সোমবার, ০৫ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


এফ এ শাহেদ

প্রকাশিত: মে ৫, ২০২৫, ০৫:৫৮ পিএম

ভূমি আইনের অজ্ঞতা থেকেই জটিলতার শুরু

এফ এ শাহেদ

প্রকাশিত: মে ৫, ২০২৫, ০৫:৫৮ পিএম

ভূমি আইনের অজ্ঞতা থেকেই জটিলতার শুরু

রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স।

আইন শাস্ত্রে বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদ আছে, যার বাংলা অর্থ ‘আইনের অজ্ঞতা ক্ষমার অযোগ্য কিংবা আইনের অজ্ঞতা ক্ষমার কারণ হতে পারে না।’ যদি বাস্তবে সংশ্লিষ্ট আইন সম্পর্কে না জেনে কোনো বিধিবিধান লঙ্ঘন করেন, তবে আপনি সংশ্লিষ্ট আইন সম্পর্কে জানেন না বলে কোনো অজুহাত দেখালে তা গ্রহণযোগ্য হয় না, যার ফলে আইন ভঙ্গের শাস্তি আপনাকে পেতে হয়। ভূমি আইন একটি বিশাল বিষয় হলেও প্রাথমিক জ্ঞান সর্বস্তরের মানুষের থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন ভূমি আইন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, আইনের অজ্ঞতা থেকেই মূলত জটিলতা সৃষ্টি হয়। গ্রাম থেকে শহর, নিরক্ষর থেকে উচ্চশিক্ষিত ভূমি বিষয়ে নেই স্পষ্ট ধারণা। সুস্পষ্ট ধারণা না থাকায় দেশের ৫২ শতাংশের বেশি পরিবার জমির সীমানাসহ উত্তরাধিকার জটিলতায় আক্রান্ত।

দেশের ভূমি আইনের অজ্ঞতা থেকে জটিলতা

ভূমি বলতে শুধুই জমি নয়, আমাদের জন্ম থেকে মৃত্যু, অর্থাৎ পরিচয় এবং সম্ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু জমি। রাষ্ট্র ও সমাজের ভিত্তিও এই ভূমির ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। দেশের প্রচলিত ভূমির মালিকানা, ভূমি হস্তান্তর, ভূমির ব্যবহার, ভূমির ধরন থেকে শুরু করে ভূমির সঙ্গে নদীর সম্পর্কের ওপর ভূমির নানাবিধ আইন ও জটিলতা রয়েছে। স্থান-কালের পাশাপাশি ভূমির মালিকানা এবং সীমানাবিরোধ আদিকাল থেকে।

পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) ৩৬০ জন পরিবারের ওপর পরিচালিত এক গবেষণা জরিপে দেখা যায়, ৪১ শতাংশই ভূমি বিরোধজনিত সমস্যায় আক্রান্ত। তাদের মধ্যে ৫২ শতাংশ ভূমির সীমানাসংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে। এরপর আছে সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে বিরোধ।

আমাদের ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকার, অসাম্যভিত্তিক জমির মালিকানাকাঠামো এবং মুক্তিযুদ্ধোত্তর গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষার বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকা এই ভূমিব্যবস্থার প্রধান সংকট হলো, আমরা এখনো স্পষ্ট করে বলতে পারিনি যে কারা ন্যায্য মালিক হবে এবং কীভাবে সেই ন্যায্যতার নিশ্চয়তা দেব। সংবিধানে মুক্তির কথা বলা হলেও ‘ভূমি সংস্কার’ শব্দটি পর্যন্ত অনুপস্থিত; এ যেন গণতন্ত্রের শরীরে জমে থাকা এক পুরোনো ক্ষতচিহ্ন।

ভূমি সিলিং আইন (ব্যক্তি বা পরিবারপ্রতি ৬০ বিঘা) যুগোপযোগী নয়, আর প্রয়োগ আরও দুর্বল। অনেক গ্রামে দেখা যায়, ১০ শতাংশ মানুষ ৮০ শতাংশ জমির মালিক। এটা শুধু অর্থনৈতিক বৈষম্য নয়, এটা একরকম আইনি দ্বিচারিতা। গণতন্ত্রে মাটি যদি অন্যায়ভাবে ভাগ হয়, তাহলে ভোটাধিকার দিয়েও সেই ক্ষত ঠিক করা যাবে না।

ভূমি আইনের অজ্ঞতা ও জটিলতা প্রসঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক এস এম মাসুম বিল্লাহ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ভূমির সঙ্গে জড়িয়ে আছে ন্যায়বিচার। ভূমির সঙ্গে সরাসরি জড়িত মানুষের ন্যায়বিচার, ইতিহাস ও জাতিগত পরিধি। যেমন অর্পিত সম্পত্তিসংক্রান্ত আইনগুলোর মাধ্যমে ষাটের দশক থেকে আজ পর্যন্ত হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর যে ভূমি-আগ্রাসন হয়েছে, তা আমাদের সাংবিধানিকতার কপালে এক কলঙ্কচিহ্ন। বিষয়টি যতই আইন দিয়ে আড়াল করা হোক না কেন, ন্যায়বিচারের আয়নায় তা স্পষ্ট দৃশ্যমান।

