নিজস্ব উপকূলে মার্কিন নৌসেনাদের উপস্থিতি বৃদ্ধি টের পাওয়ার পর মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) সারা দেশে বড় পরিসরে সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেয় ভেনেজুয়েলা। দুই দিন পর বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রও ‘সাউদার্ন স্পিয়ার’ নামে একটি অভিযান ঘোষণা করেছে। তারা বলছে, পশ্চিম গোলার্ধে ‘মাদক চোরাচালানকারীদের’ লক্ষ্য করে এ অভিযান চালানো হবে।
উত্তেজনা দ্রুত বাড়তে থাকায় কারাকাসে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। সেখানকার কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানোর অজুহাত হিসেবে এমন তৎপরতা চালাচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) কারাকাসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান গিল বলেন, ‘আমরা মার্কিন সাম্রাজ্যকে বলব, তারা যেন দুঃসাহস না করে: আমরা প্রস্তুত আছি।’
কিন্তু ভেনেজুয়েলা কি সত্যিই যুক্তরাষ্ট্রের হামলা বা আগ্রাসন ঠেকাতে প্রস্তুত? তাদের সামরিক সক্ষমতাই বা কতটুকু? আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরো—দুজনের সিদ্ধান্তের পেছনে কী ধরনের কৌশল বা হিসাব-নিকাশ কাজ করছে? এ নিয়ে ভেবে ভেবে দিন পার করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
গত কয়েক সপ্তাহ কী ঘটেছে
ওয়াশিংটন ও কারাকাসের মধ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসন ক্যারিবীয় সাগরে একের পর এক নৌযানে হামলা শুরু করলে এমন উত্তেজনা শুরু হয়। খুব সম্প্রতি প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলেও হামলা হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, যুক্তরাষ্ট্র অভিমুখী এসব নৌযানকে পাচারকারীরা মাদক পাচারের কাজে ব্যবহার করছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি সপ্তাহে ২০তম হামলাটি হয়েছে। সর্বশেষ হামলায় চারজনসহ এসব হামলায় সব মিলিয়ে প্রায় ৮০ জন নিহত হয়েছেন। বোমা হামলার শিকার নৌযানগুলোতে সত্যিই মাদক বা মাদক কারবারিরা ছিল কি না কিংবা নৌযানগুলো যুক্তরাষ্ট্রের দিকে যাচ্ছিল কি না, তা নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেনি।
এ ছাড়া মার্কিন কর্মকর্তারা তাঁদের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে কোনো ধরনের আইনি যুক্তি উপস্থাপন করেননি। বিশেষজ্ঞদের অনেকে একে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছেন।
মূলত ওয়াশিংটনের অভিযোগ হলো, মাদুরো মাদকচক্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মাদক পাচার করছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ দেয়নি।
এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় এবং লাতিন আমেরিকার পানিসীমায় ‘ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড’ নামের বিমানবাহী রণতরি পাঠিয়েছে। বিশ্বের অন্যতম অত্যাধুনিক এবং সবচেয়ে বড় বিমানবাহী এ রণতরিকে ঘিরে একটি শক্তিশালী নৌবহর গড়ে তোলা হয়েছে।
বিমানবাহী রণতরি হলো সমুদ্রে ভাসমান বিমানঘাঁটি। সেখান থেকে যুদ্ধজাহাজ উড়তে পারে, আবার সেখানেই অবতরণ করতে পারে, জ্বালানি ভরতে পারে এবং গোলাবারুদ সংগ্রহ করতে পারে।
ফোর্ড হলো পারমাণবিক শক্তিচালিত রণতরি। এটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ। এতে ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী অস্ত্র এবং সহায়ক জাহাজ থাকে। যেকোনো সময় প্রয়োজন হলে মোতায়েনের জন্য ৪ হাজার সেনাসদস্য এবং বেশ কিছু যুদ্ধবিমান প্রস্তুত থাকে।
