কঠিন সময়ে নেতাকর্মীদের একা রেখে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক প্রভাবশালী মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, পৌর মেয়র আবুল খায়ের ও তার শ্যালক মহব্বত আলী পালিয়ে গেলেন। সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন তাজুল ইসলামের শ্যালকের শত অপরাধের হাতিয়ার ফারুক ও শামিম চেয়ারম্যানকে। এমতাবস্থায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
তাদের পালিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে দলীয় কার্যালয়, নেতাকর্মীদের বাসা-বাড়ি ও অফিসে ভাঙচুর, লুটপাট করে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় উৎসক জনতা। লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর চলে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত। এতে কেউ হতাহত না হলেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয় নেতাকর্মীদের পরিবার। ক্ষোভের কারণ হিসেবে জানা যায়, টানা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা দলটির তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীরা ব্যস্ত ছিল নিজেদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল, ভাগ বাটোরা নিয়ে হয়ে পড়েছিল জনবিচ্ছিন্ন। তাজুল ইসলামের শালক মহব্বত আলী, ফারুক ও শামীম চেয়ারম্যানকে নিয়ে একটি বাহিনী গড়ে তোলেন। তাজুল ইসলাম ও এই তিন নেতার আদেশ ছাড়া দলের নেতা কর্মীরা কথা বলতে পারতেন না। জামায়াত এবং বিএনপির কোনো পরিবারকেই রাস্তায় চলাচলেও নির্বিঘ্নে করতে দিতেন না। বিভিন্ন পরিবহন থেকে শুরু করে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাঁদাবাজি চলত তিন নেতার নির্দেশে। এসব অপকর্মে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে তাজুল ইসলামের পরিবার।
সর্বশেষ সোমবার ছাত্র-জনতার এক দফা আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়ে মাঠে নেমে আসে সাধারণ জনগণ। এতেই তারা নেতাকর্মীদের কোনো মেসেজ না দিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। তাজুল ইসলাম ও তার শ্যালক পালিয়ে যাওয়ার খবর শুনে নেতাকর্মীরা হতভম্ব হয়ে পড়ে। জনরোষে পড়ার আগেই পালিয়ে প্রাণে রক্ষা পায় সাধারণ নেতাকর্মীরা। তাদের পালিয়ে যাওয়ায় দলের মধ্যে হতশ্রী অবস্থা- এই সংকটে তা স্পষ্ট হয়েছে।
এদিকে পালিয়ে যাওয়া নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন পোস্ট দিয়ে দলের দুর্বলতা তুলে ধরেন এবং বিগত দিনের কর্মকাণ্ডের জন্য এলাকাবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন।
এ বিষয়ে লাকসাম দৌলতগঞ্জ বাজারের হাজি মোকছেদ আলী টাওয়ারের এক ব্যবসায়ী জানান, তাজুল ইসলাম ও তার সালোক মহব্বত আলী এতদিন মানুষের রক্ত চুষে খেয়েছে। মুখে বলেছে তারা ব্যবসায়ীদের কল্যাণ চায়, কিন্তু ভেতরে ভেতরে আমাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তাদের বাসার চাল, ডাল, কাপড়চোপড়, তরকারি সব আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ফ্রি নিয়ে গেছে। বহু ব্যবসায়ী তাদের কাছে লাখ লাখ টাকা পায়। আজ আল্লাহ তাদের বিচার করেছে।
লাকসাম উপজেলা জামায়াত নেতা শহীদুল্লাহ বলেন, আমরা স্বৈরাচারী হাসিনার পতনে আনন্দ মিছিল করছি। কিন্তু মিছিল নিয়ে চলে গেলে অপরিচিত কিছু মুখ মানুষের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করছে। লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে তাদের প্রতিষ্ঠানের মালামাল। জামায়েত ইসলাম শান্তির দল হিসেবেই কাল রাত থেকেই বিভিন্ন মন্দির এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পাহারায় আছে। তারপরও কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটতেছে আমরা দেখার সঙ্গে সাথেই তা প্রতিহত করছি।
এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকেই বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা তাজুল ইসলাম ও তাদের বাহিনী পালিয়ে যাওয়ার আনন্দে মিছিলে মিছিলে মুখরিত করে তোলে লাকসামের প্রধান প্রধান সড়ক। অবরুদ্ধ করে রেখেছে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। থেমে থেমে বিক্ষিপ্তভাবে ভাঙচুর করা হচ্ছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
আরবি/জেআই
আপনার মতামত লিখুন :