শুক্রবার, ১৮ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ১৮, ২০২৫, ০৭:২০ পিএম

মুগ্ধ শহীদ হওয়ার এক বছর, স্নিগ্ধর আবেগঘন স্মৃতিচারণ

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ১৮, ২০২৫, ০৭:২০ পিএম

বামপাশে শহীদ মুগ্ধ ও ডানপাশে তার ভাই স্নিগ্ধ।

বামপাশে শহীদ মুগ্ধ ও ডানপাশে তার ভাই স্নিগ্ধ।

আজ ১৮ জুলাই, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক বছর পূর্তি। এই দিনে ঢাকার রাজপথে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধসহ কয়েকজন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

এ উপলক্ষে মুগ্ধর স্মরণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন তার যমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ।

নিজের ফেসবুক পোস্টে স্নিগ্ধ লেখেন, তাদের যমজ জীবনের গল্প, ছোটবেলার দুষ্টুমির দিন, বড় হয়ে ওঠার সংগ্রাম, মুগ্ধর সাহস ও স্বপ্নের কথা। স্মৃতিচারণের প্রতিটি বাক্যে উঠে এসেছে এক ভাইয়ের না-বলা কষ্ট, শূন্যতা আর মুগ্ধকে হারানোর গভীর বেদনা।

স্নিগ্ধ লিখেছেন, ‘৯ অক্টোবর ১৯৯৮ সালে আমরা দুই যমজ ভাই জন্ম নেই। ছোটবেলায় গোলগাল শরীর, একরকম চেহারা—অনেক সুবিধাও নিয়েছি, একজন আরেকজনের হয়ে পরীক্ষা পর্যন্ত দিয়েছি। শিক্ষকরা বুঝতেই পারেনি। মাটিতে কিছু পড়লে আমরা দৌড় দিতাম—কে আগে সেটা বাইরে ফেলে আসবে। বারান্দা বন্ধ থাকলে বাথরুমে ফেলে দিয়ে হেসে গড়াগড়ি খেতাম।’

‘স্বর্ণের চেইন থেকে শুরু করে পায়ের জুতো—কিছুই মাটিতে রাখা যেত না আমাদের সামনে। যত বড় হয়েছি, তত প্রতিযোগিতা বাড়তে থাকে। মুগ্ধ পড়ালেখায় সবসময় আমার চেয়ে এগিয়ে থাকত, কিন্তু ফ্রিল্যান্সিংসহ অন্যান্য কাজে ছিল সমানে সমানে লড়াই।’

‘একটা জিনিস বরাবরই আলাদা ছিল—ওর সাহস। ছোটবেলা থেকে শুরু করে বড় হয়ে ওঠা পর্যন্ত, সেই সাহসের অনেক উদাহরণ আছে। প্রায় পুরো বাংলাদেশ আমরা একসঙ্গে ঘুরে বেরিয়েছি—কী করিনি একসঙ্গে!’

মুগ্ধ শহীদ হওয়ার আগের রাতের কথা উল্লেখ করে তিনি লেখেন, ‘১৭ জুলাই ২০২৪—মুগ্ধর মৃত্যুর আগের রাতেও আমরা রাত ১টা পর্যন্ত একসঙ্গে কাজ করেছিলাম। প্রতিদিনের মতো সেদিনও মশারি নিয়ে ঝগড়া হলো। আমি ঘুমিয়ে পড়ার কিছুক্ষণ পর ও নিজেই আমাকে ডেকে তুলল—এমন আগে কখনো হয়নি। ও আমাকে জাগিয়ে মায়ের কথা বলতে লাগল—‘আম্মু সারাজীবন আমাদের জন্য কষ্ট করেছে। কীভাবে ওনাকে নিজের টাকায় ফ্ল্যাটে তুলে দেবে।’

‘ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের ভিডিও দেখাচ্ছিল, বলছিল, ‘এখন খুলনায় থাকা উচিত ছিল। জুনিয়রদের পাশে দাঁড়ানো যেত।’ কথা বলতে বলতে প্রায় ৩টা বাজে। আমার হাতে তখন ৫টা সেলাই ছিল, প্রচণ্ড ব্যথা করছিল। বিরক্ত হয়ে বলেছিলাম, কী শুরু করলি? ঘুমাতে দে। সেটাই ছিল আমাদের শেষ রাত।’

তিনি আরও লেখেন, ‘সবচেয়ে বেশি ঝগড়া হতো জামাকাপড় নিয়ে। আন্দোলনের দিন মুগ্ধ আমার একটা জামা পরে বের হয়। আর যখন শুনি, ওর গায়ে গুলি লেগেছে, তখন আমিও ওর একটা শার্ট গায়ে দিয়ে বের হই। হাসপাতালে গিয়ে দেখি—কী শান্তভাবে ঘুমাচ্ছে! বোঝার কোনো উপায় নেই, ও আর নেই। যে ভাইটা মায়ের পেট থেকে একসঙ্গে বের হয়েছে, সে কীভাবে আমাকে একা রেখে চলে গেল?’

‘সারা রাত লাশবাহী গাড়ির পাশে বসে ছিলাম—যেন প্রতিদিনকার রাত, শুধু পার্থক্য, এবার ওর শরীরে প্রাণ নেই। যতবার ওকে দেখছিলাম, মনে হচ্ছিল ওর শরীর থেকে আলো বের হচ্ছে। জীবনে ওকে এত সুন্দর আর কখনো লাগেনি।’

‘আম্মু-আব্বু তখনো জানতেন না মুগ্ধ নেই। তারা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসছিলেন। ভেবেছিলাম, মা যখন ওকে দেখবে, তখন কী হবে? অবশেষে তারা এলো। মুগ্ধর পাশে গিয়েই জানতে পারল, সে আর নেই।’

‘সেইদিন শক্ত-সবল ভাইকে দেখলাম, কীভাবে লাশের গাড়ি ধরে শিশুর মতো কাঁদছিল। কারণ, পুরো রাস্তায় আব্বু-আম্মুর সামনে নিজেকে সামলে রেখেছিল—ওর চোখের পানি সেদিন একবারেই ঝরল।’

‘আম্মু বলত—‘তোমাদের দুজনকে একসঙ্গে মানুষ করতে করতে আমার জীবনটা পানি হয়ে গেছে। যাদের যমজ সন্তান আছে তারা জানে, তাদের বড় করা কতটা কঠিন। সেই আম্মুকে দেখলাম নির্বাক হয়ে মুগ্ধর কপালে শেষ চুমু খেলো। তখন মনে হচ্ছিল, এক মা চুমু দেয়, আর এক মা—যাকে আমরা ‘দেশ’ বলি—সে গুলি চালায়।’

স্মৃতিচারণের শেষ অংশে স্নিগ্ধ লিখেছেন, ‘আজ এতটুকুই থাক। কীভাবে মুগ্ধকে কবর দেওয়া হলো? কীভাবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ব্ল্যাঙ্ক চেক আর হুমকি-ধমকির মাধ্যমে আমাদের কিনে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল—সেসব গল্প আরেকদিন বলব।’

‘যারা বাঁচে, তাদের দায় বেশি। কথা আছে—‘সত্য মরে না।’ মুগ্ধর গল্পও শেষ হবে না—কারণ ওর স্বপ্নগুলো এখন আমাদের শ্বাসে বেঁচে আছে।’

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!