‘পল্লী বিদ্যুৎ সংস্কার’ বিষয়টিকে অজুহাত হিসেবে সামনে এনে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কিছু কর্মচারী দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন যা অভিপ্রেত নয় বলে জানিয়েছে সরকার।
মঙ্গলবার (২৭ মে) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আন্দোলন প্রত্যাহার করে কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সরকার গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, ‘পল্লী বিদ্যুৎ সংস্কার’ বিষয়টিকে অজুহাত হিসেবে সামনে এনে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কিছু কর্মচারী দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন, যা অভিপ্রেত নয়। এ সংক্রান্ত তথাকথিত ‘বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ এসোসিয়েশন’ নামক অনিবন্ধিত একটি সংগঠনের প্রেস বিজ্ঞপ্তি সরকারের গোচরীভূত হয়েছে। এরূপ সংগঠন বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কোনো বৈধ সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব করে না। দেশব্যাপী নিয়োজিত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নিবেদিত কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে এ আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই। সরকার এই আন্দোলনকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতি সুষ্ঠুভাবে সমাধানের যেসব উদ্যোগ সরকার নিয়েছে সেগুলো তুলে ধরে বলা হয়-
১. পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ভূমিকা ও কাঠামোগত সংস্কারের জন্য সরকার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করেছে। আসন্ন ঈদুল আজহার ছুটির আগেই সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারদেরকে নিয়ে এ কমিটির একটি উপস্থাপনার মাধ্যমে রিপোর্ট চূড়ান্ত করবে এবং রিপোর্ট প্রাপ্তির পর সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
২. পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মচারীদের সাথে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কর্মচারীদের পদমর্যাদার বিষয়টি একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় আনার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বাধীন একটি কমিটি কাজ করছে এবং আগামী সপ্তাহেই এ বিষয়ে নির্দেশনা জারি করা হবে। এছাড়াও, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সহকর্মীসুলভ আচরণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
৩. শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির যেসকল কর্মকর্তা/কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে যারা নাশকতামূলক কাজের সাথে জড়িত নয় তাদের বিরুদ্ধে গৃহীত ব্যবস্থা পুনঃবিবেচনা করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
৪. পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এর ক্রয়, নিয়োগ ও পদোন্নতি প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে এবং অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে এরূপ কর্মকর্তাগণের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৫. পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কতিপয় পদে কর্মরত কর্মীগণ ঝুঁকিপূর্ণ ও জরুরি সেবামূলক কাজের সাথে জড়িত। এরূপ ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিযুক্ত হতে নির্দিষ্ট বয়সসীমা এবং শারীরিক সক্ষমতা রক্ষা করতে হয়। উক্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজের জন্য তারা বাংলাদেশের বিদ্যমান শ্রম আইন অনুযায়ী বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকেন। বাংলাদেশের শ্রম আইনটি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) দ্বারা স্বীকৃত।
৭. বিগত আগস্ট ২০২৪ হতে অদ্যাবধি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীদের মধ্যে ৬০২৫ জনকে নিয়মিত করা হয়েছে এবং এই প্রক্রিয়া পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে চলমান রয়েছে।
৮. কর্মচারীদের বদলি একটি নিয়মিত কার্যক্রম। যেকোনো কর্মচারী কোনো একটি কর্মস্থলে তিন বছর অতিক্রান্ত হলেই তিনি বদলিযোগ্য হবেন এবং এটি একটি স্বাভাবিক চর্চা। এছাড়া, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মী পর্যায়ের বদলি সমিতির নিজস্ব প্রক্রিয়াতেই করা হয়ে থাকে। পাশাপাশি, মানবিক দিক বিবেচনা করে যেসকল কর্মচারী স্বামী-স্ত্রী হয়েও ভিন্ন ভিন্ন কর্মস্থলে কর্মরত ছিলেন এরূপ ৩০৭৯ জন কর্মচারী দম্পতিকে সম্প্রতি একই কর্মস্থলে বদলি করা হয়েছে। তাছাড়া, সংযুক্ত কর্মচারীদের বেলায় অদ্যাবধি ৬ জন কর্মীকে তার স্ব স্ব কর্মস্থলে ফেরত পাঠানো হয়েছে এবং বাকিদের বিষয়টিও বিবেচনাধীন রয়েছে।
৯. পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কতিপয় কর্মচারীর বিরুদ্ধে যে সকল মামলা দায়ের করা হয়েছে উক্ত মামলাসমূহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে করা হয়েছে এবং তা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। অভিযোগ বিবেচনা ও বিচারের ক্ষেত্রে আদালত স্বাধীন এবং অভিযুক্ত কর্মচারীগণ আদালতের বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্দোষ প্রমাণিত হতে পারে।
সরকার আশা করে, গৃহীত ব্যবস্থাসমূহের পরিপ্রেক্ষিতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আন্দোলনকারী কর্মচারীরা তাদের রাষ্ট্রীয় কর্তব্য সম্পর্কে সচেতনতা ও দায়বদ্ধতা থেকে এবং দেশের স্বার্থ বিবেচনায় রেখে আন্দোলন প্রত্যাহার করে স্ব স্ব কর্মস্থলে ফেরত যাবে এবং অহেতুক সভা সমাবেশ থেকে বিরত থাকবে।
উল্লেখ্য, সরকারি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) মাধ্যমে দেশের গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। এসব সমিতির কয়েক হাজার কর্মী চাকরিবিধি বাস্তবায়ন, হয়রানি বন্ধ ও মামলা প্রত্যাহারসহ সাত দফা দাবিতে গত সাত দিন ধরে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করে আসছেন।
আপনার মতামত লিখুন :