বাংলাদেশে পাঁচটি সংকটাপন্ন বেসরকারি ব্যাংক একীভূত করে একটি শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ব্যাংক গঠনের প্রস্তাব নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে এই নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠকে ব্যাংকিং খাতের বর্তমান সংকট, মূলধন ঘাটতি, শ্রেণিকৃত ঋণ ও তারল্য সংকট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। দেশের ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা পুনঃস্থাপন, শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং আমানতকারীদের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
যে পাঁচটি ব্যাংক একীভূত হয়ে নতুন ব্যাংক গঠন করবে, সেগুলো হলো:
- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক
- গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক
- ইউনিয়ন ব্যাংক
- এক্সিম ব্যাংক
- সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক
আইসিবি ইসলামিক ব্যাংককে এই প্রক্রিয়ার আওতা থেকে বাইরে রাখা হয়েছে, কারণ তাদের শেয়ার মালিকানা সংক্রান্ত উচ্চ আদালতে মামলা চলমান।
উপদেষ্টা পরিষদ ব্যাংক ও বিমা খাতে আমানত সুরক্ষা আইনকে যুগোপযোগী করার জন্য সংশোধনী অনুমোদন করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উল্লিখিত ব্যাংকগুলোর শ্রেণিকৃত ঋণ, মূলধন ঘাটতি এবং তারল্য সংকট এতটাই গভীর যে, স্বাভাবিক অবস্থায় তারা আর আর্থিক স্থিতিশীলতা ফিরে পাবে না।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিগত এক বছরের বেশি সময় ধরে তারল্য সহায়তা প্রদান করা সত্ত্বেও ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা উন্নতি হয়নি; বরং তাদের তারল্য সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে।ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি, শ্রেণিকৃত ঋণ ও বিনিয়োগ, অগ্রিমের হার এবং প্রভিশন ঘাটতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তাদের আমানতকারী ও অন্যান্য পাওনাদারদের প্রদেয় পাওনা পরিশোধে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এটি দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর হুমকিস্বরূপ।
নতুন ব্যাংকটি বাণিজ্যিকভাবে ও পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে পরিচালিত হবে। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রস্তাবিত ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন ৪০ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন প্রয়োজন।
বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের ১৫ হাজার কোটি টাকা বেইল-ইন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মূলধনে রূপান্তর করা যেতে পারে এবং অবশিষ্ট ২০ হাজার কোটি টাকা সরকার মূলধন হিসেবে প্রদান করতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, এই একীকরণের মাধ্যমে দেশের ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং টেকসই ঋণ প্রবাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। উপদেষ্টা পরিষদ আশা করছে, নতুন ব্যাংকটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বিনিয়োগ পরিবেশকে আরও শক্তিশালী করবে।