ঢাকা রবিবার, ০৪ মে, ২০২৫

ফেসবুকে নিষিদ্ধ যত ছবি

ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ৪, ২০২৫, ০৪:০৪ পিএম
ফেসবুক লোগো। ছবি: সংগৃহীত

ফেসবুক এখন আমাদের জীবনের বড় অংশ। এ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের রোজকার জীবনের ছবি আপলোড করা, স্মৃতি শেয়ার করা খুব সাধারণ একটি ব্যাপার। 

তবে আমরা ফেসবুকে যাই প্রকাশ করি না কেন তা প্রকাশের ক্ষেত্রে আমাদের মানতে হয় মেটার ফেসবুকের কমিউনিটি মানদণ্ড। 

কিছু ছবি আছে যা ফেসবুকে দেওয়া যায় না। ব্যবহারকারীরা যেমন নিজেদের জীবনের নানা মুহূর্ত ভাগ করে নেওয়ার স্বাধীনতা উপভোগ করেন, তেমনই কিছু সীমাবদ্ধতা বজায় রাখা হয়েছে যাতে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, সম্মান ও সামাজিক শালীনতা রক্ষার পাশাপাশি সামাজিক সীমাও লঙ্ঘন না হয়।

ফেসবুকের কমিউনিটি মানদণ্ড/স্ট্যান্ডার্ড

ফেসবুকের ছবি নিষিদ্ধ করার নীতির ভিত্তি হলো এর কমিউনিটি মানদণ্ড। এটি এমনভাবে তৈরি যাতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা ও সম্মান একইসঙ্গে বজায় থাকে। 

ফেসবুকের কমিউনিটি মানদণ্ড অনুযায়ী যেসব ছবি আমাদের জন্য আপলোড করা মানা, তা নিচে তুলে ধরা হলো। এই নিয়মগুলো না মানলে মেটা বন্ধ করেও দিতে পারে আপনার প্রিয় অ্যাকাউন্টটি। 

How to Use the Facebook Restricted List to Protect Your Professional Life

উলঙ্গতা ও যৌন কন্টেন্ট

ফেসবুক স্পষ্টভাবে যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ ছবি, পর্নোগ্রাফি এবং যৌন কার্যকলাপ প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

তবে সব ধরনের নগ্নতা নিষিদ্ধ নয়। শিল্প, শিক্ষা এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত নগ্ন ছবি। স্তন্যদান, অস্ত্রোপচারের পর ছবি বা ভাস্কর্যের ছবি সাধারণত অনুমোদন দেয় ফেসবুক। তবে কখনো কখনো অটোমেটিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ভুল করে এসব ছবিও সরিয়ে ফেলে।

সহিংসতা ও গ্রাফিক কন্টেন্ট

চরম সহিংসতা, রক্তাক্ত দৃশ্য বা শারীরিক আঘাতের ছবি সাধারণত সরিয়ে ফেলা হয় যাতে কেউ মানসিক আঘাত না পান বা সহিংসতার প্রতি আকৃষ্ট না হন। এ তালিকায় রয়েছে:

# নির্যাতনের দৃশ্য
# শিরচ্ছেদ বা অঙ্গচ্ছেদের ছবি
# সহিংস ঘটনায় মৃতদেহ
# পশু নির্যাতনের দৃশ্য

তবে সংবাদ বা সচেতনতামূলক প্রয়োজনে কিছু ছবি আবছা করে সতর্কবার্তাসহ দেখানো যেতে পারে।

ঘৃণামূলক বক্তব্য ও চরমপন্থা

যে কোনও ছবি যা ঘৃণাত্মক গোষ্ঠী, সন্ত্রাসবাদী সংগঠন অথবা সহিংস ও বৈষম্যমূলক মতাদর্শকে সমর্থন করে, তা ফেসবুকের জন্য নিষিদ্ধ। এ তালিকায় রয়েছে:

# নাৎসি প্রতীক বা বর্ণবাদী চিহ্ন
# সন্ত্রাসবাদী প্রচারচিত্র
# এমন ছবি যাতে জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ বা যৌন অভিমুখিতার ভিত্তিতে মানুষকে অপমান করা হয়

এমনকি রূপান্তরিত বা ব্যঙ্গাত্মক ছবি যেগুলো অপমানজনক বক্তব্য বহন করে, সেগুলিও সরিয়ে ফেলে মেটা।

হয়রানি ও নিপীড়ন

যেসব ছবি কাউকে অপমান, লাঞ্ছনা বা হয়রানির উদ্দেশ্যে আপলোড করা হয়, যেমন ব্যক্তিগত গোপন ছবি, বিকৃত ছবি, বা অপমানজনক কনটেন্ট- তা নিষিদ্ধ করে দেয় ফেসবুক।

ভুক্তভোগীরা এসব ছবি রিপোর্ট করতে পারেন এবং অনেক ক্ষেত্রেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও এতে যুক্ত হতে পারে।

শিশু নির্যাতন ও শোষণ

শিশুদের বিষয়ে ফেসবুকের নীতি একেবারেই কঠোর। শিশুদের যেকোনো ধরণের নগ্নতা, শারীরিক নির্যাতন বা যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ ছবি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, প্রেক্ষাপট যাই হোক না কেন।

এমনকি নির্দোষ ছবি- যেমন শিশুর গোসলের দৃশ্যও কখনো কখনো নিরাপত্তার কারণে সরিয়ে ফেলে ফেসবুক।

ভুল তথ্য ও রূপান্তরিত মিডিয়া

সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ না হলেও, ভুল তথ্য বা বিকৃত ছবি এখন ফেসবুকের নজরে রয়েছে। বিশেষত নির্বাচন, জনস্বাস্থ্য বা সমাজিক অস্থিরতার ক্ষেত্রে।

এ ধরনের ছবি যাচাইয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়, এবং প্রয়োজনে সরিয়ে দেওয়া হয় বা কম প্রদর্শিত হয়।

নিয়ন্ত্রিত পণ্য ও সেবা

অবৈধ বা নিয়ন্ত্রিত পণ্যের প্রচার করে এমন ছবি- যেমন অস্ত্র, মাদক বা নকল পণ্যের প্রচার ফেসবুকে নিষিদ্ধ। 

উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনও ছবি আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রির উদ্দেশ্যে প্রকাশিত হয় এবং সেটি আইনসম্মত না হয়, তবে তা সরিয়ে ফেলা হবে।

ফেসবুক ব্যবহারকারীদের জন্য মতপ্রকাশের একটি শক্তিশালী মাধ্যম হলেও, এটি কিছু নিয়ম ও দায়িত্ব দ্বারা পরিচালিত হয়। কোন ছবি পোস্ট করা যাবে আর কোনটা নয়, তা বোঝা জরুরি যাতে ব্যবহারকারীরা সচেতন থাকেন এবং অপ্রত্যাশিত সমস্যায় না পড়েন।

বর্তমান যুগে, যখন একটি ছবি মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে, তখন মনে রাখা দরকার- প্রত্যেকটি ছবি একটি বার্তা বহন করে এবং তার একটি ফলাফল থাকে।