বহুল আলোচিত ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ’ জারি করেছে সরকার। সোমবার (১২ মে) রাতে এনিয়ে একটি গেজেট প্রকাশ করা হয়।
তবে আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডার কর্মকর্তাদের মতামত উপেক্ষা করে কোনো সংশোধন ছাড়া এ গেজেট প্রকাশ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এনবিআরের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা।
নতুন এই অধ্যাদেশে রাজস্ব নীতি বিভাগের কার্যপরিধিতে সামান্য কিছু পরিবর্তন আনা হলেও মূল কাঠামোতে বড় কোনো সংশোধন করা হয়নি। এতে রাজস্ব ব্যবস্থাপনার প্রশাসনিক পদগুলোতে অ্যাডমিন ক্যাডার ছাড়াও আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে।
অধ্যাদেশ জারির পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আয়কর ও কাস্টমস কর্মকর্তা জানান, তাদের কিছু দাবি আংশিকভাবে পূরণ হলেও অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ উপেক্ষিত হয়েছে। কর্মকর্তাদের মতে, কর ও শুল্ক ক্যাডারের নিজস্ব কর্মকর্তাদের মাধ্যমে শাসন কাঠামো গঠনের বিষয়টি ইতিবাচক হলেও পুরো প্রক্রিয়াটি একপাক্ষিকভাবে পরিচালিত হয়েছে।
নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, রাজস্ব নীতি বিভাগ কর আইন প্রয়োগ ও রাজস্ব আহরণের পরিস্থিতি ‘মূল্যায়ন’ করবে। এর আগে এই জায়গায় ‘পরিবীক্ষণ’ শব্দটি ছিল। অন্যদিকে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগে প্রশাসনিক পদ পূরণে অ্যাডমিন ক্যাডারের পাশাপাশি রাজস্ব বিভাগের মাঠপর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে।
এছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জনবল এখন থেকে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। সেখান থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী জনবল রাজস্ব নীতি বিভাগে পদায়ন করা যাবে। একইসঙ্গে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে তার জনবল রাজস্ব নীতি বিভাগে ন্যস্ত করার কথাও বলা হয়েছে।
এর আগে সোমবার (১২ মে) এ অধ্যাদেশ জারিকে কেন্দ্র করে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনে দিনভর বিক্ষোভ করেন আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের প্রায় পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন কর অঞ্চল, কাস্টমস হাউস ও ভ্যাট দফতরের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা।
এদিকে আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অধ্যাদেশের খসড়ায় সংশ্লিষ্ট ক্যাডারদের মতামত যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়নি। এতে রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞ নয় এমন কর্মকর্তাদের পদায়নের সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা প্রশাসনিক দক্ষতা ও কার্যকারিতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
কর্মকর্তাদের অভিযোগ, এনবিআর বিলুপ্তির মতো বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কোনো ধরনের সমীক্ষা ছাড়াই। রাজস্ব কাঠামো ও অংশীজনদের ওপর এর প্রভাব মূল্যায়ন না করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।