ওই অঞ্চলে ওয়াশিংটন সামরিক উপস্থিতি জোরদার করার বিষয়ে বিশ্লেষকেরা বলছেন, শুরুতে তারা যে লক্ষ্যের কথা বলেছিল, তা এখন আরও বিস্তৃত হয়েছে। মোতায়েন করা সেনাদের সক্ষমতার সঙ্গে লক্ষ্যগুলো পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ হচ্ছে না।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা মার্ক কানসিয়ান বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এ–সংক্রান্ত একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘(ট্রাম্প) প্রশাসন বলেছিল যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ মাদক পাচার বন্ধ করা এবং মাদকচক্রকে দুর্বল করার উদ্দেশে তারা সেনা মোতায়েন করেছে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্যগুলো মাদুরো সরকারের কর্মকাণ্ডবিরোধী লক্ষ্য পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।’
ওয়াশিংটন ও কারাকাসের মধ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্তেজনা বেড়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন ক্যারিবীয় সাগরে একের পর এক নৌযানে হামলা শুরু করলে এমন উত্তেজনা শুরু হয়। খুব সম্প্রতি প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলেও হামলা হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, যুক্তরাষ্ট্র অভিমুখী এ নৌযানগুলোকে মাদক পাচারকারীরা মাদক পাচারের কাজে ব্যবহার করছে।
মার্ক কানসিয়ানের মতে, বিমানবাহী রণতরি ফোর্ড এই অভিযানের জন্য পুরোপুরি উপযোগী না–ও হতে পারে। মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনার জন্য ফোর্ড খুব একটা উপযোগী নয়…এটি সমুদ্রপথ বা স্থলপথে শত্রুপক্ষকে আক্রমণ করার জন্য বেশি উপযোগী।
কানসিয়ান আরও বলেন, অনির্দিষ্টকাল ধরে ফোর্ডকে মোতায়েন রাখা সম্ভব নয়। এটি একটি শক্তিশালী সামরিক সম্পদ হওয়ায় পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে এর উপস্থিতির চাহিদা রয়েছে। একসময় না একসময় এটিকে দেশে ফিরে যেতে হবে। এটি ব্যবহার করা হবে, নাকি সরিয়ে নেওয়া হবে, সেটি সাউদার্ন কমান্ডকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মার্কিন সামরিক বাহিনীর সাউদার্ন কমান্ড ক্যারিবীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা সহযোগিতা দেয় ও অভিযান পরিচালনা করে থাকে।
ভেনেজুয়েলা কি হামলার জন্য প্রস্তুত
মঙ্গলবার ভেনেজুয়েলার সরকার বলেছে, তারা যেকোনো ধরনের সম্ভাব্য মার্কিন পদক্ষেপ মোকাবিলায় সেনা ও সাধারণ মানুষদের প্রস্তুত হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করছে।
ভেনেজুয়েলার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভ্লাদিমির পাদ্রিনো লোপেজ তাঁদের ‘ইনডিপেনডেন্স প্ল্যান ২০০’-এর একটি ‘উচ্চতর ধাপ’ চালু করার ঘোষণা দিয়েছেন। গত সেপ্টেম্বরে ক্যারিবীয় অঞ্চলে মার্কিন সেনাদের উপস্থিতির বিরুদ্ধে নিজেদের প্রতিরক্ষাশক্তি জোরদার করতে এ পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল ভেনেজুয়েলা।
পাদ্রিনো বলেন, এই মহড়ার জন্য প্রায় ২ লাখ সেনাকে দেশের সব জায়গায় মোতায়েন করা হয়েছে। এই মহড়া গত মঙ্গলবার শুরু হয়ে বুধবার শেষ হওয়ার পরিকল্পনা ছিল।
পাদ্রিনো লোপেজ জোর দিয়ে আরও বলেন, দেশের সামরিক বাহিনী ঐক্যবদ্ধ। তিনি বলেন, ‘৯০ শতাংশের বেশি মানুষ ভেনেজুয়েলাবিরোধী যেকোনো ধরনের আগ্রাসনকে প্রত্যাখ্যান করে। আর বিরোধী গোষ্ঠীকে ‘সংখ্যালঘু, বিদ্রোহী এবং ফ্যাসিস্ট’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি দাবি করেন, তাঁরা জাতীয় রাজনৈতিক মঞ্চে আর নেই।
পাদ্রিনো সেনা মোতায়েনকে ‘সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের’ বিরুদ্ধে একটি বৃহত্তর পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, ভেনেজুয়েলা এখনো স্বাধীনতা, মুক্তি ও সার্বভৌমত্বের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভেনেজুয়েলার সামরিক বাহিনী রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শ্যাভেজপন্থার সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। এ শ্যাভেজপন্থাই ২০ বছরের বেশি সময় ধরে ভেনেজুয়েলা রাষ্ট্রকে আকার দিয়েছে।
