাবেন।
লিভারের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়
বেশকিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত লেবুর খোসা খাওয়া শুরু করলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ এত মাত্রায় বেড়ে যায় যে, লিভারের অন্দরে জমে থাকা টক্সিক উপাদানেরা বেরিয়ে যেতে শুরু করে। ফলে শরীরে এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটির কর্মক্ষমতা বাড়তে সময় লাগে না।
হাড় শক্তপোক্ত হয়ে ওঠে
প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি এবং ক্যালসিয়াম থাকার কারণে লেবুর খোসা খাওয়া শুরু করলে ধীরে ধীরে হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটতে শুরু করে। সেইসঙ্গে ইনফ্লেমেটরি পলিআর্থ্রাইটিস, অস্টিওপরোসিস এবং রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।
ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, লেবুর খোসার অন্দরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের নিচে জমে থাকা টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ত্বকের বয়স কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে বলিরেখা যেমন কমে, তেমনি ত্বক টানটান হয়ে ওঠে। এই কারণেই তো বয়স ৩০-এর কোটা পরলেই প্রতিদিন লেবুর খোসা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।
হজম ক্ষমতার উন্নতি
ফাইবার সমৃদ্ধ যেকোনো খাবার হজম ক্ষমতার উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর এই উপাদানটি প্রচুর পরিমাণে রয়েছে লেবুর খোসায়। তাই তো বদহজম থেকে গ্যাস-অম্বল, যেকোনো ধরনের হজমসংক্রান্ত সমস্যায় এই প্রকৃতিক উপাদানটি দারুণ উপকারে আসে।
দুর্গন্ধ দূর করতে
লেবুর খোসাগুলো প্রায়ই ফ্রিজ, বদ্ধ ড্রয়ার, ট্র্যাশ ক্যান ইত্যাদির ভেতরে তৈরি হওয়া দুর্গন্ধ দূর করে দিতে পারে। লেবুর খোসা আপনার মাইক্রোওয়েভ, কাটার বোর্ড এবং অন্যান্য ব্যবহার্য পাত্র পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে জাদুর মতো কাজ করতে পারে। বাটির পানিতে কয়েকটি লেবুর খোসা রেখে বাটিটি কিছু সময়ের জন্য আপনার মাইক্রোওয়েভের ভেতরে রাখুন। এটি মাইক্রোওয়েভের ভেতরের দুর্গন্ধকে সতেজ গন্ধে পরিণত করবে। কাটার বোর্ডকে জীবাণুমুক্ত করার জন্য লেবুর খোসার সাথে লবণ মিশিয়ে ঘষুন। তারপরে ধোয়ে ফেলার পরে আপনি একটি নতুন বোর্ড পাবেন।
রুম ফ্রেশনার হিসেবে
লেবুর খোসা ব্যবহার করে আপনি ঘরে তৈরি প্রাকৃতিক রুম ফ্রেশনার তৈরি করতে পারবেন। শুকনো ফুল এবং প্রয়োজনীয় তেলের সাথে লেবুর খোসা মেশান। এবার এ সাইট্রাস-সুগন্ধযুক্ত মিশ্রণটি একটি পরিষ্কার স্প্রে বোতলে রাখুন। এভাবে আপনি টাকা খরচ না করে আপনার ঘরকে সবসময় সুবাসিত রাখতে পারেন।
গৃহস্থালির কাজে লেবুর খোসার ব্যবহার
আপনার ঘরের আসবাব, মেঝে এবং অন্যান্য ব্যবহার্য তৈজসপত্র জীবাণুমুক্ত রাখতে আপনি পরিষ্কারক হিসেবে লেবুর খোসা ব্যবহার করতে পারেন।
আপনার মতামত লিখুন :