আমরা সবাই পরচর্চাকে ঘৃণা করি বলে দাবি করি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে- আমরা সবাই কোনো না কোনোভাবে এতে জড়িয়ে পড়ি। প্রশ্ন হলো, পরচর্চা কেন এত আকর্ষণীয়? এবং যদি এটি এতই লোভনীয় হয়, তাহলে আমরা কেন তা অস্বীকার করি?
এটি প্রমাণ করে যে, পরচর্চা আমাদের নৈতিক বোধের সঙ্গে খাপ খায় না। কারণ যদি খাপ খেত, তাহলে আমরা এর সঙ্গে জড়িত থাকার কথা এত দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করতাম না।
আজকের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আমাদের এমন জায়গায় দাঁড় করিয়েছে, যেখানে অন্যদের জীবন নিয়ে আলোচনা করা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। পরচর্চা যেন সামাজিক রীতিরই অংশ হয়ে গেছে।
মানুষ পরচর্চা করে কারণ? এতে সম্মিলিত রাগ, হিংসা বা বিরক্তি ভাগ করে নেওয়া যায়, কথার খোরাক না থাকলে অন্যদের জীবন নিয়েই আলোচনা সহজ উপায় হয়ে দাঁড়ায়, এটা আমাদের মনের হতাশা বা হীনমন্যতা ঢাকতে সাহায্য করে।
গভীরভাবে দেখলে বোঝা যায়- পরচর্চা অনেক সময় আমাদের নিজের আত্মসম্মান ও নিরাপত্তাহীনতার প্রতিফলন।
পরচর্চা কি সবসময় খারাপ?
সব পরচর্চা খারাপ নয়। কারো জীবন সম্পর্কে আপনি উদ্বিগ্ন হয়ে একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে আলোচনা করলে সেটা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু যখন উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায় নিজেকে শ্রেষ্ঠ বা অন্যকে হেয়প্রতিপন্ন করা, তখন তা নির্ঘাত ক্ষতিকর।
উদাহরণস্বরূপ: সুসান এবং হান্না দুই বন্ধু। হান্না তার স্বামীকে আর্থিক বিষয়ে মিথ্যা বলছে, যা সুসান জানে। সে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করে, ব্যর্থ হয়, এবং পরে একটি ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে বিষয়টি জানায়- উদ্বেগ থেকে। কিন্তু যদি সুসান এই কথা আরও কয়েকজনের সঙ্গে শেয়ার করে, কেবল নিজেকে ভালো প্রমাণ করতে, তবে সেটা আর উদ্বেগ নয়- এটা পরচর্চা।
কেন শেয়ার করছেন?
মানুষের উদ্দেশ্যই সব। কেন কথা বলছেন, তা ঠিক করছে সেটি নিরীহ আলোচনা নাকি অপবাদ।
নিজেকে কয়েকটি প্রশ্ন করুন-
১. এই কথা বলার মাধ্যমে আমি বা অন্য কেউ কি উপকৃত হবে?
২. আমি কি বিদ্বেষ, হিংসা বা হীনমন্যতা থেকে এটা বলছি?
৩. যদি কেউ আমার সম্পর্কে এমন কথা বলত, আমি কেমন অনুভব করতাম?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর যদি সততার সঙ্গে না দিতে পারেন, তবে বুঝে নিন- এটি পরচর্চা এবং তা আপনার আত্মসম্মানকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
পরচর্চার আসক্তি
গবেষণায় দেখা গেছে, পরচর্চা করলে সুখদায়ক হরমোন (যেমন সেরোটোনিন, ডোপামিন) নিঃসরণ হয়, যেগুলো মস্তিষ্কে আরাম বা আনন্দের অনুভূতি সৃষ্টি করে। তাই পরচর্চা অনেকটা মাদকাসক্তির মতো, যা ক্ষণিকের আনন্দ দিলেও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর।
পরচর্চার আগে ভাবুন
পরচর্চার আগে একটি নিয়ম অনুসরণ করুন- কারো জীবন নিয়ে কিছু বলার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন, এটা কি সত্যিই প্রয়োজনীয়? যদি না হয়, তাহলে থেমে যান।
আমাদের অনেক কথাই সত্যি হলেও সব কথা বলার প্রয়োজন নেই। কোন কথা কোথায়, কাকে, কোন উদ্দেশ্যে বলা হচ্ছে, সেটাই আসল বিষয়।

 
                             
                                     সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন