ঢাকা শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫

বিমানবন্দরের ‘ফ্লাইং অ্যাপ্রোচ এরিয়া’ থেকে মাইলস্টোনের মতো স্থাপনা সরানোর প্রস্তাব

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ২৫, ২০২৫, ০৯:৩৮ পিএম
ঢাকার হযরত শাহ্‌জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এলাকার চিত্র। ছবি- গুগল ম্যাপ

রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কারিগরিভাবে বৈধ হলেও এটি কার্যত অনিরাপদ এলাকায় অবস্থিত। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অ্যাপ্রোচ এরিয়ার মধ্যে পড়েছে। বিমানবন্দরের অ্যাপ্রোচ এরিয়ায় থাকা স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ জনসমাগম হয় এমন সব প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেওয়া উচিত।

শুক্রবার (২৫ জুলাই) বাংলামটরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের  (বিআইপি) কনফারেন্স রুমে ‘মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনা: জননিরাপত্তা এবং উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রের দায় ও করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।

বিমানবন্দরের ফ্লাইং অ্যাপ্রোচ জোনের আগে ও পরের চিত্র। ছবি- সংগৃহীত

সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন বিআইপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ তামজিদুল ইসলাম।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিমানবন্দরের রানওয়ের পর ৫০০ ফুট এলাকায় কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা যায় না। এর পরের ১৩ হাজার ফুট বা প্রায় ৪ কিলোমিটার অঞ্চলকে অ্যাপ্রোচ এরিয়া বলা হয়, যেখান দিয়ে বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যাপ্রোচ এলাকায় ১৫০ ফুট উচ্চতার স্থাপনা নির্মাণে সরকারের নগর কর্তৃপক্ষ ও বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের দিক থেকে কোনো বাধা নেই। সেসব স্থাপনার কী ধরনের ব্যবহার হবে, সে বিষয়েও কোনো নির্দেশনা নেই সরকারের সংস্থাগুলোর।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) ‘মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনা: জননিরাপত্তা এবং উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রের দায় ও করণীয়’ শীর্ষক বাদ সম্মেলন। ছবি- সংগৃহীত

প্রতিবেদনে বলা হয়, ফ্লাইং অ্যাপ্রোচ জোনে এ ধরনের স্থাপনা কারিগরিভাবে বৈধ হলেও কার্যত অনিরাপদ।

প্রতিবেদনে পরিকল্পনাবিদ তামজিদুল ইসলাম বলেন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা ড্যাপে অ্যাপ্রোচ এলাকার স্থাপনার উচ্চতা নিয়ন্ত্রণের কথা বলা আছে। কিন্তু সেখানকার ভূমির কী ধরনের ব্যবহার হবে তা উল্লেখ নেই। গণজমায়েত হয় এ রকম কোনো স্থাপনার জন্য সেখানকার ভূমি ব্যবহার করা উচিত নয়। কৃষিজমি ও সবুজায়ন করা যেতে পারে, তবে এমন কিছু করা যাবে না, যাতে সেখানে পাখি আসে।

সংবাদ সম্মেলনে বিআইপির সভাপতি পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, অ্যাপ্রোচ এরিয়া থেকে স্কুল, কলেজ, মসজিদ ও মাদ্রাসার মতো জনসমাগম হয় এমন সব স্থাপনা সরাতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা ঘটলে মৃত্যুর মিছিল ঠেকানো সম্ভব হবে না। বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের জায়গা তদন্ত করে যত ধরনের ব্যত্যয় হয়েছে, সেগুলো অনুসন্ধান করতে হবে। স্থাপনার উচ্চতায় ব্যত্যয় থাকলেও বাড়তি অংশ ভেঙে ফেলতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা থেকে বিমানবন্দর দূরে ছিল। ঢাকাকে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ বলে যে একটা জিনিস আছে তা ভুলে যাওয়া হয়েছে। তা না হলে বিমানবন্দরের উড্ডয়ন-অবতরণের পাশে স্কুল-কলেজের মতো অবকাঠামো হওয়ারই কথা নয়। মৌলিক ব্যাকরণ ভুলে যাওয়া হয়েছে। জনবহুল এলাকায় প্রশিক্ষণ বিমান উড়ানোর সুযোগ নেই।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসানের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিআইপির সহসভাপতি পরিকল্পনাবিদ শাহরিয়ার আমিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ তামজিদুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ পরিকল্পনাবিদ ড. মোসলেহ উদ্দীন হাসান, বোর্ড সদস্য আবু নাঈম সোহাগ প্রমুখ।

বিআইপির প্রস্তাবনা ও কর্মপরিকল্পনা:

১. সরকারের উদ্যোগে দুর্ঘটনা কবলিত এলাকায় এবং ফ্লাইং অ্যাপ্রোচ জোনে ও ফানেলের এলাকার নির্ধারিত সীমানায় জনসমাবেশ হয় এমন কী কী স্থাপনা আছে এবং টেকনিকাল এসেসমেন্ট করে সেখানকার কোন কোন ভবনের অনুমোদন নেই তা নির্ণয় করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ধরনের কাজে বিআইপি স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী।

২. পরবর্তী কর্মপরিকল্পনায় ঢাকা শহরে পরিকল্পনা সম্পর্কিত যে সকল ব্যত্যয় আছে তা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।

৩. যেই ব্যক্তি ড্যাপ, ডিএমডিপি-এর অনুমোদিত ভূমি ব্যবহারের ব্যত্যয় ঘটিয়ে স্কুল পরিচালনা করছেন, তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রণালয়, রাজউকসহ যে সকল প্রতিষ্ঠান ও মন্ত্রণালয়গুলোর দায় আছে তাদের দায় নিশ্চিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

৪. সর্বোপরি নিরাপদ ও কার্যকরী নগরায়নের জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

৫. মহাপরিকল্পনাসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়নে ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মহলের অবৈধ প্রভাব বন্ধ করা এবং বল প্রয়োগকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া।

৬. দেশের পরিকল্পিত ও টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে নগর ও উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাসমূহে পরিকল্পনাবিদদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা।

৭. দেশের পরিকল্পিত ও টেকসই উন্নয়ন এবং মহাপরিকল্পনাসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা ও আইনের বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ী, শিল্প কারখানার মালিক, রাজনীতিবিদ, আমলা, স্বার্থসংশ্লিষ্ট পেশাজীবী, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি সংস্থাসমুহের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া।