গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার বিচার দাবিতে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারগুলোর সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ আজ মানববন্ধন করেছে। এতে বিগত সরকারের সময়ে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনরা অংশগ্রহণ করেন। তারা অবিলম্বে গুম-খুনের সঙ্গে জড়িতদের বিচারসহ ৮ দফা দাবি জানিয়েছে।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–সংলগ্ন হাইকোর্ট ভবনের প্রধান গেটের সামনে মায়ের ডাক সংগঠনটি মানববন্ধনের আয়োজন করে।
মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম বলেছেন, গুমের শিকার পরিবারগুলোর আওয়াজ আন্তর্জাতিক মহলে পৌঁছাচ্ছে, কিন্তু দেশের সরকারের কাছে যাচ্ছে না। সরকারে এখনো অপশক্তি রয়ে গেছে। সব তথ্য জানাতে এখনো বাধা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, গুম কমিশন হয়েছে, ট্রাইব্যুনাল হয়েছে। এখন পর্যন্ত তারা গুমের মাত্র দুটি অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিয়েছে। কিন্তু অপরাধীদের সেনানিবাসে সুরক্ষিত রাখা হয়েছে। এই সময়ে এসে রাস্তায় বিচারের জন্য দাঁড়াতে হচ্ছে। আমরা সবার খোঁজ চাই।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল মালেক প্রশ্ন রেখে বলেন, গত ১৫ বছর কোনো ন্যায়বিচার ছিল না। এই পরিবারগুলো কেন এখনো ন্যায়বিচার পাচ্ছে না?
গুমের শিকার কাজী ফরহাদের স্বজন আমানুল হক আমান বলেন, স্বাধীন হওয়ার পরও তাঁদের রাস্তায় দাঁড়াতে হচ্ছে। তাঁরা সংখ্যা জানতে চান না। গুম কমিশন শুধু আয়নাঘর আর যাঁরা ফিরে এসেছেন, তাঁদের কথা বলছে। কিন্তু যাঁরা ফিরে আসেনি, তাঁদের কথা বলে না।
গুমের শিকার খালেদ হোসেনের স্ত্রী সৈয়দা শারমিন সুলতানা পরিচয় দিতে গিয়ে দ্বিধায় থাকেন। তাঁর পরিচয় দাঁড়িয়েছে গুম খালেদের স্ত্রী হিসেবে। তিনি বলেন, ‘এক যুগ ধরে ছবি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। প্রধান উপদেষ্টার কাছে গেলাম। গুম কমিশন হলো। কিন্তু তারা আমাদের কোনো খবর দেয় না।’
সৈয়দা শারমিন সুলতানা আরও বলেন, তিনি চান না তাঁর সন্তান এভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বাবার খোঁজ চাইবে। এই বিচার প্রহসনের। এসব ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের আলাদা করে রাখা হচ্ছে। বৈষম্য থেকেই গেল।
শাহরিয়ার কবির রাতুল বলেন, গুম কমিশন এখন পর্যন্ত অন্ধকারে রেখেছে। যাঁরা ফিরে এসেছেন, তাঁদের নিয়েই তারা ব্যস্ত। অথচ আমার বাবা ও দাদাকে একসঙ্গে গুম করা হয়। তারা মৃত না জীবিত, তা–ও জানি না। দেশ কি তাঁকে এই উত্তর দেবে?
গত ১৪ মাসে একাধিকবার মানববন্ধন, বিক্ষোভ করেছেন তারা। সম্প্রতি গুমের দুটি মামলায় ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে প্রসিকিউশন। জারি হয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানা। যার প্রেক্ষিতে সেনা হেফাজতে রয়েছে সাবেক-বর্তমান ১৫ সেনা কর্মকর্তা।