খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলায় ‘দুষ্কৃতকারীদের’ হামলায় তিনজন পাহাড়ি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন মেজরসহ ১৩ জন সেনাসদস্য, গুইমারা থানার ওসিসহ তিনজন পুলিশ সদস্য এবং আরও অনেকে।
এ ঘটনায় রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে অতি শিগগির তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো অপরাধী ছাড় পাবেন না। এই সময়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধৈর্য ধারণ ও শান্ত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
খাগড়াছড়িতে কয়েক দিন ধরে এক শিক্ষার্থীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় অবরোধ, মিছিল ও সহিংসতা ঘটছে। গত শনিবার জুম্ম ছাত্র-জনতার ডাকে সড়ক অবরোধ চলাকালে ‘দুষ্কৃতকারীদের’ হামলায় তিনজন নিহত হন এবং অনেকে আহত হন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ যৌথভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা করছে। খাগড়াছড়ি জেলা সদর ও পৌরসভায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এর ফলে এলাকায় পরিস্থিতি থমথমে রয়েছে।
এর আগে, বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে ‘ধর্ষণের প্রতিবাদে’ আন্দোলনকারীদের সড়ক অবরোধ আর প্রশাসনের জারি করা ১৪৪ ধারার মধ্যেই গুইমারা উপজেলায় ব্যাপক গোলাগুলি ও সংঘর্ষে অন্তত তিনজনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
এদিকে, সংঘর্ষের পর গুইমারা উপজেলায় মারমাদের বাজার হিসেবে পরিচিত রামসু বাজারে দোকানপাট ও বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ ও গুলিতে আহত কিছু ব্যক্তির ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
সংঘর্ষের সূচনায় ‘কয়েকজন সেনা সদস্যের ওপর হামলা হয়েছে’ –এমন খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পক্ষ প্রচার হলেও আইএসপিআর কিংবা জেলা প্রশাসন এ প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করেনি।
বেলা তিনটার দিকে জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন যে, সহিংসতার খবর পেয়ে তিনি ও পুলিশ সুপার গুইমারার দিকে রওনা হয়েছেন।
স্থানীয় সাংবাদিকরা অবশ্য জানিয়েছেন, সদর থেকে গুইমারার পথে পথে আন্দোলনকারীদের ব্যারিকেড থাকায় বেলা পাঁচটা পর্যন্ত প্রশাসনের কর্মকর্তারা গুইমারা গিয়ে পৌঁছাতে পারেননি।
সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম অঞ্চলের ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ বলেছেন, ‘পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে’।
পাহাড়ি কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে ‘জুম্ম ছাত্র জনতা’র ডাকে জেলার বিভিন্ন জায়গায় আজ সকাল থেকেই রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা। শহরের অধিকাংশ দোকানপাটই আজ বন্ধ দেখা গেছে এবং শহরে কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়নি।
গত মঙ্গলবার রাতে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী কিশোরী ধর্ষণের শিকার হন বলে এ ঘটনায় দায়ের করার মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ একজনকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নিয়েছে।
বুধবার থেকে জুম্ম ছাত্র- জনতা ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। তাদের ডাকে বৃহস্পতিবার আধাবেলা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়। পরে শুক্রবার নারী নিপীড়ন বিরোধী সমাবেশ পালন করে আন্দোলনকারীরা। এ সময় সমাবেশ চলাকালে খাগড়াছড়ি সদরে চেঙ্গি স্কয়ারে সেনাবাহিনীর গাড়িতে ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।
এরপর শনিবার সকাল সন্ধ্যা অবরোধ ডাকা হয়। সেদিন পিকেটিং চলাকালে বাঙ্গালিদের একটি দল বাধাপ্রাপ্ত হলে উত্তেজনা তৈরি হয়। এ ঘটনার জেরে দুই পক্ষের লোকজন মুখোমুখি হয়ে গেলে ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। সেদিনে বেলা সাড়ে ১২টার থেকে চারটা পর্যন্ত সদরের চারটি পয়েন্টে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়।
এ সময় কেউ কেউ ফাকা গুলি করছে এমন ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে আসে। বেলা দুইটার পর সদর, পৌর এলাকা ও গুইমারায় ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন