মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার বাউলশিল্পী আবুল সরকারকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করেছেন দেশের ২৫৮ জন বিশিষ্ট নাগরিক।
রোববার (২৩ নভেম্বর) অধ্যাপক খালিকুজ্জামান ইলিয়াস স্বাক্ষরিত এক যৌথ বিবৃতিতে তারা এই দাবি জানান।
বিবৃতিতে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই সংগঠিতভাবে ধর্মীয় উগ্রবাদ বেড়ে উঠেছে। একটি বিশেষ গোষ্ঠী নিজেদের ইসলাম ধর্মের একচ্ছত্র রক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে দেশব্যাপী শুদ্ধি-অভিযানে নেমেছে, যার অংশ হিসেবে দুই শতাধিক মাজার ভাঙচুর, কবর থেকে লাশ উত্তোলন ও পোড়ানো, বাউল-ফকিরদের চুল কেটে দেওয়া, নারীদের পোশাক নিয়ে হেনস্তা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন সামাজিক আয়োজন পণ্ড করার ঘটনা ঘটছে।
তাদের অভিযোগ, এই উগ্র গোষ্ঠী সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন, সাংস্কৃতিক চর্চা, মতপ্রকাশ ও আধ্যাত্মিক অনুশীলনকে লক্ষ্য করে সহিংসতা চালাচ্ছে এবং ‘ধর্মীয় অবমাননা’র অভিযোগকে তাদের মূল হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। অথচ জুলাই আন্দোলনের মর্মবাণী ছিল একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন, যা অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণাতেও প্রতিফলিত হয়েছিল।
নাগরিকরা অভিযোগ করেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মবসন্ত্রাস প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিয়ে নীরব ভূমিকা পালন করছে, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে হামলার শিকার ব্যক্তিদেরই মিথ্যা মামলায় হয়রানি করা হচ্ছে। বাউলশিল্পী আবুল সরকারের গ্রেপ্তারকে তারা এই নীরব প্রশ্রয়ের সর্বশেষ উদাহরণ বলে উল্লেখ করেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অভ্যুত্থানের দেড় বছর পরেও ধর্মীয় উগ্রবাদকে দমন না করে বরং তাকে প্রশ্রয় দেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এতে গণতন্ত্রমনা মানুষের আস্থা ক্ষুণ্ন হওয়ার পাশাপাশি পরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তির পুনরুত্থানের পথ সুগম হবে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে একটি সম্ভাব্য ধর্মীয় উগ্রবাদী রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরার সুযোগ পাবে ষড়যন্ত্রকারীরা—যা দেশের ভবিষ্যতের জন্য মারাত্মক উদ্বেগজনক।
নাগরিকরা অবিলম্বে মবসন্ত্রাস বন্ধ, ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দৃঢ় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোরালো আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে রয়েছেন: অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান, অধ্যাপক আজফার হোসেন, আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, আইনজীবী মীরু খানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তি।

