একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় হাইকোর্টে যাবজ্জীবন ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের শুনানি দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৬ বিচারপতির বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ মাসুদ। অন্যদিকে, বিএনপি নেতাদের পক্ষে আদালতে উপস্থিত রয়েছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামালসহ একাধিক আইনজীবী।
২০২৪ সালের ১২ জানুয়ারি, হাইকোর্ট তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ৩৮ আসামিকে খালাস দেন। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের বেঞ্চ সেই রায়ে বলেন, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচার ছিল অবৈধ। সংশ্লিষ্ট চার্জশিট গ্রহণযোগ্য ছিল না।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। গত ১ জুন আপিল বিভাগ লিভ টু আপিল গ্রহণ করে রাষ্ট্রপক্ষকে শুনানির অনুমতি দেয়। এরপর ১৭ জুলাই শুনানি শুরু হয়, যার ধারাবাহিকতায় আজ চলছে দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট, ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে নৃশংস গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন এবং দলের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ আহত হন শতাধিক নেতাকর্মী। অনেকেই পঙ্গু হয়ে যান।
নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৯ আসামি
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ, জঙ্গি নেতা মাওলানা তাজউদ্দীন, মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, মাওলানা শেখ ফরিদ, মাওলানা আবু সাইদ, মুফতি মঈনউদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল, হাফেজ আবু তাহের, মো. ইউসুফ ভাট ওরফে মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক, মফিজুর রহমান ওরফে মহিবুল্লাহ, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হোসাইন আহমেদ তামিম, রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ও মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন।
এই আপিল শুধু একটি মামলার বিচার নয়, এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস ও বিচারিক স্বচ্ছতার একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা।
একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আপিল এখন জাতির বিচারপ্রাপ্তি, রাজনৈতিক সহিষ্ণুতা ও আইনের শাসনের প্রতীক হয়ে উঠেছে। আদালতের চূড়ান্ত রায়ের দিকে নজর রাখছে পুরো দেশ।
আপনার মতামত লিখুন :