তিনি বলেন, ভূমির জটিলতা কমাতে হলে কিছু বিষয় গুরুত্ব দেওয়া অতি প্রয়োজন। তবে, ডিজিটাল পদ্ধতির কথা শুনলেই অনেকের মনে হয় বুঝি সব ঝামেলা শেষ! কিন্তু প্রযুক্তি কেবল তখনই মুক্তিদাতা হয়, যদি আমরা সেটিকে মানবিকতা ও জবাবদিহির সঙ্গে সংযুক্ত করি। নামজারি ও ভূমি করব্যবস্থায় বিগত সরকারের অধীনে চালু হওয়া ডিজিটাল ব্যবস্থা যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল। এরই মধ্যে এর সুফল দেখা যাচ্ছেÑ জাল সনদের প্রবণতা কমছে, নামজারির স্বচ্ছতা বাড়ছে এবং মানুষের সময় ও অর্থের অপচয় কমছে। তবে এটিকে যেন প্রযুক্তির ‘শোপিস’ বানিয়ে না রাখা হয়। ভূমি বিষয়ে বিচারকদের, আইনজীবীদের, এসিল্যান্ড ও ইউএনওদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। ভূমিসংক্রান্ত বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) ব্যবস্থার মাধ্যমে বিচারব্যবস্থার ওপর চাপও কমানো যাবে।

পরিচালক (ভূমি রেকর্ড), মো. মোমিনুর রশীদ বলেন, ভূমি নিয়ে জটিলতার পেছনে অন্যতম কারণ মানুষের ছাড় না দেওয়ার মানসিকতা। বর্তমানে জমির দাম বাড়ার ফলে প্রত্যেকেই চায় (অন্যের) ৫ ইঞ্চি জমি দখল করতে, ছাড় দিতে চায় না কেউ। একজন অপরজনকে নানা রকম ভোগান্তিতে ফেলে। কীভাবে জোর-দখল করা যায় এমন মানসিকতা বিরাজমান। সে ক্ষেত্রে আমরা প্রান্তিক থেকে সর্বস্তরের মানুষের অধিকার রক্ষায় ভূমি ব্যবস্থাপনাকে আরও আধুনিকায়ন করতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। ভূমি সম্পর্কিত প্রায় সব খাত ডিজিটালাইজড করতে কাজ চলমান। কাজের ক্ষেত্রে অনেক স্বচ্ছতা এসেছে।

তবে, সঠিক আইন এবং ভূমি ব্যবহার মালিকানা থেকে শুরু করে উত্তরাধিকারের বিষয়ে যে আইন বা বিধি রয়েছে, সে বিষয়ে ধারণা না থাকায় জটিলতা নিরসন হচ্ছে না। যার সুযোগে দালালদের দৌরাত্ম্য দেখা যায়। ভূমির অধিকার সম্পর্কে অজ্ঞতা, শিক্ষিত হলেও ভূমি আইন ও উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকা, ভূমিসংক্রান্ত মামলার দীর্ঘসূত্রতা, যে কারণে মামলা না করার মনোভাব। ভূমি জরিপের দীর্ঘসূত্রতার নানা জটিলতার ফলে ভূমি অধিকারের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ থেকে যায়। সে ক্ষেত্রে দেশের সর্বস্তরের মানুষের ভূমি আইন বা বিধি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাব দায়ী। পাশাপাশি সর্বস্তরসহ উচ্চশিক্ষিত মানুষও জানেন না জমির দাগ, খতিয়ান বা দলিল কী? জমি সম্পর্কে এই মৌলিক জ্ঞান পড়ানো হয় না। আমাদের পাঠ্যপুস্তকে জমির মৌলিক বিষয়গুলো জানার সুযোগ থাকা উচিত। জমি কীভাবে রক্ষা করব, জমি কিনতে কী কী দেখা ও জানা উচিত এসব বিষয় জানা থাকলে জটিলতা কমবে অনেকখানি।

ভূমির জটিলতা তুলে ধরে ঢাকা কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আবু সালেহ বলেন, আমরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছি, তবে ভূমি বিষয়ে খুঁটিনাটি বাস্তবিক কোনো ধারণা আমাদের দেওয়া হয়নি। আরএস এবং জিআইএস নিয়ে পড়ানো হলেও সেটি খুবই সামান্য পরিসরে জ্ঞান লাভ করার সুযোগ দেয়। ভূমি যেহেতু প্রত্যেকের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তাই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ভূমির মাপ, খতিয়ান, দলিল সম্পর্কে বাস্তবিক ধারণা দেওয়ার জন্য শিক্ষা কারিকুলাম সংস্কার প্রয়োজন। যে শিক্ষা আমাদের বাস্তবিক জীবনে কাজে আসে না বা মুক্তির পথ দেখায় না, এমন শিক্ষা সংস্কার এখন সময়ের দাবি বলে মনে করি।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!