মৌসুমি ফল ও সবজি থেকে যদি আমাদের দৈনিক পুষ্টি এবং বিভিন্ন রোগের পথ্যের চাহিদা পূরণ হয়ে যায় তাহলে আমরা বিভিন্ন রোগে কম আক্রান্ত হব। এমন অনেক মৌসুমি ফল ও সবজি আছে যা খেলেও উপকারিতাগুলো আমরা জানি না। তাই এসবের গুণাগুণগুলো জেনে-বুঝে খেলে অনেক রোগাক্রান্ত অবস্থায়ও ভালো থাকতে পারব।
জেনে অবাক হবেন, কাঁকরোলের গাছ থেকে শুরু করে পাতা, শেকড়, ফল ও বীজ সবকিছুই আমাদের দেহের জন্য উপকারী। এতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। সর্বোচ্চ পরিমাণ ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ আছে। বিভিন্ন খনিজপদার্থ যেমন- আয়রন, জিঙ্ক, পটাশিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম ছাড়াও এটি ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ক্রোমিয়ামের ভালো উৎস। এতে আরও থাকে ফাইবার, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, লুটেইন, জিয়াজেন্থিন যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। বিশেষজ্ঞরা বলেন, কাঁকরোলে টমেটোর চেয়ে ৭০ গুণ বেশি লাইকোপিন থাকে, গাজরের চেয়ে ২০ গুণ বেশি বিটা ক্যারোটিন থাকে এবং ভুট্টার চেয়ে ৪০ গুণ বেশি জিয়াজেন্থিন থাকে। তাই স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় কাঁকরোল রাখা ভালো।
কাঁকরোলের কিছু উপকারিতা
দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক
কাঁকরোলে বিটা ক্যারোটিন থেকে শুরু করে একাধিক উপকারী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে। আর এ উপাদানগুলো আপনার চোখ ভালো রাখতে সহায়ক। এ ছাড়া নিয়মিত এ সবজি খেলে বয়সজনিত চোখের সমস্যাও এড়িয়ে যাওয়া যাবে।
ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে
আপনার প্রতিদিনের খাবারে কাঁকরোল রাখুন। এ সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। আর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, কিন্তু দেহে ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি আটকে দিতে পারে। এতে সুস্থ থাকার পথ প্রশস্ত হবে।
কোলেস্টেরল কমায়
রক্তে জমে থাকা মোমজাতীয় পদার্থ হলো কোলেস্টেরল। রক্তে এ উপাদানের মাত্রা বাড়লে একাধিক জটিল অসুখ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিদিন পাতে রাখুন কাঁকরোল। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত কাঁকরোল খেলে রক্তে উপস্থিত খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল-এর মাত্রা বহুগুণে কমে যায়।
অ্যানিমিয়া দূর করে
কাঁকরোলে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং ফোলিক অ্যাসিড। আর এ দুই উপাদান কিন্তু হিমোগ্লোবিনের সংখ্যা বাড়াতে সিদ্ধহস্ত। ফলে নিয়মিত কাঁকরোল খেলে অ্যানিমিয়ার প্রকোপ কমবে।
মন ভালো রাখে কাঁকরোল
অত্যধিক চাপের মধ্যে থাকতে থাকতে আমাদের মনে বাসা বাঁধছে দুশ্চিন্তা, উৎকণ্ঠা এবং অবসাদ। আর এ ধরনের মানসিক অসুখ কিন্তু একাধিক জটিল শারীরিক সমস্যা ডেকে আনতে পারে। তাই মনের খেয়াল রাখাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। আর এই কাজে আপনাকে সাহায্য করবে কাঁকরোল। আসলে এতে এমন কিছু উপাদান উপস্থিত রয়েছে, যা মস্তিষ্কে খুশির হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
ওজন কমাতে কাঁকরোল
এতে কমলা-লেবু থেকে ৪০ শতাংশ বেশি ভিটামিন ‘সি’ থাকে। ভিটামিন ‘সি’ শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট বার্ন করতে সাহায্য করে। এতে থাকা ফাইবার অনেকক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে এবং এটি লো ক্যালরির সবজি। ১০০ গ্রাম কাঁকরোলে মাত্র ১৭ ক্যালরি থাকে। তাই ওজন কমাতে অবশ্যই কাঁকরোল খেতে পারেন। হজম শক্তিও বাড়ায় এটি।
তারুণ্য ধরে রাখে
কোষের কাজকে উদ্দীপিত করে এবং স্ট্রেস কমানোর মাধ্যমে ত্বকের বয়স বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে ধীর করতে সাহায্য করে কাঁকরোল। কারণ এতে থাকে বিভিন্ন ধরনের ফ্ল্যাভনয়েড। যেমন- বিটা ক্যারোটিন, আলফা ক্যারোটিন, লুটেইন, জিয়াজেন্থিন ওকোলাজেন থাকে যা অ্যান্টি অ্যাজিং উপাদান হিসেবে কাজ করে। ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তেও বাধা দেয়। কাঁকরোলের জুস খেলে ত্বক থেকে বয়সের ছাপ দূর হতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কাঁকরোল
কাঁকরোলের রয়েছে হাইপোগ্লাইসেমিক গুণাগুণ। এটি অগ্নাশয়ের বিটাসেলকে সুরক্ষিত রাখে ও পুনর্গঠনে সাহায্য করে। এছাড়া এটি ইন্সুলিন নিঃসরণ ও সংবেদনশীলতা বাড়ায়, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কম ক্যালরির ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার; তাই এটি রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এজন্য ডায়াবেটিস কমাতে কাঁকরোল ভাজি করে বা চাইলে কচি কাঁকরোল জুস করেও খেতে পারেন।
কিডনির পাথর নির্মূলে
কিডনির পাথর নির্মূলেও কাঁকরোল খুবই উপকারী। ১ গ্লাস পানি বা দুধে ১০ গ্রাম কাঁকরোল বাটা মিশিয়ে নিয়মিত খেলে কিডনি ও ব্লাডারের পাথর দূর হয়।
হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়
কাঁকরোল হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাকে কমিয়ে দিতে পারে। গবেষণায় জানা যায়, যাদের শরীরে লাইকোপিনের মাত্রা বেশি তাদের থেকে যাদের শরীরে এর মাত্রা কম থাকে, তাদের ৫০ শতাংশ বেশি হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা রয়েছে। কাঁকরোল খুব সহজেই এ সমস্যা দূর করতে পারে। কারণ এটি শরীরের লাইকোপেনের মাত্রা ঠিক রাখতেও সাহায্য করে।