ঢাকা সোমবার, ১৪ জুলাই, ২০২৫

মিটফোর্ড হাসপাতাল

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি, দায়িত্ব পালনে অবহেলা দেখছে না আনসার বাহিনী

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১৩, ২০২৫, ১০:২২ পিএম
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল। ছবি- সংগৃহীত

আলোচিত সোহাগ হত্যাকাণ্ডের জের ধরে সৃষ্ট নিরাপত্তাহীন পরিবেশের প্রতিবাদে দিনব্যাপী কর্মবিরতি পালন করেছেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। রোববার (১৩ জুলাই এই কর্মসূচি পালন করেন তারা। এই কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে শ্রেণিকক্ষে অনুপস্থিত ছিলেন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরাও।

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দাবি, হাসপাতাল ও কলেজ এলাকায় পর্যাপ্ত আনসার মোতায়েন, সশস্ত্র আনসার সদস্য নিয়োগ ও  প্রতিটি ফটকে আনসার নিয়োগের ব্যবস্থা করা। তবে আলোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আনসার সদস্যদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা বা দায় ছিল না বলে আজ এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী প্রধান।

এদিন সকাল ৮ টা থেকে কর্মসূচি শুরু করেন মিটফোর্ড হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। পরে দুপুরের দিকে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা হাসপাতাল ‘শাটডাউন’-এর ঘোষণা দেন।

আন্দোলনকারীরা বলেন, ‘নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে। বিশেষ করে আনসার বাহিনীকে আরও সক্রিয় করার দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’

হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সংগঠন ইন্টার্ন ডক্টরস সোসাইটির সভাপতি ডা. ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ৮ দফা দাবি করেছি। পরিচালক কিছু দাবি মেনে নিয়েছেন। হাসপাতালের সামনের অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে। বাকি দাবিগুলো আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আজ কর্মবিরতি পালন করছি।’

মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ উদ্দিন নাদিম বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণহীন। গতকাল অধ্যক্ষের কাছে গিয়েছিলাম কিন্তু কোনো আশ্বাস পাইনি। তাই আজ আমরা ক্লাস বর্জন করেছি।’

মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. মাজহারুল শাহীন জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে অংশ নেয়নি। তবে ‘শাটডাউন’ বা পূর্ণ কর্মবিরতির বিষয়ে তিনি অবগত নন।

আনসার সদস্যদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা ছিল না: ডিজি 

এদিকে রোববার বিকালে বাহিনীর খিলগাঁও সদরদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ বলেন, ঘটনার দিন আনসার সদস্যরা হাসপাতালের নির্ধারিত রোস্টার অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করেছেন। যেখানে রোস্টারের বাইরে কলেজ ও হাসপাতালের গেটেই দায়িত্ব পালনের সুযোগ নেই, সেখানে গেটের বাইরে স্বপ্রণোদিত হয়ে আনসার সদস্যদের দায়িত্ব পালনের সুযোগ ছিল না।’

সেদিনের আনসার সদস্যদের দায়িত্ব পালনের পরিধি ও রোস্টার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সোহাগ হত্যার ঘটনা হাসপাতালের তিন নম্বর গেটে। সেদিন সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ৩ নম্বর গেটে রোস্টার অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করেছেন ১ জন আনসার সদস্য। এরপর সেখানে আনসার সদস্যের উপস্থিতি ছিল না।’

‘স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে মোট নিয়োজিত আনসার সদস্যের সংখ্যা ৮০ জন। এরমধ্যে রোস্টার অনুযায়ী, সকাল ৬ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত ২৪ স্পটে দায়িত্ব পালন করেন ২৫ জন আনসার সদস্য। হাসপাতালের কোথায় কীভাবে আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন সেটা নির্ধারণ করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তথা, ডিরেক্টর ও ডিডি(প্রশাসন)। সোহাগ হত্যার ঘটনা বিকেল ৫ টা ৫০ মিনিটে। তখন ঘটনাস্থল ৩ নম্বর গেটে দায়িত্ব পালন অবস্থায় কোনো আনসার সদস্যকে রাখেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সুতরাং সোহাগ হত্যার ঘটনায় আনসার সদস্যদের অবহেলা বা ব্যত্যয় দেখার কোনো সুযোগ নেই।’

 

মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘ঘটনার সময় কয়েক’শ লোক সেখানে উপস্থিত ছিলেন, তাদের কেউ কেউ ভিডিও করছিলেন, তাদের কেউ কিন্তু নিকটস্থ আনসার ক্যাম্পে খবর দেননি, কল করেননি। কেউ ক্যাম্পে গিয়ে ঘটনা সম্পর্কে বলেননি। শুধু তাই নয়, হাসপাতালের আনসারের প্লাটুন কমান্ডারকেও জানান নাই। যখন প্লাটুন কমান্ডার খবর পাইছে তখন তিনি ঘটনাস্থলে দৌড়ে আসেন, তখন ভুক্তভোগীর বুকের ওপরে উন্মত্ততা চলছিল। তখন তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে খবর দেন, বলা হয়, গেটের বাইরে এরকম একটা ঘটনা ঘটছে। এরপরই গেটের ভেতরে টেনে ভিকটিমকে নেয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘আনসারের দায়িত্ব দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকায় সাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু ৩ গেট এলাকায় তখন সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা নাই। তখন রোস্টার অনুযায়ী, আনসার সদস্যদের ডিউটিও ছিল না। তাহলে আনসার সদস্যদের দায়িত্বে অবহেলা কোথায়? কেউ তো খবর দেননি। যতোক্ষণে প্লাটুন কমান্ডার খবর পাইছেন ততোক্ষণে 'ঠু লেট'। ঘটনা শেষ! তাছাড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও কোনো ব্যবস্থা নিতে বলেননি।’

তিনি বলেন, ‘আনসার সদস্যরা সেখানে কিভাবে দায়িত্ব পালন করবেন তার রেসপনসেবলিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা না দিলে আনসার সদস্যরা স্বপ্রণোদিতভাবে যাবার সুযোগ নাই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ডিরেক্টশনই ছিল গেটের বাইরের ঘটনায় আনসার সদস্যদের যাবার সুযোগ নেই।’

এক প্রশ্নের জবাবে ডিজি আরও বলেন, ‘হাসপাতালের ডিরেক্টরের নির্দেশনাই মানবে আনসার। হাসপাতালের ভেতরে যদি ঘটতো তাহলে সেল্ফ ডিফেন্স হিসেবে আনসার সদস্যরা নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করবে। কারণ আনসারের কাজই কর্তব্যরত এরিয়ায় সিভিলিয়ানদের নিরাপত্তা দেয়া। তারা(হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ) যেভাবে নির্দেশনা দেন সেভাবেই দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে রোস্টার, কর্তব্যরত এরিয়ার বাইরে আনসার সদস্যদের যাবার সুযোগ ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা নানা সময় পরিদর্শন করি, নিরাপত্তা ইস্যু দেখি, পরামর্শ দিই। সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের কথা বলি। দায়িত্ব পালনে সমস্যা হলে আমরা আনসার ডিপ্লয়মেন্ট প্রত্যাহারও করি। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সেটা পারি না। যদি সেটা পারতাম তাহলে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে আনসার সদস্যদের প্রত্যাহার করে নিতাম।’