বর্তমানে বাংলাদেশে ইউটিউব একটি গুরুত্বপূর্ণ অনলাইন আয়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের অনেকেই ইউটিউব চ্যানেল খুলে ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে নিয়মিত আয় করছেন। তবে অধিকাংশ নতুন ক্রিয়েটর ইউটিউব আয়ের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত নন।
সাধারণ ধারণা হলো- ভিউ যত বেশি, আয়ও তত বেশি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ইউটিউবের আয় নির্ভর করে মূলত সিপিএম (Cost per Mille) বা প্রতি হাজার ভিউয়ে কত অর্থ পাওয়া যাচ্ছে, তার ওপর।
সিপিএম কেন গুরুত্বপূর্ণ?
সিপিএম হচ্ছে সেই পরিমাণ অর্থ, যা বিজ্ঞাপনদাতা ইউটিউবে প্রতি ১,০০০ বিজ্ঞাপন বা ভিউ দেখানোর জন্য খরচ করে। ইউটিউব সেই খরচের একটি অংশ ভিডিও নির্মাতাকে প্রদান করে। এটি নির্ধারণ করে দেয়- আপনার ভিডিও ১,০০০ বার দেখা হলে আপনি কত টাকা আয় করবেন।
গড় হিসাবে, বাংলাদেশে ইউটিউব ভিডিওর সিপিএম প্রায় $0.50 ডলার, অর্থাৎ প্রায় ৬১ টাকা প্রতি হাজার ভিউ (১ ডলার= ১২২ টাকা ধরে)।
ভিউয়ের মান
সব ভিউ সমান নয়। ইউটিউবে আয়ের ক্ষেত্রে শুধু ভিউয়ের সংখ্যা নয়, ভিউয়ের মান বা গুণগত দিক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। একই সংখ্যক ভিউ থেকেও কারো আয় বেশি হয়, আবার কারো কম- এই পার্থক্যের কারণ নিচে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো।
১. কনটেন্টের বিষয়বস্তু
সব ধরনের ভিডিও থেকে সমান আয় হয় না। ফিন্যান্স, প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও আইনসংক্রান্ত ভিডিও থেকে সিপিএম অনেক বেশি পাওয়া যায়। কারণ এসব বিষয়ের ওপর বিজ্ঞাপনদাতারা বেশি টাকা ব্যয় করে। বিপরীতে, ব্লগ, গান বা কমেডি ভিডিওর সিপিএম তুলনামূলকভাবে কম হতে পারে।
২. দর্শকের অবস্থান (দেশভিত্তিক ভিউ)
আপনার ভিডিও যদি আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপ বা উন্নত দেশের দর্শকরা দেখে, তাহলে সিপিএম অনেক বেশি হবে। এসব দেশের বিজ্ঞাপনদাতারা বেশি খরচ করেন, তাই আয়ও বেশি হয়। বিপরীতে, বাংলাদেশের দর্শকের সিপিএম কম হওয়ায় একই ভিউ থেকেও কম আয় হয়।
৩. বিজ্ঞাপনের ধরন ও স্কিপযোগ্যতা
ইউটিউবে মূলত দুই ধরনের বিজ্ঞাপন থাকে- স্কিপ করা যায় এমন এবং স্কিপ না করা যায় এমন। দ্বিতীয় ধরনের বিজ্ঞাপন থেকে আয় বেশি হয়। আবার কিছু ভিডিওতে মিড-রোল (ভিডিওর মাঝখানে) বিজ্ঞাপনও থাকে, যা আয় বাড়াতে সহায়ক।
৪. দর্শকের আচরণ ও অংশগ্রহণ
শুধু ভিডিও দেখা নয়, দর্শক যদি বিজ্ঞাপন পুরোটা দেখে, ক্লিক করে, বা কোনোভাবে ইন্টারঅ্যাক্ট করে, তাহলে সেটি ইউটিউবকে ইঙ্গিত দেয় যে, ভিডিওটি লাভজনক। এতে সেই ভিডিওতে বেশি বিজ্ঞাপন দেখানো হয় এবং আয়ও বাড়ে।
৫. ভিডিওর দৈর্ঘ্য ও ফরম্যাট
৮ মিনিটের বেশি দৈর্ঘ্যের ভিডিওতে ইউটিউব একাধিক বিজ্ঞাপন বসাতে পারে, ফলে আয় বেশি হয়। কিন্তু ইউটিউব শর্টস বা ছোট ভিডিওতে বিজ্ঞাপন সীমিত থাকে, তাই আয়ও কম হয়। তাই যারা নিয়মিত কনটেন্ট বানাতে চান, তারা দীর্ঘ ও মানসম্মত ভিডিও তৈরিতে মনোযোগী হলে ভালো ফল পাবেন।
৬. চ্যানেলের জনপ্রিয়তা ও সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা
যদিও সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা সরাসরি আয় নির্ধারণ করে না, তবে এটি ভিডিওর ভিউ বাড়াতে সাহায্য করে। একজন সাবস্ক্রাইবার ভিডিওর নিয়মিত দর্শক হলে দেখার সময় ও দর্শক ধারণ বাড়ে, যা ইউটিউবকে বোঝায়- ভিডিওটি মানসম্মত এবং এতে আরও বিজ্ঞাপন বসানো যায়।
ভিউ মানেই টাকা নয়
অনেকেই মনে করেন ১০০০ ভিউ মানেই নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আয় হবে। বাস্তবে এটি অনুমানভিত্তিক হিসাব। সিপিএম বিভিন্ন কারণে পরিবর্তিত হয়, যেমন: মৌসুমি সময় (ঈদ, পূজা, বড়দিনে বিজ্ঞাপন বেশি হয়, কনটেন্টের ভাষা (বাংলা, ইংরেজি), প্ল্যাটফর্ম (মোবাইল, ডেস্কটপ), দর্শকের বয়স ও আগ্রহ।
আপনার মতামত লিখুন :