ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ (PTD)-এর উদ্যোগে আজ রাজধানীর বিটিসিএল প্রধান কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ খসড়া বিষয়ে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যবের উপস্থিতিতে এক অংশীজন পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রতিনিধিত্ব করেছে: ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল), টেলিফোন শিল্প সংস্থা (টিএসএস), গ্রামীণফোন, বাংলালিংক ও টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডসহ অন্যান্য অপারেটর, সামিট কমিউনিকেশন, বাহন লিমিটেড, ফাইবার অ্যাট হোম, ই-ডট-কো, ক্যাপিটাল ল’ চেম্বার, টেক কোম্পানি ‘শিখো’সহ নানান পক্ষ। এ ছাড়াও বিশিষ্ট নাগরিক ও বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় খসড়া সংশোধনী অধ্যাদেশটির প্রণয়ন প্রক্রিয়া, বিষয়বস্তু ও লক্ষ্য সবিস্তারে তুলে ধরা হয়। বিশেষ সহকারী বলেন, ‘এই সংশোধনী প্রণয়নে একাধিক ধাপে আলোচনা, খসড়া প্রস্তুতি এবং পুনর্লিখনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে; প্রায় প্রতিটি সংশোধনী ধারা চার থেকে পাঁচবার পুনর্লিখিত হয়েছে যাতে আইনটি সময়োপযোগী, সুশাসনভিত্তিক এবং প্রযুক্তিগতভাবে যথার্থ হয়।’
উপস্থাপিত খসড়ার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হচ্ছে, কমিশনের জবাবদিহিতার লক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে ‘স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ কমিটি’ গঠন, জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ লাইসেন্সসমূহের অনুমোদনে রাজনৈতিক চাপ ও প্রশাসনিক দায়ভার সমস্যা সমাধানে ৫ মন্ত্রীর সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ কমিটি প্রস্তাব, লাইসেন্স প্রাপ্তির সময় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস, কমিশন ও সরকারের ক্ষমতার ভারসাম্যকরণ, ট্যারিফ নির্ধারণ প্রক্রিয়া সহজীকরণ, সালিশি (Arbitration) ব্যবস্থার প্রবর্তন, গণশুনানীর বিধানের বিস্তৃতিকরণ ও বাধ্যতামূলক স্বচ্ছতা আনয়ন, জরিমানা ও অর্থদণ্ডের যৌক্তিকীকরণ এবং সর্বাধিক আলোচিত ৯৭ ধারার পুনঃসংজ্ঞায়ন।
অংশীজনরা ইন্টারনেট বন্ধ ও সীমিতকরণকে নিষিদ্ধ করাকে সাধুবাদ জানান। এ ছাড়াও, দায়বদ্ধতা-নির্ভর ইন্টারসেপশন কাঠামো এবং CLIP (Central Lawful Interception Platform) সম্পর্কিত ধারাগুলোকে সমন্বিতভাবে স্বাগত জানান। মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর প্রতিনিধিরা তাদের সহিত প্ল্যাটফর্মের সংযোগের ব্যাপারে কিছু মতামত উপস্থাপন করেন এবং বলেন, নতুন কাঠামো আইনানুগ তদারকি ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করবে, ফলে অপারেটরদের ওপর চাপ কমবে এবং নাগরিক অধিকার, ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, সকল দিকেই ভারসাম্য নিশ্চিতকরণ সম্ভব হবে।
সভায় সালিশি প্রক্রিয়া সংযোজনকে অংশীজনরা বিশেষভাবে প্রশংসা করেন। এর ফলে বিটিআরসি ও অপারেটরদের মধ্যকার নিরীক্ষা ও আর্থিক বিরোধ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে, যা বাণিজ্যিক স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগের আস্থা বৃদ্ধি করবে। অংশীজনের মতামত পর্যালোচনা করে খসড়া হালনাগাদ করার কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী।
সভার সমাপনীতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, ‘অংশীজনদের মতামত এই খাতের বাস্তব চ্যালেঞ্জ ও প্রয়োজনকে প্রতিফলিত করে। সরকারের লক্ষ্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও আধুনিক টেলিযোগাযোগ আইন তৈরি করা, যা বিনিয়োগ, উদ্ভাবন, দায়বদ্ধতা ও নাগরিক সুরক্ষা, সবকিছুর সমন্বয় ঘটাবে।’
সংশোধন অধ্যাদেশ সম্পর্কিত বিস্তারিত ও লিখিত মতামত ১৫ নভেম্বরের মাঝে secretary@ptd.gov.bd ই-মেইলে পাঠানোর জন্যে অনুরোধ জানান বিশেষ সহকারী। সভায় গৃহীত মতামত ও প্রস্তাবনাসমূহ পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সংশোধনী অধ্যাদেশে অন্তর্ভুক্ত করার আশ্বাস দেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ দল।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন