বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ড. জোবায়ের আলম

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১১, ২০২৫, ০১:৩৩ পিএম

আলোকিত যাত্রা, স্বপ্ন থেকে সাফল্যের পথে অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম

ড. জোবায়ের আলম

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১১, ২০২৫, ০১:৩৩ পিএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

হিমালয়ের পাদদেশঘেঁষা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের শান্ত-নিবিড় শহর নীলফামারীতে জন্ম নেওয়া এক কিশোর মো. জোবায়ের আলম স্বপ্ন দেখেছিলেন একটু ভিন্নভাবে। যেখানে তার সমসাময়িকরা ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার দিকে ঝুঁকছিল যা বাংলাদেশের সমাজে খুবই প্রচলিত সেখানে জোবায়েরের লক্ষ্য ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হওয়া। 

আজ, ৪৩ বছর বয়সে অধ্যাপক ড. মো. জোবায়ের আলম প্রমাণ করে দিয়েছেন অটল চেষ্টা ও কঠোর পরিশ্রমের কাছে কোনো স্বপ্নই অসম্ভব নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক, সাবেক চেয়ারম্যান, খ্যাতিমান গবেষক এবং দ্য বাংলাদেশ টুডে-এর সম্পাদক-প্রকাশক হিসেবে তার পথচলা ব্যক্তি-সাফল্য কীভাবে জাতীয় অগ্রগতিকে এগিয়ে নিতে পারে তার উজ্জ্বল উদাহরণ।

তার শিক্ষিকা মায়ের প্রেরণায় জোবায়েরের শিক্ষাজীবনের ভিত্তি তৈরি হয় খুব ছোটবেলায়। আমার সাফল্যের বেশির ভাগ কৃতিত্ব আমার মায়ের, তিনি বলেন, মানসিক আলোকিতকরণের মাধ্যম হিসেবে শিক্ষার গুরুত্ব তিনিই প্রথম তাকে শিখিয়েছিলেন। এই শিক্ষা তার মূল্যবোধে সততা, দায়িত্ববোধ ও লক্ষ্যনিষ্ঠার ভিত্তি তৈরি করে।

ছাত্রজীবনে জোবায়ের ছিলেন একজন মেধাবী শিক্ষার্থীদের সর্বদা প্রথম সারিতে। নীলফামারীতে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে রংপুর পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজে তিনি উৎকর্ষতার ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। শিক্ষার পাশাপাশি তিনি গড়ে তোলেন কঠোর পরিশ্রমের অভ্যাস এবং সময়ের সঠিক ব্যবহার। তিনি বলেন, “আমি কখনোই তুচ্ছ বিষয়ে সময় নষ্ট করিনি। সম্মান বজায় রেখে বড় কিছু করার ইচ্ছা সবসময় ছিল।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির মাধ্যমে তার শৈশবের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করে। ২০০৩ সালে ফিশারিজে স্নাতক ও ২০০৫ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর তার দৃষ্টি সীমাবদ্ধ থাকেনি দেশের ভেতরেই। আন্তর্জাতিক জ্ঞান অর্জনের লক্ষ্যে তিনি কানাডার ভ্যাঙ্কুভার আইল্যান্ড ইউনিভার্সিটিতে অ্যাকুয়াকালচার টেকনোলজিতে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা অর্জন করেন, যেখানে তিনি উন্নত সামুদ্রিক কৃষি ও টেকসই চাষ ব্যবস্থাপনা শিখেন যা পরবর্তীতে বাংলাদেশের ব্লু ইকোনমিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ছিলেন কেবল একজন শিক্ষার্থী নন। বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর-এর মিলিটারি সায়েন্স ইউনিটে সিনিয়র ক্যাডেট হিসেবে দায়িত্ব পালন ছাড়াও তিনি মঞ্চনাটকে অভিনয় করেছেন, অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেছেন, ফজলুল হক হলের ‘সৃষ্টি’ সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং ফুটবল-ক্রিকেটে সক্রিয় ছিলেন। “আমি অনেক কাজে যুক্ত ছিলাম,” তিনি স্মরণ করেন সাফল্যের প্রতি তার বহুমাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন এটি।

২০১২ সালে নিউইয়র্কের কেলার গ্র্যাজুয়েট স্কুল অফ ম্যানেজমেন্ট থেকে এমবিএ সম্পন্ন করার সময় তিনি নির্মাণ করেন একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ঋধঃবভঁষষু ণড়ঁৎং, যা বিভিন্ন স্থানে প্রদর্শিত হয়। এতে বৈজ্ঞানিক যুক্তিবোধ ও সৃজনশীলতার অনন্য সমন্বয় দেখা যায়।

