ঢাকা শনিবার, ৩১ মে, ২০২৫

আঘাত হানতে শুরু করেছে গভীর নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড়ের সবশেষ অবস্থা

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ২৯, ২০২৫, ০৫:১৫ পিএম
গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে কক্সবাজারে বৈরী পরিবেশ। নিষেধাজ্ঞা শর্তেও উত্তাল সমুদ্র দেখতে সৈকতে পর্যটকরা। ছবি- সংগৃহীত

সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়েছে। ফলে এটি এখন গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এরই মধ্যেই এর অগ্রভাগ উপকূলে আঘাত হানতে শুরু করেছে। ফলে এখন তা ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা নেই।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, নিম্নচাপের কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে এখন বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার। এটি দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আবহাওয়াবিদদের হিসেবে, যদি বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫১ থেকে ৬২ কিলোমিটার হয়, তবে সেটি গভীর নিম্নচাপ ধরা হয়। আর শক্তি সঞ্চয় করে ৬২ কিলোমিটারের উপরে বাতাসের গতিবেগ উঠলে সেটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ পায়।

অর্থাৎ, উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি এখন গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। তবে নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ের আকার ধারণের কাছাকাছি অবস্থান করছে।

ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তিতে’ পরিণত হচ্ছে না কেন? 

আবহাওয়াবিদরা আগেই থেকেই ধারণা করে আসছিলেন, এটি ঘূর্ণিঝড় রূপ পেতে পারে। যার নাম হতো ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’। তবে বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে তাদের ধারণা পরিবর্তন হয়েছে। এখন যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতে এটি আর ঘূর্ণিঝড়ে রূপ পাবে না বলে জানিয়েছেন তারা।

আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানা বৃহস্পতিবার দুপুরে রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আর কোনো শঙ্কা নেই।’

‘সৃষ্ট নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। তবে এটি আর শক্তি সঞ্চয় কিংবা সাগরে বেশিক্ষণ থাকতে পারছে না। এরই মধ্যে অগ্রভাগ উপকূলে চলে এসেছে। তাই ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারবে না।’

আবহাওয়াবিদদের মতে, সাধারণত আন্দামান বা দক্ষিণ পাশে লঘুচাপ তৈরি হলে সেগুলো ঘূর্ণিঝড় হয় এবং তীব্র রূপ ধারণ করে। এবারের নিম্নচাপটি সেই পরিবেশে তৈরি হয়নি।

গভীর নিম্নচাপের বর্তমান অবস্থা

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, গভীর নিম্নচাপের সম্মুখভাগ উপকূলে আঘাত হানা শুরু করেছে। এটি রাতের মধ্যে অতিক্রম করবে।

নিম্নচাপের প্রভাবে নোয়াখালীতে একটানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে এবং বইছে ঝোড়ো বাতাসও। বিশেষ করে হাতিয়ার ঝুমদ্বীপের চারপাশের নদ-নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৬ ফুট পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে নিঝুমদ্বীপের ৯টি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ছবি- সংগৃহীত

সবশেষ অবস্থা জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানা বৃহস্পতিবার দুপুর তিনটার দিকে রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘গভীর নিম্নচাপের সামনের অংশ উপকূলে আঘাত এনেছে। তবে মূল অংশ উপকূল অতিক্রম করবে সন্ধ্যার দিকে।’

 

এদিকে, দুপুর ১২টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালকের পক্ষে ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিকের পূর্বাভাসে বলা হয়, ‘উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় (২১.৪° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮.৫° পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে।’

এটি বৃহস্পতিবার (২৯ মে) দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৭৫ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৮৫ কিলোমিটার পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১৭০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ২১০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।

এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে আজ (২৯ মে) বিকেল নাগাদ সাগরদ্বীপ ও খেপুপাড়ার নিকট দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে দমকা/ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে

গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

চার সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত

গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর (পুনঃ) ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।