আগস্টের প্রথম সপ্তাহেই ত্রায়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হতে পারে। সে অনুযায়ী নির্বাচন সংক্রান্ত বার্তা নির্বাচন কমিশনের কাছে পৌঁছানো হবে। জানা গেছে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের লক্ষে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে অনুরোধ করবে সরকার।
অন্যদিকে আগামী ৫ আগস্টের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ ঘোষণা করার বিষয়টি এখন অনেকটাই নিশ্চিত। এরই মধ্যে জুলাই সনদের একটি খসড়া প্রস্তুত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ করবে কমিশন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ এ বিষয়ে গতকাল রোববার জানান, আজ সোমবার জুলাই সনদের খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোকে পাঠানো হবে। জাতীয় সনদ সইয়ের জন্য চলমান আলোচনায় একটি দিন বরাদ্দ রাখা হবে।
আলী রীয়াজ আরও জানান, সনদের খসড়া নিয়ে সংলাপে আলোচনা করা হবে না। যদি বড় রকমের মৌলিক আপত্তি ওঠে, তাহলে আলোচনায় আনব, না হলে আনব না। রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে মতামত দেওয়া হলে সেটা সন্নিবেশিত করে প্রাথমিক সনদে ভূমিকা-পটভূমি থাকবে এবং অঙ্গীকারের জায়গা থাকবে।
সর্বশেষ ২২ জুলাই থেকে তিন দফায় বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এর মধ্যে ২৬ জুলাই ১৪টি দল-জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে করেন প্রধান উপদেষ্টা। এই বৈঠক শেষে বেরিয়ে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ক্যাটাগরিক্যালি (সুস্পষ্টভাবে) বলেছেন, তিনি আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে নির্বাচনের সময়সীমা, তারিখ ঘোষণা করবেন। আলোচনার সবচেয়ে ফলপ্রসূ বিষয় হচ্ছে এটা। দেশে যে অরাজকতা, তার একমাত্র সমাধানের পথ নির্বাচন—এটা সরকার বুঝতে পেরেছে।
মোস্তফা জামাল হায়দারের এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের দিনক্ষণ বা নির্দিষ্ট সময়সীমার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
নির্বাচনের সময়সীমা ও তারিখ ঘোষণার বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রধান উপদেষ্টা দুই–চার দিনের মধ্যে যদি নির্বাচনের সময় ঘোষণা করেন, খুশিই হব। কারণ, আমাদের দাবিই তো এটা।
অবশ্য বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও রয়েছে। জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা আসলেই কী বলেছেন, সেটা আমরা স্পষ্ট করে জানি না। যদি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হয়, তারপরও নির্বাচনের সুস্পষ্ট তারিখ নির্ধারণ করা হবে অপরিপক্বতা। কারণ, প্রয়োজনীয় সংস্কার ও গণহত্যার বিচার নির্বাচনের পূর্বশর্ত। এ ছাড়া জুলাই সনদ ঘোষণার আগে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হবে জুলাইয়ের চেতনাকে অবজ্ঞা করা। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ না করে, বিচার দৃশ্যমান না করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হবে ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়ার অবস্থা।
আগামী চার–পাঁচ দিনের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ চূড়ান্ত হয়ে যায়, তাহলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা নিয়ে আপত্তি নেই বলে জানান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব।
তবে বিভিন্ন দলের মধ্যে এমন আলোচনাও আছে, জুলাই সনদ চূড়ান্ত করার বিষয়টি যাতে কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত না হয়, সে জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনের বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে আশ্বস্ত করতে চাইছে সরকার।