বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির ভেতরে বিভিন্ন রকম নির্বাচনি তৎপরতা লক্ষণীয়। নির্বাচনি জোট গঠন নিয়েও বিভিন্ন দলের সাথে বৈঠক-আলোচনা করতে শোনা যাচ্ছে। এরই মধ্যে বিএনপির শীর্ষ নেতা তারেক রহমান বলেছেন জনগণের ভোটে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যুক্ত সব দলকে নিয়ে সরকার গঠন করবে।
বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ সারাক্ষণ রাজনৈতিক চর্চার মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পছন্দ করে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও আগ্রহ যে, কাদের নিয়ে বিএনপি গঠন করতে যাচ্ছে নির্বাচনি জোট। এ বিষয়ে বিএনপি নেতারা বলছেন, যুগপৎ আন্দোলনে যারা ছিলেন, তাদের সঙ্গে জোট হতে পারে, আগামীর সরকারেও তারা থাকতে পারে। এ ছাড়া কয়েকটি ইসলামি ঘরানার দলের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে, তাদের সঙ্গে জোট হতে পারে। তবে এসব বিষয় এখনো চূড়ান্ত নয়। ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে জোট গঠনের বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। কীভাবে কী করা যায় তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে।
মতাদর্শিক দূরত্বের কারণে জামায়াতের সঙ্গে বড় ইসলামি দলগুলোর ঐক্য না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এই সুযোগে ইসলামপন্থি কয়েকটি দলের সঙ্গে বিএনপির হতে পারে ‘সমঝোতা’। তবে আশা করা যায়, নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর সবকিছু দৃশ্যমান হবে।
সাধারণত তপশিলের পর জোট বা নির্বাচনি সমঝোতা- যাই বলা হোক না কেন, তা হয়ে থাকে। সব দলের সঙ্গে বিএনপির সুসম্পর্ক আছে। তবে এখনো এ নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক নির্বাচনি সমঝোতা হয়নি।
পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, দেশের বিগত নির্বাচনে ভোটের ইতিহাস দেখলে দোদুল্যমান ভোটারদের বেশির ভাগ ভোট পড়েছে ‘ধানের শীষ’ ও ‘নৌকা’ প্রতীকে। যেহেতু আওয়ামী লীগ ভোটের মাঠে নেই, তাই ধারণা করা হচ্ছে, এসব ভোট ধানের শীষে যাবে। এখানে ইসলামপন্থি দলগুলোর বাক্সে দোদুল্যমান ভোট ততটা যাওয়ার রেকর্ড নেই। কারণ তাদের ভোট অনেকটা ‘ফিক্সড’। সে কারণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিরোধী দল নিয়ে নাটকীয় কিছু ঘটতে পারে।
এদিকে বিএনপির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো যুগপৎ আন্দোলন করেছে। জনগণের ভোটে সরকার গঠন করতে পারলে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে থাকা দলগুলো নিয়ে ‘জাতীয় সরকার’ গঠন করবে বলে ইতিমধ্যেই বিএনপি জানিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি বিগত দিনে যেসব মিত্রদের নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে, তাদের নিয়ে জোট করতে পারে। এ জোটে মুহাম্মাদ মামুনুল হকের বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ কয়েকটি ইসলামপন্থি দলও থাকতে পারে।
এর কারণ হিসেবে বিএনপির একাধিক নেতা সূত্রে জানা গেছে, মুহাম্মাদ মামুনুল হকের পরিবারের সঙ্গে জিয়া পরিবারের খুবই সুসম্পর্ক। তার বাবা প্রয়াত শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটে ছিলেন।
নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে ততই নানা মেরূকরণ দেখা যাবে। বিগত নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, ‘ওয়ানম্যান শো’-এমন অর্ধশতাধিক রাজনৈতিক দলও আছে, যাদের ভোটের আগে তৎপরতা বাড়বে। কোনো কোনো রাজনৈতিক দল জোট ভারি করতে তাদেরও সঙ্গে রাখতে পারে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে ওইসব দলের তেমন কোনো ভোট নেই।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, জামায়াতে ইসলামী এককভাবে বা বিএনপির বাইরে কোনো জোট গঠন করলেও ভোটের মাঠে সেভাবে সুবিধা নাও করতে পারে।