ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০২৫

‘অনিরাপদ’ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে ঘিরে একগুচ্ছ পরিকল্পনা

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ১৪, ২০২৫, ১০:৫১ পিএম
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। ছবি- সংগৃহীত

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডে নড়েচড়ে বসেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। উদ্যানকে ‘আতঙ্কের স্থান’ থেকে ধীরে ধীরে নিরাপদ ও ‘স্বস্তিদায়ক স্থানে’ রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিশেষ করে উদ্যানে মাদক কারবার ও সেবন বন্ধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ক্ষেত্রে যৌথ অভিযান চালাবে ডিএমপি ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতে যৌথ অভিযান পরিচালনা করবে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশন।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রকাশে চলছে মাদক কারবারি ও সেবন।   ছবি- সংগৃহীত

বুধবার (১৪ মে) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক জরুরি সভায় আরও বেশকিছু সিদ্ধান্ত হয়।

সেখানে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, ডিএমপি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তর, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টরা অংশ নেন।

বৈঠকের পর এসব সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হত্যাকান্ডের ঘটনায় বুধবার (১৪ মে) সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পরিদর্শন করেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। ছবি- সংগৃহীত

তিনি বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং গণপূর্ত মন্ত্রণালয় যৌথভাবে দেখভাল করে। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন কাজে এটি ব্যবহৃত হয়।’

‘তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক যত অপরাধ সংগঠিত হয়, তার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশের সংযোগ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সঙ্গে রয়েছে। প্রলয় গ্যাং থেকে শুরু করে নানা ইস্যুতে দেখেছি। তাই এ নিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।’

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গত ১২ এপ্রিল ‘মার্চ ফর গাজা’ নামে গণসমাবেশ হয়েছিল। সেখানে ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে লাখো জনতার ঢল নেমেছিল।  ছবি- সংগৃহীত

জরুরি বৈঠক শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানও ওইসব সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার থেকে মাদক রেইড শুরু হবে। আমরা রেইড নিয়মিত করার পর মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একটি কমিটি করা হবে- যারা এ বিষয়ে তদারকি করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রমনা পার্ককে মাথায় রেখে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে যাতে আধুনিক পার্কে রূপান্তরিত করা যায়, সেটা নিয়েও একটি স্টাডি করা হবে।’

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২০২৩ সালে ২২ জুলাই যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্র দলের যৌথ উদ্যোগে বিএনপির তারুণ্যের সমাবেশ। ছবি- সংগৃহীত

এদিকে, ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে উপদেষ্টা আসিফ জানান, অবিলম্বে এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে ।

তিনি লেখেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে এক আতঙ্কের স্থান থেকে ধীরে ধীরে একটি নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক স্থানে রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’ 

অন্যান্য উদ্যোগ সম্পর্কে তিনি জানিয়েছেন, উদ্যোনে রাজু ভাস্কর্যের পেছনের গেটটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হবে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করা হবে।

এ ছাড়াও নিয়মিত মনিটরিং ও অভিযানের জন্য সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করবে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, উদ্যানে পর্যাপ্ত আলো ও সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং সেগুলোর নিয়মিত মনিটরিং করা হবে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের কর্মসূচি আয়োজন করা হয়। গত ৫ নভেম্বর উলামা-মাশায়েখ বাংলাদেশের ব্যানারে আয়োজিত এক সমাবেশ। ছবি- সংগৃহীত

পাশাপাশি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি ডেডিকেটেড পুলিশ বক্স স্থাপন করা হবে, উদ্যানে রমনা পার্কের মতো সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা চালু করা হবে, রাত ৮টার পর উদ্যানে জনসাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হবে।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (১৩ মে) দিবাগত রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য নিহত হন।

ওই ঘটনার পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরিবেশ নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়।