ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধের ভয়াবহতা ও হামাসের হাতে আটক ইসরায়েলি জিম্মিদের ভাগ্য ঘিরে ইসরায়েলের ভেতরে তীব্র ক্ষোভ দানা বাঁধছে।
দেশটির বহু নাগরিক মনে করছেন, সরকার যুদ্ধকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে, জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না।
শনিবার (২৪ মে) দেশটির রাজধানী তেলআবিব ছাড়াও শার হানেগেভ জাংশন, কিরিয়াত গাত ও জেরুজালেমে রাস্তায় নামেন জিম্মিদের স্বজনরা। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তারা।
হামাসের হাতে বন্দি থাকা মাতান ঝানগাউকারের মা বলেন, ‘বলুন তো মিস্টার নেতানিয়াহু, রাতে ঘুমাতে পারেন কীভাবে? সকালে আয়নায় নিজেকে দেখেন কীভাবে?’
সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি অভিযান যতই জোরালো হচ্ছে, ততই জিম্মিদের মুক্তির সম্ভাবনা দুর্বল হয়ে পড়ছে।
দেশটির ‘জিম্মি ও নিখোঁজ পরিবার পরিষদ’ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘আমরা আবারও আলোচনায় ফেরার আহ্বান জানাই। যতক্ষণ না শেষ জিম্মিটিও ঘরে ফেরে, ততক্ষণ আলোচনার দরজা বন্ধ হতে পারে না।’
বিক্ষোভকারীদের ক্ষোভ আরও বেড়ে যায় যখন ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা ‘শিন বেত’-এর নতুন প্রধান হিসেবে মেজর জেনারেল ডেভিড জিনিকে মনোনীত করেছেন নেতানিয়াহু- এমন খবর প্রকাশ্যে আসে।
জিনি অতীতে বেশ কয়েকটি সামরিক বৈঠকে বন্দি বিনিময় চুক্তির বিরোধিতা করেছিলেন বলে খবর দিয়েছে ইসরায়েলি চ্যানেল টুয়েলভ। তিনি মনে করেন, গাজা যুদ্ধ হবে দীর্ঘমেয়াদি। আর তার ভাষ্য অনুযায়ী, জিম্মিদের উদ্ধার এই প্রক্রিয়ার অগ্রাধিকার নয়।
এই মনোনয়নের প্রতিক্রিয়ায় জিম্মিদের স্বজনরা বলেন, ‘যদি সত্যিই জিনি এমন মনোভাব পোষণ করে থাকেন, তাহলে সেটা নিন্দনীয় ও ভীতিকর। যুদ্ধপন্থি এমন একজনকে গোয়েন্দা প্রধান করা পুরো জাতির প্রতি অন্যায়।’
জর্ডানে অবস্থানরত আল-জাজিরার প্রতিনিধি হামদা সালহুত জানিয়েছেন, ‘নেতানিয়াহু এই মনোনয়ন দিয়েছেন কারণ জিনি সামরিক পদক্ষেপের পক্ষে।’
জিম্মিদের স্বজনরা আশঙ্কা করছেন, চলমান যুদ্ধের ফলে যারা এখনো বেঁচে আছেন, তারাও প্রাণ হারাতে পারেন। কিন্তু সরকারের অবস্থান এমন যে, দ্রুত কোনো সমাধান আসার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
বর্তমান ইসরায়েলি সরকারকে বলা হচ্ছে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে ডানপন্থি প্রশাসন। এই জোটের বড় অংশই যুদ্ধবিরতির ঘোর বিরোধী।
ফলে যুদ্ধ, রাজনীতি ও মানবিক সংকটের মধ্যে জিম্মিদের জীবন এখন গভীর অনিশ্চয়তার মুখে রয়েছে।