চলতি বছরের প্রথমার্ধে বিশ্বজুড়ে অন্তত ৬৮ লাখ অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ। প্ল্যাটফর্মটির মালিক প্রতিষ্ঠান মেটা জানিয়েছে, এসব অ্যাকাউন্ট স্ক্যামারদের সঙ্গে যুক্ত। এর অধিকাংশই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংগঠিত অপরাধীদের দ্বারা পরিচালিত। ভুয়া অ্যাকাউন্টগুলোর ব্যবহারকারীরা প্রায়শই তাদের কার্যক্রমে জোরপূর্বক শ্রম ব্যবহার করত।
বুধবার (৬ আগস্ট) বিবিসির প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের সম্ভাব্য প্রতারণা থেকে সতর্ক করতে নতুন প্রতারণা-প্রতিরোধী ব্যবস্থা চালু করেছে মেটা। যেমন, এখন কেউ যদি পরিচিত নয় এমন কোনো ব্যক্তি দ্বারা গ্রুপ চ্যাটে যুক্ত হন, সে সম্পর্কে ব্যবহারকারীকে সতর্ক করা হবে।
এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো এক ধরনের বাড়তে থাকা প্রতারণামূলক কৌশল, যেখানে অপরাধীরা হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে বা কাউকে গ্রুপ চ্যাটে যুক্ত করে ভুয়া বিনিয়োগ প্রকল্পসহ নানা ধরনের জালিয়াতি চালায়।
মেটা জানিয়েছে, হোয়াটসঅ্যাপ স্ক্যাম সেন্টারগুলোকে আগেভাগেই চিহ্নিত করে, এবং প্রতারণার জন্য ব্যবহৃত অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করে দিচ্ছে। একটি ঘটনায় হোয়াটসঅ্যাপ, মেটা এবং চ্যাটজিপিটি ডেভেলপার ওপেনএআই একসঙ্গে কাজ করেছে কম্বোডিয়ার একটি অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে। তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টে লাইক দেওয়ার বিনিময়ে নগদ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে একটি ভুয়া স্কুটার ভাড়া প্রকল্প চালাচ্ছিল, যা আসলে একটি পিরামিড স্কিম ছিল।
মেটা আরও জানিয়েছে, স্ক্যামাররা প্রতারণার নির্দেশনা তৈরি করতে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করেছিল। সাধারণত প্রতারকরা প্রথমে সম্ভাব্য ভুক্তভোগীদের সঙ্গে টেক্সট বার্তার মাধ্যমে যোগাযোগ করে এবং পরে কথোপকথনটি সোশ্যাল মিডিয়া বা ব্যক্তিগত মেসেজিং অ্যাপে নিয়ে যায়। এই ধরনের প্রতারণা সাধারণত পেমেন্ট বা ক্রিপ্টোকারেন্সি প্ল্যাটফর্মে সম্পন্ন হয় বলে জানানো হয়েছে।
সতর্ক করে মেটা বলেছে, ‘এধরনের প্রতারণায় সবসময়ই একটা সমস্যা থাকে, আর সবারই সচেতন থাকা উচিত। প্রতিশ্রুত আয় বা লাভ পেতে হলে যদি আগে টাকা দিতে হয়—তাহলে সেটা সন্দেহজনক।’
জানা গেছে, কোটি কোটি ডলারের প্রতারণা চালানো এসব জালিয়াতি চক্র মিয়ানমার, কম্বোডিয়া এবং থাইল্যান্ডের মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো থেকে পরিচালিত হয়। এই চক্রগুলো এমন লোকদেরও নিয়োগ করে, যাদের পরে জালিয়াতি করতে বাধ্য করা হয়। এই অঞ্চলের কর্তৃপক্ষ জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে এবং হোয়াটসঅ্যাপে দুই ধাপে যাচাইকরণ (টু স্টেপ ভেরিফিকেশন) চালু করার মতো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে বলেছে, যাতে অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
উদাহরণস্বরূপ, সিঙ্গাপুর পুলিশ মেসেজিং অ্যাপে যেকোনো অস্বাভাবিক অনুরোধ পেলে তাৎক্ষণিকভাবে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :