সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশের অনুমতিকে ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায়’ বলে আখ্যা দিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। সংগঠনটির একাংশ দাবি করেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি বিরূপ অবস্থান নিয়েছে এবং এই অনুমতিই তার প্রমাণ।
শনিবার (১৯ জুলাই) এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজা ও সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন শুভ বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আমাদের বিজয়ের স্মারক। যেখানে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল। অথচ আজ সেই স্থানে যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াতকে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হলো। এটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে কালিমা লেপনের শামিল।’
তারা বলেন, ‘২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কর্মকাণ্ড বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বীরশ্রেষ্ঠদের ভাস্কর্য, স্মৃতিস্তম্ভ ভাঙচুর হয়েছে, পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ উঠেছে। এমনকি মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞাও পরিবর্তনের চেষ্টা হয়েছে।’
ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা মনে করেন, ‘এসব কর্মকাণ্ড মূলত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও চেতনা মুছে ফেলার পরিকল্পনারই অংশ। তারা বলেন, “যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাও থাকবে। এই চেতনাকে মুছে ফেলার যেকোনো চেষ্টাই ব্যর্থ হবে। বাংলার জনগণ অতীতে যেমন রাজাকারদের প্রতিহত করেছে, ভবিষ্যতেও নব্য রাজাকারদের প্রতিহত করবে।’
তারা সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, জামায়াতকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি দেওয়ার দায় সরকার এড়াতে পারবে না। জনগণ এই সিদ্ধান্তের জবাব দেবে বলে দাবি করেন তারা।
এদিকে, সমাবেশ ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের জন্য নির্দিষ্ট গেট ও চেকপোস্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। মেডিকেল টিম, পানির ব্যবস্থা, ভলান্টিয়ার টিমসহ সমাবেশ পরিচালনায় একটি শক্তিশালী ব্যবস্থাপনা গঠন করা হয়েছে বলে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে যখন তীব্র বিতর্ক চলছে, সে সময়ে জামায়াতে ইসলামী ঢাকায় বিশাল সমাবেশ করতে যাচ্ছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এই সমাবেশে জামায়াত স্মরণকালের সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চাইছে।
সমাবেশে আসা বিপুল পরিমাণ লোকের গাড়ি পার্কিং, অজু-নামাজের ব্যবস্থা এবং টয়লেট স্থাপন, মেডিকেল বুথ স্থাপনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সব প্রস্তুতি শেষ করেছে জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটি।
জানা গেছে, এতদিন ঢাকার পুরানা পল্টন, বায়তুল মোকাররম, পল্টন ময়দানসহ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় অতীতে অসংখ্য রাজনৈতিক কর্মসূচি করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কখনোই এককভাবে বড় সমাবেশ করেনি দলটি।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের মধ্যদিয়ে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে গা-ঝাড়া দিয়ে ওঠেন দলটির কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ‘জাতীয় সমাবেশ’ করার মাধ্যমে নিজেদের সাংগঠনিক সক্ষমতা জানান দিতে চাইছে দলটি।
এই সমাবেশে ভিন্ন বা বিশেষ কিছু রয়েছে বলে জানান জামায়াতের নেতারা। আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এই সমাবেশে ১০ লাখের বেশি মানুষের অংশগ্রহণের প্রত্যাশা করছে দলটি। সমাবেশ থেকে ‘জাতীয় ঐক্য’ ও ‘কল্যাণ রাষ্ট্র’ গঠনের ডাক দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :