বাঙালির কাছে ইলিশ শুধু একটি মাছ নয়, এটি একটি আবেগ, একটি ঐতিহ্য। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, অনেক সময় অসাধু ব্যবসায়ীরা ইলিশের নামে সার্ডিন বা চন্দনা মাছ বিক্রি করে ভোক্তাদের প্রতারিত করছে।
এই প্রতিবেদনে আমরা জানবো সার্ডিন ও ইলিশের মধ্যে পার্থক্য।
ইলিশের ছদ্মবেশে ‘সার্ডিন বা চন্দনা’
আসল ইলিশের মতোই দেখতে এই মাছটির বৈজ্ঞানিক নাম সার্ডিন (Sardine)। এটি স্থানীয় জেলেদের কাছে চন্দনা/চান্দনা, যাত্রিক, টাকিয়া, পানসা, খায়রা ও সাগর চাপিলা নামে পরিচিত।
একসময় মেডিটারেনিয়ান দ্বীপ সার্ডিনিয়ার আশেপাশে এই মাছের প্রাচুর্য ছিল বলেই এর এমন নামকরণ।
এই সার্ডিন মাছ বেশিরভাগ সময় সাগরপথে আমদানি করা হয় এবং এতে ফরমালিন ব্যবহারের অভিযোগও রয়েছে।
ফলে ইলিশ ভেবে যে মাছটি আমরা কিনছি, তা স্বাদে ও গন্ধে আসল রুপালি ইলিশের ধারেকাছেও নেই। এবং এই নকল ইলিশ স্বাস্থ্যের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
কেন ইলিশ মাছ এত জনপ্রিয়?
মাছের রাজা ইলিশ কেবল তার অনন্য স্বাদের জন্যই সেরা নয়, এর পুষ্টিগুণও প্রচুর। এতে রয়েছে ভিটামিন, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রন ও সেলেনিয়ামের মতো গৌণ খনিজ লবণ।
এছাড়াও, এটি ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের এক প্রাকৃতিক উৎস, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
বর্ষা মৌসুমে নদীর ইলিশের স্বাদ সবচেয়ে ভালো হলেও, সারা বছরই কমবেশি ইলিশ বাজারে পাওয়া যায়।
তবে ইলিশের স্বাদ তার প্রাপ্তিস্থলের ওপর নির্ভর করে যেমন, পদ্মার ইলিশের সাথে বরিশালের ইলিশের স্বাদে ভিন্নতা দেখা যায়।
সার্ডিন ও ইলিশ চেনার সহজ উপায়
ভোক্তা হিসেবে আমাদের সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। ইলিশ কেনার সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে আসল ইলিশ চিনে প্রতারণা থেকে বাঁচা সম্ভব।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তথ্য অনুসারে সার্ডিন ও ইলিশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য নিচে তুলে ধরা হলো:
দেহের আকৃতি
সার্ডিন: দেহ পার্শ্বীয়ভাবে পুরু, পিঠের দিকের চেয়ে পেটের দিক অপেক্ষাকৃত উত্তল ও চ্যাপ্টা।
ইলিশ: দেহ পার্শ্বীয়ভাবে পুরু, তবে পিঠের ও পেটের দিক প্রায় সমভাবে উত্তল।
দৈর্ঘ্য
সার্ডিন/চন্দনা: সাধারণত ৭ সেন্টিমিটার থেকে ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
ইলিশ: বেশ বড় (প্রায় ৭৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত) হয়ে থাকে।
মাথার আকৃতি
সার্ডিন: মাথার আকৃতি ছোট ও অগ্রভাগ ভোতা।
ইলিশ: মাথার আকৃতি লম্বাটে ও অগ্রভাগ সূচালো।
পাখনার রং
সার্ডিন: পৃষ্ঠীয় পাখনার অগ্রভাগে এবং পুচ্ছ পাখনার কিনারা ঘোলাটে।
ইলিশ: পৃষ্ঠীয় পাখনার অগ্রভাগে এবং পুচ্ছ পাখনার কিনারা অনেটা সাদাটে।
চোখের আকৃতি
সার্ডিন: চোখের আকৃতি তুলনামূলকভাবে বড়।
ইলিশ: চোখের আকৃতি তুলনামূলকভাবে ছোট।
আইশের সংখ্যা (পার্শ্বরেখা বরাবর)
সার্ডিন: ৪০ থেকে ৪৮টি।
ইলিশ: ৪০ থেকে ৫০টি।
কিল বোন/স্কুইটস
সার্ডিন: ২৯টি থেকে ৩৪টি।
ইলিশ: ৩০ থেকে ৩৩টি।
শরীরের ফোঁটা
সার্ডিন: পৃষ্ঠীয় পাখনার উৎসে একটি কালো ফোঁটা রয়েছে।
ইলিশ: কানকুয়ার পরে একটি বড় কালো ফোঁটা এবং পরে অনেকগুলো ছোট কালো ফোঁটা থাকে।
মাথার দৈর্ঘ্যের অনুপাত
সার্ডিন: ২২ থেকে ৩২ শতাংশ।
ইলিশ: ২৮ থেকে ৩২ শতাংশ।
ইলিশ মাছ কেনার সময় উপরের পার্থক্যগুলো মনে রাখলে আমরা প্রতারণা এড়াতে পারি এবং আসল ইলিশের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ উপভোগ করতে পারি।