ঢাকা বুধবার, ০৭ মে, ২০২৫

ওরিয়নের কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলের দাবি

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ৬, ২০২৫, ০৮:২৩ পিএম
ছবি- সংগৃহীত

কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে ওরিয়ন গ্রুপের প্রস্তাবিত ৬৩৫ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবাদী সংগঠন ও বিশিষ্টজনেরা।

মঙ্গলবার (৬ মে) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়নবিষয়ক কর্মজোট (বিডব্লিউজিইডি) এবং উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন)।

সহ-আয়োজক ছিল বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), প্রতিবেশ ও উন্নয়ন ফোরাম (এফইডি), মহেশখালী জনসুরক্ষা মঞ্চ এবং সংশপ্তক।

বক্তব্যে বিডব্লিউজিইডির সদস্যসচিব হাসান মেহেদী বলেন, ‘বিতর্কিত আইনের আওতায় বাতিলপ্রাপ্ত প্রযুক্তি ব্যবহার করে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের এই চুক্তি পুরোপুরি অবৈধ। এতে জনগণের ঘাড়ে ৩,০৫৯ কোটি টাকার অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি চার্জের বোঝা চাপানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, বিতর্কিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ (বিশেষ বিধান) আইন অনুসারে ২০১৩ সালে ওরিয়ন গ্রুপকে গজারিয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৬ সালে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি (পিপিএ) স্বাক্ষরিত হয়।

তিনি আরও বলেন, চুক্তি অনুযায়ী ২০২০ সালের জানুয়ারির মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর কথা থাকলেও ওরিয়ন গ্রুপ নির্মাণকাজই শুরু করতে পারেনি। ফলে ২০২২ সালে কেন্দ্রটি মাতারবাড়িতে স্থানান্তরের প্রস্তাব দেওয়া হয়। মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৬ পর্যন্ত। পরবর্তীকালে আরও সময় দিয়ে ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রকল্প মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সরকারি তিনটি ব্যাংক ওরিয়ন প্রকল্পে ১০,৫৭৯ কোটি টাকার ঋণ প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে। যদিও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের আহসান এইচ মনসুর নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগের পক্ষে মত দিয়েছেন। ২০২৪ সালে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের একটি ঋণ বাতিল হলেও ওরিয়নের কয়লা প্রকল্পের ঋণ এখনো বহাল রয়েছে।

প্রকল্পটি সময়মতো শেষ না হলে বাংলাদেশের ২০৫০ সালের মধ্যে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্যমাত্রা বাধাগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

এ ছাড়া স্থান পরিবর্তনের কারণে ভূমি ইজারা ও জ্বালানি পরিবহন ব্যয়ের হেরফের হওয়ায় ২০১৬ সালের চুক্তির ভিত্তিমূল্য পুনর্বিবেচনার দাবি উঠে আসে।

গত ৪ মে প্রস্তাবিত প্রকল্প বাতিলের দাবিতে গণস্বাক্ষর সংবলিত একটি আবেদন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বরাবর পেশ করা হয়। অনুলিপি প্রেরণ করা হয়েছে বিদ্যুৎ ও পরিবেশ উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।

একই দিনে ১৪৪টি নাগরিক সংগঠনের পক্ষে অর্থ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের কাছে চারটি পৃথক আবেদন জমা দেওয়া হয়।

এর আগে গত ১ মার্চ স্থানীয় জনসাধারণ মানববন্ধন এবং গত বছরের ৩০ অক্টোবর বিডব্লিউজিইডি পরিবেশ উপদেষ্টার কাছে ইআইএ বাতিলের আবেদন জানায়।

সুশীলসমাজের মতে, মানবাধিকার, পরিবেশ ও জাতীয় অর্থনীতির স্বার্থে এখনো সময় আছে চুক্তিটি বাতিল করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির পথে এগিয়ে যাওয়ার।