মধ্য চীনের হুনান প্রদেশের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ ডিফেন্স টেকনোলজির (এনইউডিটি) একটি রোবোটিক্স ল্যাবরেটরি গোপন সামরিক অভিযানের জন্য মশার আকৃতির ড্রোন তৈরি করেছে।
এনইউডিটি’র গবেষকরা চায়না সেন্ট্রাল টেলিভিশনের সামরিক চ্যানেল সিসিটিভি ৭-এ সম্প্রচারিত একটি প্রতিবেদনে বিভিন্ন ধরণের রোবট, যেমন মানবিক মেশিন থেকে শুরু করে চোখে দেখা যায় না এমন ছোট ড্রোনের উপর তাদের কাজ দেখিয়েছেন।
এনইউডিটি’র শিক্ষার্থী লিয়াং হেক্সিয়াং তার আঙ্গুলের মাঝে ড্রোনটি ধরে সিসিটিভি-কে বলেন, ‘আমার হাতে একটি মশার মতো রোবট। এই ধরণের ক্ষুদ্র বায়োনিক রোবট যুদ্ধক্ষেত্রে তথ্য পুনরুদ্ধার এবং বিশেষ মিশনের জন্য বিশেষভাবে উপযুক্ত।’
মনুষ্যবিহীন আকাশযানের ভিডিওতে, পাতার মতো কাঠামোযুক্ত দুটি ছোট ডানা কাঠির আকৃতির ড্রোন বডির পাশে সংযুক্ত করা হয়েছিল এবং তিনটি লোম-পাতলা ‘পা’ও ছিল।
রোবোটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অগ্রগতি তুলে ধরে প্রতিবেদনে স্মার্টফোনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত একটি প্রোটোটাইপও দেখানো হয়েছে, যার চারটি ডানা রয়েছে, দুটি শরীরের প্রতিটি পাশে অনুভূমিকভাবে চলমান।
নতুন ধরনের ক্ষুদ্র ড্রোন তৈরি করা বেশ চ্যালেঞ্জের কাজ। কারণ এতে সেন্সর, পাওয়ার ডিভাইস, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাসহ নানা যন্ত্রপাতি ছোট একটি জায়গায় বসাতে হয়। এজন্য মাইক্রো যন্ত্রাংশ তৈরির প্রযুক্তি, পদার্থবিজ্ঞান ও বায়োনিক্স এসব খাতে একসঙ্গে কাজ করতে হয়।
নরওয়েতে তৈরি ‘ব্ল্যাক হর্নেট’ নামে তালুর আকারের এক ধরনের হেলিকপ্টার-আকৃতির ছোট ড্রোন এখন অনেক দেশের সেনাবাহিনী ব্যবহার করছে।
এর নতুন সংস্করণ ‘ব্ল্যাক হর্নেট ৪’-এর জন্য মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর থেকে এ বছর ‘ব্লু ইউএএস রিফ্রেশ’ পুরস্কার পেয়েছে এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেলিডাইন এফএলআইআর ডিফেন্স। নতুন মডেলটিতে ব্যাটারির স্থায়িত্ব, খারাপ আবহাওয়া মোকাবেলা এবং দীর্ঘ দূরত্বে যোগাযোগের সব সুবিধা যোগ হয়েছে, যা সাধারণত মাইক্রো ড্রোনের বড় চ্যালেঞ্জ।
সৈন্যরা আশপাশের পরিবেশ নিরাপদ কি না, তা বোঝার জন্য এই ধরনের ছোট ড্রোন ব্যবহার করে। ‘ব্ল্যাক হর্নেট’ ড্রোনে থাকা ক্যামেরা ও সেন্সরের মাধ্যমে এটি ভিডিও ও তথ্য পাঠায়। এটি হাতে ধরা ছোট একটি যন্ত্র দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
২০১৯ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা তাদের ‘রোবোবি’ প্রকল্পের আপডেট প্রকাশ করেন। দেখতে এটি অনেকটা চীনের এনইউডিটির মাইক্রোড্রোনের মতো।
হার্ভার্ডের ওয়াইস ইনস্টিটিউট জানায়, কিছু রোবোবি পানির নিচে সাঁতার কাটতে পারে, আবার কিছু স্থির বিদ্যুৎ ব্যবহার করে কোনো পৃষ্ঠে বসে থাকতে পারে। এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে নজরদারি, কৃষিকাজ বা পরিবেশ পর্যবেক্ষণের মতো কাজে ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে।
২০২১ সালে মার্কিন বিমান বাহিনীও জানায়, তারা তাদের নিজস্ব ক্ষুদ্র ড্রোন তৈরি করছে। তবে এরপর সে বিষয়ে আর কোনও তথ্য প্রকাশ পায়নি।
এই ছোট রোবট প্রযুক্তি শুধু সেনাবাহিনীর জন্য নয়—চিকিৎসা গবেষণাতেও এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। চিকিৎসকরা এখন এমন মাইক্রো ও ন্যানো রোবট নিয়ে কাজ করছেন, যেগুলো থেরাপি, অপারেশন, রোগ নির্ণয় কিংবা শরীরের ভিতরের ছবি তুলতে কাজে লাগবে।