পেশাগত জীবনে তার অগ্রযাত্রা শান্ত ও ধারাবাহিক। ২০০৬ সালে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে শুরু করে ২০০৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগে লেকচারার হন। ২০১২ সালে সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগে যোগ দিয়ে তিনি সামুদ্রিক গবেষণার অগ্রদূত হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ২০১৩-২০১৮ সালে সহকারী অধ্যাপক, ২০১৮-২০২১ সালে সহযোগী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান এবং ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে অধ্যাপক হিসেবে তার পদোন্নতি আসে গবেষণা, শিক্ষা ও নেতৃত্বে  

চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি নতুন পাঠক্রম প্রবর্তন, শিক্ষার্থী উন্নয়ন ও গবেষণা পরিকাঠামোর আধুনিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। জীববিজ্ঞান, ভূতত্ত্ব ও ভৌত সমুদ্রবিজ্ঞানসহ সমুদ্র বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় তার ২৩ টির ও বেশি পিয়ার-রিভিউড গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। সেন্ট মার্টিনে সী-উইড চাষ নিয়ে তার পথপ্রদর্শক গবেষণা বাংলাদেশের সম্ভাব্য সী-উইড শিল্পের ভিত্তি স্থাপন করেছে। এছাড়া খাঁচা মাছচাষ, উপকূলীয় পানি মান, সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য প্রভৃতি বিষয়ে তার কাজ টেকসই সামুদ্রিক অর্থনীতির জন্য দিকনির্দেশক।

২০ জনেরও বেশি মাস্টার্স শিক্ষার্থী তার তত্ত্বাবধানে গবেষণা করেছেন, যেখানে জেলে সম্প্রদায়ের জীবনমান, টেকসই পর্যটন, সামুদ্রিক সম্পদ বাজারজাতকরণ ইত্যাদি বাস্তবসম্মত সমস্যার সমাধান উঠে এসেছে, যা দেশের ব্লু ইকোনমি নীতিনির্ধারণে প্রভাব ফেলেছে।

সাফল্যের পরও তিনি বিনয়ী। তিনি বলেন, সম্পদ আমাকে আকর্ষণ করে না সম্মান করে। আমি নিজের জন্য কখনো হাজার টাকা খরচ করিনি। মানবিক কর্মকাণ্ডে তার গভীর সম্পৃক্ততা রয়েছে অসহায় শিক্ষার্থীদের সহায়তা ও সামাজিক উদ্যোগে তিনি নিয়মিত যুক্ত।

তার দিন শুরু হয় সকাল ৮টায় এবং শেষ রাতে ১২ টায় ১৬ ঘণ্টার কঠোর পরিশ্রমে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব ও দ্য বাংলাদেশ টুডে-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক হিসাবে কাজ করেন। ‘যাত্রাপথে পড়াশোনা করি,’ তিনি বলেন প্রতি মুহূর্তকে কাজে লাগানোর উদাহরণ এটি। গণমাধ্যমের মাধ্যমে তিনি বিজ্ঞান ও সমাজের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়ে তুলেছেন।

সাফল্য সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার নিজের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস আছে। চেষ্টা করলে সফল হবই। তবে সবই আল্লাহর রহমত। এমফিল সমমানের সনদ, দুটি মাস্টার্স ডিগ্রি এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ মাসের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত কোর্স তার জ্ঞানযাত্রার উল্লেখযোগ্য ধাপ।

বাংলাদেশের তরুণদের সম্পর্কে তিনি আশাবাদী। তাদের দেশপ্রেম, নিষ্ঠা ও জ্ঞান দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে বলে মনে করেন। শিক্ষিত তরুণদের রাজনীতিতে এসে নেতৃত্ব দেওয়া উচিত, তিনি বলেন একটি আলোকিত সমাজে শিক্ষকের ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব তুলে ধরে।

নীলফামারী থেকে জাতীয় অগ্রযাত্রায় অধ্যাপক ড. মো. জোবায়ের আলম দেখিয়েছেন সত্যিকারের সাফল্য হলো অন্যের জন্য পথ তৈরি করা। ব্লু ইকোনমিতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা বাস্তবায়নে তার মতো ব্যক্তিত্ব যিনি বিজ্ঞান, নৈতিকতা ও নিষ্ঠাকে এক সুতোয় গেঁথে নিয়েছেন স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেবেন। প্রমাণ করবেন ‌‌‌‘মর্যাদা নিয়ে মহত্ব’ সমাজকে সত্যি সত্যিই বদলে দিতে পারে।

Link copied!