প্রয়াত নেতা হুগো শ্যাভেজের নীতিমালার ওপর ভিত্তি করে সামরিক নীতিগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে। এ নীতিমালায় সামরিক বাহিনীর সদস্যদের দেশপ্রেমিক, জনমুখী এবং সাম্রাজ্যবাদবিরোধী হতে বলা হয়েছে। শ্যাভেজের মৃত্যুর পর ২০১৩ সালে মাদুরো ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হন।
ওরিনোকো রিসার্চের প্রতিষ্ঠাতা ও ভেনেজুয়েলার গণমাধ্যম সংস্থা গুয়াচামায়ার প্রধান সম্পাদক এলিয়াস ফেরের আল-জাজিরাকে বলেন, ‘শুধু হুমকির কারণে ভেনেজুয়েলার সরকার বা সামরিক বাহিনী বিভক্ত হবে বলে আমি মনে করি না।’ ফেরের আরও বলেন, হুমকির মুখে থেকেও তারা যেভাবে চিন্তা করে, তার ভিত্তিতে তারা সব সময় ঐক্যবদ্ধ থেকেছে এবং নিজেদের অবস্থান আরও শক্ত করেছে।’
ভেনেজুয়েলার বর্তমান সামরিক সক্ষমতা কেমন
গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের ২০২৫ সালে করা সামরিক শক্তির তালিকা অনুযায়ী, সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে বিশ্বে ১৬০টি দেশের মধ্যে ভেনেজুয়েলার অবস্থান ৫০তম। তালিকা অনুযায়ী, লাতিন আমেরিকা অঞ্চলে ভেনেজুয়েলার অবস্থান সপ্তম। দেশটি ব্রাজিল, মেক্সিকো এবং আর্জেন্টিনার মতো আঞ্চলিক শক্তির তুলনায় পিছিয়ে আছে এবং কলম্বিয়া, চিলি ও পেরুর সমপর্যায়ে রয়েছে।
সিএসআইএসের চলতি সপ্তাহের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভেনেজুয়েলার বিমানবাহিনী ছোট এবং আংশিক সক্রিয়। বাহিনীতে ৪৯টি উড়োজাহাজ থাকলেও এর মধ্যে মাত্র ৩০টি চালানোর উপযোগী। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে যন্ত্রাংশের অভাবে এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর মধ্যে মাত্র তিনটি এখনো সক্রিয় আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী–সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট মিলিটারি ডট কম-এর তথ্য বলছে, রাশিয়ার তৈরি অস্ত্র ব্যবস্থায় ভেনেজুয়েলা শতকোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র ও যুদ্ধবিমান। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজ ও যুদ্ধবিমানকে মোকাবিলার জন্য এ বিনিয়োগ করা হয়েছে।
ভেনেজুয়েলার কাছে কমপক্ষে ২১টি সচল এসইউ-৩০ যুদ্ধবিমান রয়েছে। এটি ১৯৮০-এর দশকে তৈরি রুশ সামরিক বিমান। এসইউ-৩০ যুদ্ধবিমানগুলো কেএইচ-৩১এ ধরনের সুপারসনিক জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে পারে, যা ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে থাকা যুদ্ধজাহাজগুলোর জন্য উল্লেখজনক হুমকি।
সিএসআইএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংঘর্ষ শুরু হলে ভেনেজুয়েলার বিমানঘাঁটি ও যুদ্ধবিমানগুলোই সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নিশানা হবে। যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ওই অঞ্চলে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে, যা ভেনেজুয়েলার যুদ্ধবিমান ঠেকানো এবং তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে মোকাবিলা করার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে।
তবে স্থলভাগের পরিস্থিতি ভিন্ন। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, উপকূলের কাছে অবস্থানরত সীমিত সংখ্যক মার্কিন সেনার তুলনায় ভেনেজুয়েলার স্থলসেনারা সংখ্যায় অনেক বেশি এবং তাদের অস্ত্রশস্ত্রও বেশি।
গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের তথ্য অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলায় ৩ কোটি ১০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে সামরিক বাহিনীতে সক্রিয় সদস্যের সংখ্যা ৩ লাখ ৩৭ হাজার। এর মধ্যে সক্রিয় সেনার সংখ্যা ১ লাখ ৯ হাজার, আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যসংখ্যা ২ লাখ ২০ হাজার এবং রিজার্ভ সেনার (আপত্কালীন সময়ের জন্য মজুত সেনা) সংখ্যা ৮ হাজার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বছরের পর বছর সীমিত যুদ্ধ প্রশিক্ষণ এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কারণে ভেনেজুয়েলার সামরিক বাহিনী অনেক দুর্বল হয়ে গেছে।
এদিকে সমুদ্রে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর সঙ্গে ভেনেজুয়েলার নৌবাহিনীর কোনো তুলনাই হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে অপ্রতিরোধ্য।
সামগ্রিকভাবে বিশ্লেষকেরা এ বিষয়ে একমত, সামরিক দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার চেয়ে অনেক শক্তিশালী।
ওরিনোকো রিসার্চ-এর প্রতিষ্ঠাতা এলিয়াস ফেরের আল-জাজিরাকে বলেন, প্রচলিত যুদ্ধাস্ত্রের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের যে সামরিক সক্ষমতা আছে, তার সঙ্গে কাউকেই মেলানো যাবে না।
ফেরের আরও বলেন, ‘ভেনেজুয়েলার ক্ষেত্রে আমাদের যা দেখতে হবে, তা হলো স্থানীয় সামরিক বাহিনীর প্রতিরোধ করার বা দেশকে কারও নিয়ন্ত্রণে যেতে না দেওয়ার সক্ষমতা কতটুকু। তারা লড়াইকে এত ব্যয়বহুল ও কঠিন করে তুলতে পারে যে আক্রমণকারীদের কাছে হামলা চালানোকে আর লাভজনক মনে হবে না। অসম যুদ্ধে এভাবেই জেতা যায়।’
ওয়াশিংটন কি কারাকাসে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে?
ট্রাম্প ক্যারিবীয় অঞ্চলে সেনা মোতায়েনকে যুক্তরাষ্ট্রে মাদক প্রবাহ কমানোর ক্ষেত্রে জরুরি বলে যুক্তি দেখিয়েছেন। তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, এটি মূলত নিকোলাস মাদুরোর ওপর চাপ বৃদ্ধির চেষ্টা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তিনি ভেনেজুয়েলায় আগ্রাসন চালানোর পরিকল্পনা করছেন না।
ভেনেজুয়েলার রাজনৈতিক বিশ্লেষক কার্লোস পিনা মনে করেন, ওয়াশিংটন যে কৌশলটিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, সেটি সামরিক নয়, রাজনৈতিক। পিনা বলেন, ‘আমি এখনো মনে করি যুক্তরাষ্ট্র কোনো সশস্ত্র হামলা না চালিয়ে যথেষ্ট চাপ প্রয়োগ করাকেই অগ্রাধিকার দেবে, যেন নিকোলাস মাদুরো পদত্যাগ করে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। আমার মতে, এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের মূল চাওয়াটা এটাই।’
পিনার বলেন, মাদুরো এটা জানেন এবং তাই যেকোনো সম্ভাব্য হস্তক্ষেপের খরচ বৃদ্ধির চেষ্টা করছেন। তবে পিনা সতর্ক করেছেন, সেনা মোতায়েনের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার নিজেই ওয়াশিংটনে রাজনৈতিক চাপে পড়েছে।
ট্রাম্প বলেন, ‘ক্যারিবীয় অঞ্চলে এত সামরিক সরঞ্জাম পাঠানোর পরে যদি ট্রাম্প কিছুই না করেন, যদি তিনি পিছু হটেন এবং পরিস্থিতিকে আগের মতোই রেখে দেন—তাহলে সেটিকে তাঁর জন্য একটি রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পরাজয় হিসেবে দেখা হবে।’
এই কারণে পিনার ধারণা, যুক্তরাষ্ট্র পিছু না হটে বরং উত্তেজনা বৃদ্ধি করে যাবে।
পিনার মতে, ‘ট্রাম্প সম্ভবত সে পরাজয় এড়াতে কোনো পদক্ষেপ নেবেন। তিনি হয়তো সামরিক চাপ বৃদ্ধি করে যাবেন যেন রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটানো যায় এবং ক্ষমতার হস্তান্তর শুরু করা যায়। দিন যেতেই তিনি ক্যারিবীয় অঞ্চলে আরও বেশি শক্তি, যন্ত্রপাতি, জাহাজ, বিমান এবং সেনা মোতায়েন করতে থাকবেন।

