গাজায় মানবিক সংকট মোকাবিলায় সহায়তা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে মিশরে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূতের সাথে বৈঠক করেছেন মাস্তুল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা কাজী রিয়াজ রহমান। বর্তমানে সংগঠনের একটি টিম কায়রোতে অবস্থান করে সরাসরি ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
ফিলিস্তিনির রাষ্ট্রদূত দিয়াব আল-লুহ বৈঠকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ হয়েও ফিলিস্তিনি মানুষের পাশে যেভাবে দাঁড়িয়েছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তিনি জানান, বর্তমানে প্রায় দেড় লাখ গাজার শরণার্থী পরিবার মিশরে আশ্রয় নিয়েছে।
একসময় সচ্ছল হলেও তারা এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য ও চিকিৎসার তীব্র সংকটে রয়েছে। ফিলিস্তিনি দূতাবাস এসব পরিবারকে তালিকাভুক্ত করার কাজ করছে। পাশাপাশি মিশরে অধ্যয়নরত সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থী প্রতিমাসে ন্যূনতম আর্থিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন। যুদ্ধের কারণে শরণার্থী ক্যাম্পে থাকা শিশুদের জন্যও দূতাবাস অনলাইনের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
মাস্তুল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক কাজী রিয়াজ রহমান বলেন, ‘গাজায় খাদ্য, পানি ও চিকিৎসার তীব্র সংকট চলছে। ২০২৪ সাল থেকে আমরা ফিলিস্তিনের গাজাবাসীদের জন্য জরুরি খাদ্য, পানি, চিকিৎসা ও শিশু খাদ্য সরবরাহ করে আসছি। বর্তমানে মিশরে অবস্থানরত আমি এবং আমার টিম সরাসরি যুদ্ধাহত শরণার্থীদের উন্নত চিকিৎসা এবং বিধবা ও এতিম শিশুদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করছি।’
তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত আমাদের ধন্যবাদ জানিয়ে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করছি এবং যতদিন পারব গাজাবাসীর পাশে থাকব।’
সবশেষে, ফিলিস্তিন দূতাবাস মাস্তুল ফাউন্ডেশনকে আশ্বস্ত করেছে যে, তারা ভবিষ্যতেও প্রতিটি মানবিক উদ্যোগে সহযোগিতা করবে। অন্যদিকে মাস্তুল ফাউন্ডেশনও জানিয়েছে, এই কার্যক্রম সাময়িক নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে চলবে। গাজাবাসীর দুর্দশা লাঘবে তারা নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নেবে এবং আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের মানবিক অবস্থান আরও দৃঢ় করবে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, ফিলিস্তিনির রাষ্ট্রদূত দিয়াব আল-লুহ, কাউন্সিলর নাজি আল নাজি, মাস্তুল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক কাজী রিয়াজ রহমান, মাস্তুল ইন্টারন্যাশনাল স্বেচ্চাসেবক মুহাম্মদ জায়েদ তরফদার ও আল আযহার গ্র্যাজুয়েট ও সংবাদকর্মী মিসর, কায়রো ঈসা আহমাদ ইসহাক।
মাস্তুল ফাউন্ডেশন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে মাস্তুল ফাউন্ডেশন দেশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষ ও শিশুদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে আসছে।
মাস্তুল ফাউন্ডেশনের মানবিক কার্যক্রমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: করোনা মহামারির সময় দাফন সেবা প্রদান, ২০২২ ও ২০২৪ সালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে জরুরি ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ, এবং ২০২৩ সালের তুরস্কের ভূমিকম্পে বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে মানবিক সহায়তা প্রদান।
মাস্তুল ফাউন্ডেশনের অন্যতম সফল প্রকল্প ‘যাকাত স্বাবলম্বী’-এর মাধ্যমে অসংখ্য অসহায় ব্যক্তি ও যুব সমাজের জন্য স্থায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে, যা তাদের আত্মনির্ভরশীল করে তুলছে। রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিদিন বিনামূল্যে অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিতদের একবেলার খাবার পৌঁছে দিচ্ছে। এ ছাড়াও ঢাকার হাজারীবাগ বারইখালি এলাকায় নিজস্ব মাদ্রাসা, সেল্টারহোম, এতিমখানা ও মেহমানখানা রয়েছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন