পেয়ারা আমাদের দেশীয় ফলের তালিকায় অন্যতম। সারা বছরই সহজলভ্য এই ফলটি শুধু সুস্বাদুই নয়, বরং পুষ্টিগুণে ভরপুর। পেয়ারায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, আঁশ, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং নানান উপকারী খনিজ। বিশেষ করে খালি পেটে পেয়ারা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে শরীর আরও বেশি উপকৃত হয়। এটি দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে সক্রিয় করে তুলতে সাহায্য করে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, খালি পেটে পেয়ারা খাওয়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা-
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
খালি পেটে পেয়ারা খেলে শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন সি মেলে, যা সারা দিনের জন্য দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। নিয়মিত খেলে সর্দি-কাশি, ভাইরাল ইনফেকশন প্রতিরোধে সহায়ক।
২. হজমশক্তি উন্নত করে
পেয়ারার আঁশ পাচনতন্ত্রের জন্য খুবই উপকারী। খালি পেটে পেয়ারা খেলে হজমের গতি বাড়ে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। এটি অন্ত্রের স্বাস্থ্যও উন্নত করে।
৩. রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে
পেয়ারার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ায় এটি খালি পেটে খাওয়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও ভালো। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
৪. ত্বক সতেজ ও উজ্জ্বল রাখে
পেয়ারার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি ত্বকের কোষ পুনর্গঠন করে, বলিরেখা কমায় এবং ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল রাখে।
৫. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে
খালি পেটে পেয়ারা খেলে পেট ভরা অনুভূতি হয়, ফলে সারা দিনে অতিরিক্ত খাওয়া কমে। এর ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।
৬. হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
পেয়ারার পটাশিয়াম ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণ হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী। এটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
কিভাবে খালি পেটে পেয়ারা খাবেন
১. সকালে ঘুম থেকে উঠে পানি পান করুন
প্রথমে এক বা দুই গ্লাস কুসুম গরম পানি পান করুন। এতে পাচনতন্ত্র সক্রিয় হবে। এরপর ১৫-২০ মিনিট পরে পেয়ারা খান।
২. পরিষ্কার করে ধুয়ে খান
পেয়ারা ভালোভাবে ধুয়ে নিন। চাইলে লবণ পানিতে ৫ মিনিট ভিজিয়ে তারপর ধুয়ে নিতে পারেন—এতে কীটনাশক বা ময়লা দূর হয়।
৩. খোসাসহ খাওয়া ভালো
পেয়ারার খোসায় রয়েছে প্রচুর আঁশ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। তাই ভালো করে ধুয়ে খোসাসহ খেলে আরও বেশি উপকার পাবেন। তবে যদি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেশি থাকে, খোসা ছাড়িয়ে খেতে পারেন।
৪. একসাথে বেশি খাবেন না
খালি পেটে একবারে বড় পেয়ারা ১টা বা মাঝারি পেয়ারা ১-২টা খাওয়া যথেষ্ট। অতিরিক্ত খেলে পেটে গ্যাস বা অম্বলের সমস্যা হতে পারে।
৫. ধীরে ধীরে চিবিয়ে খান
পেয়ারার আঁশ ভালোভাবে চিবিয়ে খাওয়া উচিত, এতে হজম সহজ হয় এবং শরীর পুষ্টিগুণ ভালোভাবে গ্রহণ করে।
৬. অন্য ভারী খাবার থেকে বিরত থাকুন
পেয়ারা খাওয়ার পর অন্তত ২০-৩০ মিনিট ভারী খাবার খাবেন না, যাতে ফলের পুষ্টিগুণ ঠিকমতো শোষিত হয়।
পেয়ারা খাওয়ার সময় সতর্কতা
১. অতিরিক্ত পরিমাণে খাবেন না
পেয়ারায় প্রচুর আঁশ থাকে—অতিরিক্ত খেলে পেটে গ্যাস, ফেঁপে যাওয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। প্রতিদিন ১-২টি মাঝারি আকারের পেয়ারা যথেষ্ট।
২. খুব কাঁচা বা খুব পাকা পেয়ারা খাবেন না
খুব কাঁচা পেয়ারা শক্ত ও টানটান হয়, এটি খেলে পেটে গ্যাস বা ব্যথা হতে পারে। আবার খুব বেশি পাকা পেয়ারাও অতিরিক্ত মিষ্টি হয়ে রক্তে শর্করার ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। মাঝারি পাকা পেয়ারা সেরা।
৩. খাওয়ার আগে ভালোভাবে ধুয়ে নিন
পেয়ারার গায়ে মাটি, ধুলো বা কীটনাশক লেগে থাকতে পারে। খাওয়ার আগে অবশ্যই লবণ-পানি বা স্বচ্ছ পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিন।