গ্রীষ্মের তীব্র তাপে অতিষ্ঠ জনজীবন। প্রচণ্ড রোদে দীর্ঘ সময় কাজ করলে বা শারীরিক পরিশ্রম করলে শরীর অতিরিক্ত উত্তপ্ত হয়ে পড়তে পারে।
সাধারণত মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট। কিন্তু যখন এই তাপমাত্রা বেড়ে ১০৪ ডিগ্রির ওপরে চলে যায়, তখন শরীরে গুরুতর প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
রক্তচাপ কমে যায়, মাথা ঘোরায়, এমনকি ব্যক্তি অচেতনও হয়ে যেতে পারেন। চিকিৎসা না পেলে এটি জীবনঘাতী হয়ে উঠতে পারে। এই অবস্থা চিকিৎসা পরিভাষায় ‘হিট স্ট্রোক’ নামে পরিচিত।
আমাদের মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস অংশটি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। শরীর অতিরিক্ত গরম হয়ে উঠলে এটি ঘাম ও রক্তনালির প্রসারণের মাধ্যমে শরীর ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করে।
কিন্তু যখন গরম খুব বেশি হয়, কিংবা কেউ অনেকক্ষণ রোদে থাকে অথবা ভারী পরিশ্রম করে, তখন শরীর নিজের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়। এ সময়ই হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে।
হিট স্ট্রোক কাদের বেশি হয়
১. বৃদ্ধ ও শিশুদের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণক্ষমতা কম থাকে, তাই তাদের হিট স্ট্রোক বেশি হয়।
২. যারা প্রচণ্ড গরমে দীর্ঘ সময় শারীরিক পরিশ্রম করে।
৩. কিছু ওষুধ নিয়মিত সেবন (প্রস্রাব বেশি হওয়ার ওষুধ অথবা মানসিক রোগের ওষুধ)।
হিট স্ট্রোকের লক্ষণসমূহ

হিট স্ট্রোকের কিছু সাধারণ লক্ষণ দ্রুত চিনতে পারলে বিপদ এড়ানো সম্ভব। লক্ষণগুলো হলো-
১. শরীরের তাপমাত্রা অত্যধিক বেড়ে যাওয়া (১০৪°F বা তার বেশি)
২. ত্বক শুকনো ও লাল হয়ে যাওয়া (ঘাম না হওয়াও একটি লক্ষণ)
৩. বমিভাব বা বমি
৪. মাথা ঘোরা বা দুর্বল লাগা
৫. দ্রুত ও অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন
৬. শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা
৭. বিভ্রান্তি, কথা জড়িয়ে যাওয়া বা অচেতন হয়ে যাওয়া
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
গ্রীষ্মের দাবদাহে হিট স্ট্রোক এড়াতে কিছু সহজ নিয়ম মেনে চললে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব।
১. প্রচণ্ড রোদে না বেরোনোই ভালো। বিশেষ করে দুপুর ১২টা থেকে ৪টার মধ্যে রোদে না যাওয়াই উত্তম।
২. ঢিলেঢালা ও হালকা রঙের কাপড় পরুন ,যাতে শরীর ঘামে ও বাতাস চলাচল করতে পারে।
৩. প্রচুর পানি পান করুন। ঘাম ঝরলে শরীরের তরল ঘাটতি পূরণ করতে দিনে অন্তত ৮–১০ গ্লাস পানি পান করুন।

৪. ক্যাফেইন ও মদ্যপান এড়িয়ে চলুন। এগুলো শরীরে পানি শূন্যতা সৃষ্টি করে।
৫. সরাসরি রোদ এড়াতে ছাতা, সানগ্লাস ও টুপি ব্যবহার করুন।
৬. খাবারের প্রতি সচেতন থাকুন। হালকা ও সহজপাচ্য খাবার খান। তেল-মসলাযুক্ত খাবার কম খান।
৭. ঘরের ভেতরে থাকলেও সুরক্ষা দরকার। দরজা-জানালায় পর্দা ব্যবহার করুন, ফ্যান বা এসি চালিয়ে রাখুন।
হিট স্ট্রোক হলে কী করবেন
যদি আপনি বা আশপাশের কেউ হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হন, দ্রুত নিচের পদক্ষেপ নিন
১. ব্যক্তিকে ঠান্ডা জায়গায় সরিয়ে নিন (ছায়া, ঘরের ভেতর বা এসির নিচে)।
২. ঘাম না থাকলে শরীরে ঠান্ডা পানি ছিটান বা ভেজা কাপড় দিন।
৩. যদি সে সচেতন অবস্থায় থাকে ঠান্ডা পানি পান করান।
৪. শরীর ঠান্ডা রাখতে কপাল, গলা ও বগলের নিচে বরফ বা ঠান্ডা পানি ব্যবহার করুন।
৫. দ্রুত চিকিৎসা নিন। সম্ভব হলে অ্যাম্বুলেন্স ডাকুন বা নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যান।
আপনার মতামত লিখুন :